পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করেই বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন মুন্সিগঞ্জের আড়িয়াল বিলের কৃষকরা।
গত বছরের লোকসানকে মাথায় রেখে নতুন স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা। মৌসুমের শুরুতে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলছে ধানের চারা রোপণের কাজ। বোরো ধানের আবাদি জমিতে পানি সেচ ও জমির পরিচর্যা করতেও দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
বিস্তীর্ণ বিল জুড়ে শুধুই সবুজের সমারোহ। উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, কৃষিনির্ভর মুন্সিগঞ্জ জেলার দ্বিতীয় প্রধান ফসল বোরো ধান। আড়িয়াল বিল বোরো ধানের জন্য উন্নতমানের একটি জায়গা। এ বছর জেলায় ২৪ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

যার মধ্যে শ্রীনগর উপজেলাতে প্রায় ১০ হাজার হেক্টরের কাছাকাছি। এর মধ্যে আড়িয়াল বিলের মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর অংশের ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে।
শনিবার (১৪ জানুয়ারি) সরেজমিনে বিল ঘুরে দেখা গেছে, হাইব্রিড জাতের ২৮ ও ২৯ ধান রোপণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কৃষকরা জানান, আগামী আরও দুই সপ্তাহ চলবে ধান রোপণের কর্মব্যস্ততা। রোপণকৃত ধান আগামী বৈশাখ মাসে ঘরে তুলতে পারবেন কৃষক। তারা জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গতবছর ধানচাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। অনেক কৃষক রোপণ করা ধান ঘরে তোলার আগেই পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে, গতবারের লোকসান কাটিয়ে চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের আশা তাদের।
বিজ্ঞাপন
এসময় গাদিঘাট এলাকার বোরো ধান চাষি সাদেক বেপারী বলেন, এবার আমি ২৫ কানি জমিতে ২৯ ধান রোপণ করেছি। খরচ হয়েছে ৭ লাখ টাকা। এক কানিতে ১০০ মণ ধান হবে বলে লক্ষ্য ঠিক করেছি। ২৫ কানি জমিতে আড়াই হাজার মণ ধান হবে আশা করছি। গতবারের ক্ষতি কাটিয়ে এবার ভালো লাভ হবে। আগামী বৈশাখ মাসে ধান উঠবে।

রহমান শেখ বলেন, আমি ৫ কানি জমিতে ধানের আবাদ করছি। আমার খরচ হয়েছে ৩ লাখ টাকা। আমার ৫০০ মণ ধান হবে। প্রতি কানিতে ১০০ মণ ধান হবে। প্রতিমণ ধান ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি করা যাবে। আব্দুল হাকিম হাওলাদার বলেন, আমি ২৮০ শতাংশ জমিতে ২৯ ধান রোপণ করেছি। প্রতি শতাংশে এক থেকে দেড় মণ ধান হয় আমার। গতবার প্রচুর লোকসান হয়েছে। এবার বাম্পার ফলন হবে আশা করছি।
গাদিঘাট এলাকার আব্দুল করিম মন্ডল বলেন, আমি ৫০০ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ করেছি। এ পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। গতবার পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ধান। এবার কি হয় তা জানি না। অন্য জায়গা থেকে আমাদের আড়িয়াল বিলের ধান উৎপাদন হয় বেশি। কারণ হলো আমাদের জমিটি পানির নিচে ৫ মাস থাকে। এতে মাটি উর্বর থাকে।
গাদিঘাট এলাকার আমির হামজা বলেন, আমি ২২ বছর সিংগাপুর প্রবাস জীবন শেষ করে বাপ-দাদার পেশায় ফিরে এসেছি। এবার আমি ২১০ শতাংশ জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছি। আশা করছি এবার ২৫০ মণ ধান হবে আমার। ৩০ মণ ধান নিজেদের জন্য রেখে বাকি ধান বিক্রি করে দেব। ১ মণ ধানে আমাদের ২৬ কেজি চাল হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রাণী বলেন, শ্রীনগর উপজেলায় আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৯৬৭ হেক্টর জমি। এখান থেকে উৎপাদন হবে ৪২ হাজার ৫৬০ মেট্রিক টন ধান। অন্য জমি থেকে আড়িয়াল বিলের ধান উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। জমিতে প্রচুর পরিমাণ পলি ও ধান কাটার পরে যে অবশিষ্ট অংশ থাকে তা পচে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ জৈব সার তৈরি হয়। এতে সব ধরনের চাষবাস বেশি হয়ে থাকে।
মুন্সিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. খুরশিদ আলম বলেন, মুন্সিগঞ্জ যদিও আলু অধ্যুষিত এলাকা। তবে এ জেলার দ্বিতীয় প্রধান ফসল বোরো ধান। জেলায় এবার ২৪ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে শ্রীনগর উপজেলাতে প্রায় ১০ হাজার হেক্টরের কাছাকাছি। এর মধ্যে আড়িয়াল বিলের মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর অংশের ৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে।
তিনি আরও বলেন, আড়িয়াল বিল ধান উৎপাদনে উন্নত মানের জায়গা। কেননা এ জায়গায় প্রচুর পরিমাণ পলি পড়ে। এতে মাটি উর্বর হয়ে থাকে, তাই আড়িয়াল বিলের যেকোনো ফসল বাম্পার ফলন হয়। বিলে ২৮ ও ২৯ জাতের ধান বেশি রোপণ করা হয়। এবছর সরকারের নির্দেশনা হচ্ছে, উচ্চফলনশীল জাত যেমন- ৮৮, ৮৯, ৯২, বঙ্গবন্ধু ধান, ১০০ জাতগুলো কৃষকের মাঝে সম্প্রসারণ করা। এই জাতের ধান রোপণেও আমরা কৃষককে পরামর্শ দিচ্ছি। ধানচাষিদের জন্য পরামর্শ হচ্ছে, ২৮ জাতের ধানটি একটি পুরাতন জাত। ব্লাস্ট নামে এটার একটি রোগ দেখা দিচ্ছে। তাই এর পরিবর্তে ব্রি ধান ৮৮ জাতের ধান চাষ করতে পারে তারা। এছাড়া ব্রি ধান ২৯ জাতের ধান পরিবর্তন করে ব্রি ধান ৮৯ জাতের ধান রোপণ করলে ভালো ফলন পাবেন কৃষক।
প্রতিনিধি/এসএস

