বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

চিকিৎসার নামে প্রতারণা: ওঝার বিচার চেয়ে নারীর সংবাদ সম্মেলন

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০৫:৫১ পিএম

শেয়ার করুন:

চিকিৎসার নামে প্রতারণা: ওঝার বিচার চেয়ে নারীর সংবাদ সম্মেলন

বরিশাল নগরীর কাউনিয়া প্রধান সড়ক সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা হেমায়েত মাস্টার ওরফে ওঝা হেমায়েত চিকিৎসাসেবার নামে মমতাজ বেগমের থেকে নগদ ২ লাখ টাকাসহ প্রায় ৬ লাখ টাকার মালামাল হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া মন্ত্র পড়ে আগুনে পুতুল পুড়িয়ে কুফরি করে আরও ১৫ লাখ টাকা দাবি করেছেন ওঝা হেমায়েত।

শনিবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (বিআরইউ) এমন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নগরীর কাশিপুর ইছাকাঠি এলাকার বাসিন্দা মমতাজ বেগম।


বিজ্ঞাপন


সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত দুই বছর আগে আমি লোক মারফত জানতে পারি, ডায়াবেটিস রোগ নির্মূল করতে পারেন এক ওঝা। তিনি নগরীর কাউনিয়া প্রধান সড়ক সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা হেমায়েত মাস্টার। ডায়াবেটিস রোগের পাশাপাশি তখন আমি পলিপাস ও পাইলস রোগে আক্রান্ত ছিলাম। এসব রোগের কথা বলার পর হেমায়েত ওঝা আমাকে বাইরের চিকিৎসা নিতে বারণ করেন। গত দুবছরে আমাকে চা, শরবত ও ডাবের পানি পান করিয়ে ওঝা তার নিজ বসতঘরে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।

পরে চিকিৎসাসেবা এমন হয়, সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে ওঝা হেমায়েতকে নগদ টাকা বা তার বাসায় মাছ-মাংস ও ফল দিলে আমার শরীর সুস্থ থাকে। নয়ত আমার দেহের মধ্যে জ্বালা-পোড়া করতেই থাকে। যে যন্ত্রণা কাউকে বোঝানো যায় না। গত দুবছরে দফায় দফায় নগদ ২ লাখ টাকাসহ প্রায় ৬ লাখ টাকার মাছ-মাংস ও ফলসহ বিভিন্ন মালামাল দিয়েছি ওঝা হেমায়েতের বসতঘরে। তারপরও আমি রোগ থেকে মুক্তি পাইনি।

তিনি আরও বলেন, চিকিৎসার নামে ঝাড়-ফুঁক দেওয়ার সময় প্রায়ই ওঝা হেমায়েত আমাকে বলত, নামাজ পড়ার দরকার নাই। তোমার শরীরের মধ্যে ১টা ভালো আর ২টা খারাপ জ্বীন দিয়ে দেই। তুমিও সকল রোগীর চিকিৎসা দিতে পারবে। আমার মতো তুমিও কুকুর বিড়ালের মধ্যে নিজের আত্মা প্রবেশ করে সব স্থানে আসা-যাওয়া করতে পারবে। সারাজীবন ঘরে বসে বসে খেতে পারবে। এরপর ২০২২ সালের ১৩ অক্টেবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওঝা হেমায়েত জরুরি ভিক্তিতে আমাকে তার বসতঘরে ডাকে। ওঝা হেমায়েত আমাকে সামনে রেখে তার নিজের তৈরি করা একটি পুতুলের শরীরে নানা মন্ত্র পড়ে লিখে এবং আমার সামনে সেই পুতুলটি পুড়িয়ে ফেলে। এরপর থেকে আমার শরীরের মধ্যে আরও বেশি জ্বালা-পোড়া যন্ত্রণা করে।

পরে ওঝা হেমায়েতকে আমি একদম সুস্থ করে দিতে বলি, নয়ত চিকিৎসার পেছনে নগদ টাকাসহ সব খরচ হিসেব করে ফেরত দিতে বলি। পরে ওঝা হেমায়েত চিরতরে সুস্থতার জন্য আমার কাছে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আর এ নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে আমিসহ আমার পরিবারের লোকজনের সমস্যা হবে বলে ওঝা হেমায়েত হুমকি দেয়। এমনকি টাকা দিতে আমি রাজি না হওয়ায় আমাকে কুফরি করে মানসিক রোগী বানানোর পর মেরে ফেলার চেষ্টা করেন।


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, এ অবস্থায় দিনে দিনে আমি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছি। আমাকে সামনে বসিয়ে পুতুল পোড়ানোর পর থেকেই আমার জীবনে এলোমেলো হয়ে গেছে। হেমায়েতের কুফরিতে আমিসহ আমার পরিবারের কেউ ক্ষতি হলে দায়ী হবে ওঝাসহ তার পরিবারের লোকজন। ওঝা হেমায়েত তার কুফরি থেকে যেন আমাকে মুক্ত করে দেয়। এবং আমার পরিবারের কাউকে যেন কুফরি দিয়ে ক্ষতি না করে। হেমায়েত ওঝা যেন আমার থেকে নেওয়া টাকাগুলো ফেরত দেয়। কারণ তার ঝাড়-ফুকে বিন্দু মাত্র উপকার হয়নি। উল্টো শারীরিক ও মানসিকসহ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ওঝা হেমায়েত বলেন, এই মমতাজ বেগম তার দরবারে মানত বাবদ কিছু টাকা দিয়েছেন। আর যে সব কথা বলে তা সঠিক নয়।

এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, এমন অভিযোগ এখনও পাইনি। যদি কেউ অভিযোগ করে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর