রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

হোটেল বয় থেকে কোম্পানির মালিক, করেছেন হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান

সাকলাইন যোবায়ের
প্রকাশিত: ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৮ এএম

শেয়ার করুন:

হোটেল বয় থেকে কোম্পানির মালিক, করেছেন হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান
ইনসেটে আবুল কালাম হাসান টগর

পরিবারের হাল ধরতে যে ছেলে একসময় হোটেল বয়ের কাজ করতেন, তিনি এখন মোবাইল এক্সেসরিজ তৈরি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। শুনতে অনেকটা রূপকথার গল্পের মতো শোনালেও ঘটনাটি বাস্তব জীবনের। কুমিল্লার এক তরুণের জীবনের বাঁকবদলের গল্প। পরিশ্রম আর চেষ্টা তাকে দিয়েছে সফলতা।

তিনি আবুল কালাম হাসান টগর। এক দশক এর বেশি সময় ধরে তার হালিমা টেলিকম কোম্পানি দেশে মোবাইল ফোন সেট ও মোবাইল এক্সেসরিজ উৎপাদনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার মধ্যে অন্যতম চার্জার, ব্যাটারি, পাওয়ার ব্যাংক আর এগুলোর গুণগতমানও অনেক ভাল। তিনি হালিমা টেলিকমের মোবাইল ফোন বাজারে এনেছেন। এসব উৎপাদন হচ্ছে কুমিল্লা শহরতলির চাঁন্দপুর এলাকায়। তার কারখানায় কাজ করেন হাজারের বেশি শ্রমিক। তাদের ৯০ ভাগ নারী। যাদের অধিকাংশই নিরক্ষর। সেই নারীদের হাতে-কলমে শিখিয়ে তিনি স্বাবলম্বী করেছেন দূর করেছেন বেকারত্ব স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে।


বিজ্ঞাপন


বাড়ি থেকে বেরিয়ে টগর কাজ নেন সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে। হোটেলবয় হিসেবে। সেখানে জমানো ৩ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তিনি বিভিন্ন দোকানে গিয়ে একটি ফোন কোম্পানির কার্ড বিক্রি শুরু করেন। সেখানে পরিচয় হয় ওই কোম্পানির এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি তাকে কুমিল্লা ফিরে গিয়ে কোম্পানির সাব-ডিলার হতে বলেন। টগর স্বজনদের থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। সাইকেল চালিয়ে দোকানে দোকানে পণ্য পৌঁছে দিতেন। সে সময় অনেক ব্যবসায়ী বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতেন। তিনি ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতেন।

টগরের পৈতৃক বাড়িকুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কৈয়নী গ্রামে। বাবা মো. সিরাজুল হক বাড়ি করেন নগরীর মোগলটুলীতে। তারা তিন ভাই এক বোন। তিনি মেজ। বাবা ছিলেন ঠিকাদার। তিনি সন্তানদের ছোট রেখে মারা যান। টগরের বয়স তখন পাঁচ বছর। তাদের সচ্ছল পরিবারে নেমে আসে অসচ্ছলতার ঘোর অন্ধকার। ১৯৯৮ সালের দিকে তিনি ২০ বছরের তরুণ।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে টগর কাজ নেন সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে। হোটেলবয় হিসেবে। সেখানে জমানো ৩ হাজার টাকা নিয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় তিনি বিভিন্ন দোকানে গিয়ে একটি ফোন কোম্পানির কার্ড বিক্রি শুরু করেন। সেখানে পরিচয় হয় ওই কোম্পানির এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি তাকে কুমিল্লা ফিরে গিয়ে কোম্পানির সাব-ডিলার হতে বলেন। টগর স্বজনদের থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। সাইকেল চালিয়ে দোকানে দোকানে পণ্য পৌঁছে দিতেন। সে সময় অনেক ব্যবসায়ী বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতেন। তিনি ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতেন।

এই প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ নারী। একসময় তারা বাসা বাড়িতে কাজ করতেন। তাদেরকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানকার নারী শ্রমিকরা সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকে। এ এলাকার এমনও বাড়ি আছে যে এক বাড়িতে তিনজন নারী শ্রমিক কাজ করেন।

hamila

এতে তার প্রতি মানুষের আস্থা বেড়ে যায়। তিনি ওই কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর হন। ফোনের সিম ব্যবসা করতে গিয়ে দেখলেন ফোন ব্যবসায়ীরা মোবাইল ফোন এক্সেসরিজ এনে দেওয়ার দাবি জানান। তিনি ঢাকা থেকে মোবাইল ফোন এক্সেসরিজ এনে তাদের দিতে থাকেন। এক সময় তার মাথায় আসে বড় কিছু করার। সে লক্ষ্যে ২০১০ সালে চীন যান। সেখানে গিয়ে মোবাইল ফোন এক্সেসরিজ তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা। তার কোম্পানিতে এখন হাজারের ওপরে শ্রমিক কাজ করেন।

