দারিদ্র্যপীড়িত জেলা কুড়িগ্রামে চালু হয়েছে এক টাকার রেস্টুরেন্ট। শহরের রেস্টুরেন্টে এক টাকায় খাবার পেয়ে খুশি হতদরিদ্র মানুষেরা। ঢাকা, কক্সবাজারের পর কুড়িগ্রামে চালু হলো এক টাকার এই রেস্টুরেন্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুরে সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর সুভারকুটি গ্রামে রেস্টুরেন্টটি চালু করে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।
উদ্বোধন দিনে রেস্টুরেন্টে প্রায় ৫শ দুস্থ ও সুবিধাবঞ্চিতকে একবেলা খাওয়ানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এক টাকার এই রেস্টুরেন্টে পাওয়া যাচ্ছে বিরিয়ানি, পোলাও, ভাত, মাছ, মাংস, ডিমসহ বারো পদের খাবার। নিজেদের পছন্দমতো এক টাকায় খাবার খেয়েছেন আগতরা। একসঙ্গে ৫০ জন বসে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে সেখানে।

মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসে তৃপ্তি সহকারে পছন্দের খাবার খেতে পেরে খুশি সুবিধাভোগীরা। দ্রব্যমূল্যের এমন ঊর্ধ্বগতির বাজারে সমাজে এমন অনেক অসহায়, দরিদ্র এবং গৃহহীন মানুষ তিন বেলা খাওয়া কষ্টকর। সেখানে শহরের রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাওয়া বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু এক টাকার বিনিময়ে পেট পুড়ে খেতে পেরে খুশি প্রত্যন্ত অঞ্চলের হতদিরদ্র এসব মানুষ।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের আধুনিক ঘরোয়ানা এই রেস্টুরেন্টটি নিশ্চিত করেছে খাবার খাওয়ার এক মনোরম এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ। যেখানে রয়েছে পেশাদার বাবুর্চি, রেস্টুরেন্ট স্টাফ, মেন্যু কার্ড এবং বাহারি সব পুষ্টিকর খাবার।
বিজ্ঞাপন
রেস্টুরেন্টটিতে ৫০ জন মানুষ একসঙ্গে বসে খেতে পারবেন। আর একদিনে ৫০০ মানুষের খাবার আয়োজন করা হয়েছে। বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চলবে। তবে এই কাজে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে প্রতিদিন রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চালানো সম্ভব।

সুবিধাভোগী ছকিনা বেগম বলেন, এক টাকার রেস্টুরেন্টে নাতি-নাতনি, বিয়াইন, বোনসহ আসছি। আমরা গ্রামের মানুষ, কোনোদিন চিন্তাও করতে পারিনি যে রেস্টুরেন্টে বসে খাবার খাবো। আজকে এক টাকায় পেট ভরে খেতে পেরে সবাই খুশি।
সুবিধাভোগী ৭০ ঊর্ধ্ব বৃদ্ধা কাশেম আলী বলেন, বাবা আমার অনেক বয়স হয়েছে। কোনোদিন টাকার অভাবে বড় কোনো হোটেলে খেতে পারিনি। পাঁচ টাকা দিয়ে চা-বিস্কুট খেয়েছি। এখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় সেটাও হয় না। এই রেস্টুরেন্টে বউসহ এসে এক টাকায় এমন দামী খাবার খেতে পারবো ভাবতেই পারিনি। এক টাকায় মন মতো খেতে পেরে খুব খুশি হয়েছি বাবা।

সুবিধাভোগীদের মধ্যে বুলবুলি আক্তার নামে একজন বলেন, বাচ্চা নিয়ে এসেছি এক টাকার হোটেলে। ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, সালাদ, ফল, মিষ্টি খেলাম। শহরের হোটেলে গেলে কম করে হলেও চার থেকে ৫০০ টাকা খরচ হতো। কিন্তু এখানে এক টাকায় খেতে পেরে স্বপ্নই মনে হচ্ছে।
স্বেচ্ছাসেবক হৃদয় বলেন, আজ জীবনে প্রথমবারের মতো রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করছি। সেটিও বিনা পয়সায়। এতে করে উপলব্ধি করতে পারবো যারা নিয়মিত হোটেলে ওয়েটার, বাবুর্চিসহ কর্মচারীদের ঘাম ঝরানো শ্রম। সত্যি আমি বেশ গর্বিত প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের জন্য এমন কষ্ট করতে পেরে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ প্রধান সালমান খান ইয়াসিন বলেন, বর্তমানে সপ্তাহে দুই দিন এই রেস্টুরেন্টের কার্যক্রম চলবে। তবে এই কাজে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে প্রতিদিন করার পরিকল্পনা আছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০০ মানুষ এই রেস্টুরেন্ট থেকে সেবা দেওয়া সম্ভব।
প্রতিনিধি/এইচই

