পাখির কিচির মিচির শুনতে কার না ভালো লাগে। তবে সেটা যদি হয় নানা প্রজাতির বাহারি রঙের বিদেশি পাখি। তাহলে তো কোনো কথাই নেই।
নওগাঁ শহরের এ টিম মাঠ সংলগ্ন উকিলপাড়া এলাকার জিল্লুর রহমান চেীধুরী নামে এক প্রবাস ফেরত ব্যক্তি শখের বশে ২০ জোড়া পাখি কিনে পালন শুরু করেন। তবে শখ থেকে তিনি এখন বাণিজ্যিকভাবে পাখি পালন ও বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, জিল্লুর রহমান চৌধুরী দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। প্রবাস থেকে ফিরে ২০০৫ সালে শখের বসে কয়েক ২০ জোড়া পাখি পালন শুরু করেন তিনি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে তিনি পাখি বাড়াতে শুরু করেন। এখন তার খামারে বিভিন্ন দেশের ৬ প্রজাতির ৫০ রকমের ২৫০ জোড়া বিদেশি পাখি রয়েছে। তার এই খামারে কাজ করে দুই নারীও তাদের সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতাও ফিরেছে।
সরেজমিনে জিল্লুর রহমানের খামার ঘুরে দেখা যায়, তার বাড়ির ছাদে পরিত্যাক্ত জায়গায় গড়ে তুলেছেন পাখির খামার। সেই খামারে গ্রিলের সঙ্গে আলাদা আলাদা খাঁচার ঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আবার দিয়ে রাখা হয়েছে হাঁড়িও। তার মধ্যে বিদেশি হরেক রকমের রঙিন পাখি। খাঁচায় রাখা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ককাটেল, দক্ষিণ আফ্রিকা লাভ বার্ড, ইন্দোনেশিয়ার জাভা, জাপানের জেপি, হল্যান্ডের রিংনেক, অষ্ট্রলিয়ার গোল্ডেন ফিঞ্চ। এছাড়াও এসব পাখির সামনে ছোট ছোট মাটির পেয়ালায় করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন রকমের খাবার। এসব পাখির কিচিরমিচির শব্দ রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষের নজর কাড়ে। প্রতিদিন তার খামারে পাখি দেখতে ও কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন লোকজন।
বিজ্ঞাপন
মেয়ের প্রাইভেট শেষ করে জিল্লুর রহমানের বাড়ির নিচ দিয়ে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন ইয়াসমিন আক্তার কলি। এসময় পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে পাখি দেখতে আসলে তিনি বলেন, এই বাড়ির নিচ দিয়ে প্রায় প্রতিদিন চলাচল করি। প্রায় পাখির শব্দ শুনতে পাই। মূলত এখানে এসেছি পাখি দেখতে। আজকাল তো এক সঙ্গে এত পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায় না। এখানে এসে অনেক ভালো লাগলো। শুনলাম এখান থেকে অনেকে পাখি কিনে নিয়ে যায়। চিন্তা করছি, আমিও পাখি পালনের জন্য কিছু পাখি কিনে নিয়ে যাবো।
তার মেয়ে সপ্তম শ্রেণি শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান বলেন, পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে পাখি দেখতে আসলাম আম্মুকে নিয়ে। এখানে এসে দেখি অনেক রকমের পাখি আছে। আগে কখনো একসঙ্গে এত পাখি দেখিনি। এসব পাখির কিচিরমিচির শব্দ আমার অনেক ভালো লাগে। আম্মুকে বলেছি এখান থেকে কিছু পাখি কিনে নিয়ে গিয়ে আমাদের বাড়ির বেলকনিতে পালন করব।
এ বিষয়ে কথা হয় জিল্লুর রহমান চেীধুরী সঙ্গে। তিনি ঢাকা মেইলের এই প্রতিবেদকে জানান, ২০০৫ সালে শখের বসে ২০ জোড়া বাজরিগার পাখি পালন শুরু করি। এরপর ধীরে ধীরে পাখির সংখ্যা বাড়াতে থাকি। এক সময় চিন্তা করলাম প্রাণিসম্পদের আওতায় গৃহপালিত পশু গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেড়া পালনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। কিন্তু পাখি পালনে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের দেশে পাখির বাণিজ্যিক খামার নেই বললেই চলে। সেই কথা চিন্তা করে আজকে বাণিজ্যিকভাবে পাখির খামার গড়ে তুলেছি। এবং বলতে পারেন কিছুটা সফল হয়েছে। প্রতিদিন খামারে পাখি দেখতে ও কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসছেন লোকজন। কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তার খামারে বিদেশি ৬ প্রজাতির ৫০ রকমের ২৫০ জোড়া পাখি আছে। এসব পাখির মধ্যে লাভ বার্ড ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এছাড়াও ককাটেল ৫ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত, জেপি ১০ হাজার টাকা জোড়া, রিংনেক ৫০ হাজার টাকা জোড়া, গ্রে প্যারট দেড় লাখ টাকা জোড়া বিক্রি করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন পাখির দাম বিভিন্ন রকম। পাখি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছি।
জিল্লুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, আমাদের দেশে অনেকদিন ধরে পাখি কেনাবেচা হয়ে আসছে। মার্কেটও গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করে লালন পালন করে সেখান থেকে আবার বাচ্চা তৈরি করা হয়। কিছু কিছু পাখি ২ থেকে ৪ বার বাচ্চা দেয়। এই বাচ্চাগুলো বিক্রি হয়ে থাকে। পাখি লালন-পালন অনেক সহজ। এদের রোগবালাইও কম হয়। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও অনেক বেশি। এসব পাখির খাবারগুলো সাধারণত দেশের বাইরে থেকে আসে। এই খাবারগুলো সংগ্রহ করে খেতে দেওয়া হয়। বিভিন্ন রকম পাখির খাবার বিভিন্ন রকম। ধরতে গেলে খাবারের খরচও কম। এসব পাখির বাজারে মূল্য বেশি।
আমরা যে পাখিগুলো পালন করছি, এসব পাখি জন্মই খাঁচায়। এ পাখিগুলো সহজেই যে কেউ, যেকোনো জায়গায় পালন করে বাড়তি আয়ের উতস হিসেবে বেছে নিতে পারে। এত করে লাভবান হওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, এসব পাখির রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। কম সময় ও খুব কম খরচে এসব পাখি লালন-পালন করা যায়। এবং লাভজনক একটা পেশা বলা যেতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের দাপ্তরিক কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হলে আমরা সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।
টিবি