তিনি কোম্পানিটি তার মা হালিমা বেগমের নামে গড়ে তুলেছেন। কুমিল্লার গন্ডি পেড়িয়ে হালিমার মোবাইল ফোন সেট ও এক্সেসরিজ পণ্য এখন ফেনী, নোয়খালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুরসহ সারা দেশে যাচ্ছে। হোটেল বয় থেকে আবুল কালাম হাসান টগর কোটি কোটি টাকার মালিক একজন সফল উদ্যোগতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নরমাল মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে উন্নত মানের এ্যানড্রয়েড ফোন, ফোনের ব্যাটারি, হেডফোন, মোবালের কভারসহ যাবতীয় মোবাইল এক্সেসরিজ তেরি করছে হালিমা কোম্পানি।

হালিমা টেলিকম কোম্পানির কর্ণধার হাসান টগর বলেন, আমাদের কোম্পানির প্রতিটি জিনিসের গুণগতমান ভাল হওয়ার কারণে সারা দেশে বিক্রি হচ্ছে। হালিমা টেলিকম কোম্পানি এখন ব্রান্ড হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এতে বেকারত্ব দূর হয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

hamila

তার প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ নারী। একসময় তারা বাসা বাড়িতে কাজ করতেন। তাদেরকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানকার নারী শ্রমিকরা সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকে। এ এলাকার এমনও বাড়ি আছে যে এক বাড়িতে তিনজন নারী শ্রমিক কাজ করেন বলেও জানান হালিমা হাইটেক পার্কের কর্ণধার আবুল হাসান টগর।

সফল এই উদ্যোক্তা আরও বলেন, আমার ঢাকায়ও একটি ফ্যাক্টরি থাকলেও আমি কুমিল্লাকে প্রমোট করতে চাই। গোমতী নদীর ওপারে  মাঝিগাছা এলাকায় একটি এনড্রয়েড কোম্পানি চালু রয়েছে। দেশের দুটি হাইটেক পার্ক এর মধ্যে শুধুমাত্র কুমিল্লার হালিমা হাইটেক পার্ক ভবনে শতভাগ হ্যান্ডসেট ম্যানুফ্যাকচারিং হয়। আমার স্টাফদের আমি একটি পরিবারের মত দেখাশোনা করি বিধায় এখানে তারা চাকরী ছেড়ে যেতে চান না। প্রায় বেশির ভাগ স্টাফ ১০/১২ বছর ধরে চাকরি করছেন।

halima

হালিমা হাইটেক পার্কের মোবাইল টেকনেশিয়ান রতনা বেগম বলেন, আমি এ কোম্পানিতে ১০ বছর ধরে চাকরি করছি। এখানকার চেয়ারম্যান স্যার আমাদের স্টাফদের বেতনের বাইরে আমাদের কোনো অসুখ হলে চিকিৎসা, বাচ্চদের লেখা পড়ার খরচ যাবতীয় বিপদে সাহায্য করে থাকেন। তার জন্য দোয়া করি।   

প্যাকেজিং বিভাগের ইয়াসমিন আক্তার বলেন, আমরা যারা এখানে কাজ করি, তাদের বিয়ের খরচের টাকা এবং যাদের বাচ্চা হবে তাদেরকেও চেয়ারম্যান স্যার সহযোগিতা করেন। তিনি খুব ভালো মানুষ।

নারী নেত্রী দিলনাশি মোহসেন বলেন, কুমিল্লার চাঁনপুর এলাকায় নারীদের এমন প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে তাদের আত্মকর্মস্থান করে তাদের বেকারত্ব দূর করে স্বাবলম্বী করা হালিমা গ্রুপ একটি অনন্য উদাহরণ। এখন জেলার অনেক নারী তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

কুমিল্লার নবাগত জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শামীম আলম ঢাকা মেইলকে বলেন, হালিমা টেলিকম হাইটেক পার্কের নাম শুনেছি। ওদের কর্মকান্ড সম্পর্কে জেনেছি যে ওরা কাজ করে। ওদের এখানে অনেক শ্রমিক কাজ করে থাকেন। এসকল কর্মকাণ্ডে জেলা প্রশাসন থেকে যদি প্রমোট করা লাগে জেলা প্রশাসন তা করবে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর