শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়ে জানাজায় আইনের ব্যত্যয় দেখছে না কর্তৃপক্ষ

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১০ পিএম

শেয়ার করুন:

হাতকড়া-ডান্ডাবেড়ি নিয়ে জানাজায় আইনের ব্যত্যয় দেখছে না কর্তৃপক্ষ

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে হাতকড়া আর ডান্ডাবেড়ি নিয়ে বিএনপি নেতার মায়ের জানাজা পড়ানো কারা বিধি মোতাবেক হয়েছে। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও কারা কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে এই তথ্য জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনিসুর রহমান ও জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. বজলুর রশিদ আখন্দ।


বিজ্ঞাপন


বিএনপি নেতার স্বজনেরা জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আলী আজমের মা সাহেরা বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে গত রোববার বিকেলে মৃত্যুবরণ করেন। শেষবারের মতো মাকে দেখতে ও মায়ের জানাজা নিজে পড়াতে আইনজীবীর মাধ্যমে গত সোমবার বিকেলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক বরাবর প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন আলী আজম। কিন্তু ওই দিন দাফতরিক কাজ শেষ না হওয়ায় মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি মেলে বিএনপির এই নেতার। মঙ্গলবার সকালে গাজীপুর জেলা কারাগার থেকে প্যারোলে মুক্তি পেয়ে নিজ বাড়ি কালিয়াকৈরের পাবুরিয়াচালা এলাকায় মায়ের জানাজায় উপস্থিত হন তিনি।

প্যারোলে মুক্তি পেয়ে সকাল ১০টায় নিজ বাড়ির পাশে মায়ের জানাজাস্থলে উপস্থিত হন বিএনপি নেতা আলী আজম। বেলা ১১টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। মায়ের দাফন শেষে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। জানাজার নামাজসহ পুরোটা সময় হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় ছিলেন আলী আজম।

আলী আজমের ভাই আতাউর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলে তার ভাইকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। জানাজা পড়ানোর সময় তাঁর হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে দিতে বলা হয়েছিল, কিন্তু পুলিশ খুলে দেয়নি।

জানাজার সময়ও আলী আজমের হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি খুলে না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন জানাজায় উপস্থিত মুসুল্লি ও স্থানীয় লোকজন। এ অবস্থায় আলী আজমের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।


বিজ্ঞাপন


এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, প্রথমত এ বিষয়টি হলো প্যারোল প্রদানের কর্তৃপক্ষ হলো জেলা প্রশাসক। আমার কাছে আবেদন করেছে আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নির্দেশনা সম্বলিত প্যারোলে মুক্তির আদেশ দিয়েছি। এখন এখানে জেলকোড বা অন্যান্য বিষয়ে পুলিশের নিজস্ব সিকিউরিটি নিয়ে যারা কাজ করে আপনারা বরং তাদের কর্তৃপক্ষের কাছে জিজ্ঞাসা করাই ভালো। যেহেতু সম্প্রতি একটি দুর্ঘটনা (জঙ্গি পালিয়ে যাওয়া) ঘটেছে। জেলকোডে কিন্ত ডান্ডাবেড়ি পরানোর কথা বলা আছে। তবে এটা জানাজার সময় খুলবে কি খুলবে না, এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সাথে বা নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের সাথে কথা বলেন। আমরা তো সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা বলে দিয়েছি, তবে এটা নিয়ে একটা মানবিক বিষয় এসেছে, এছাড়া আইনের কোনো বড় ব্যত্যয় ঘটেনি।

গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার বজলুর রশিদ বলেন, আসামি জেলের বাইরে গেছে, তাই নিরাপত্তার জন্য ডান্ডাবেড়ি দিয়েছি। আমার কাছে ওয়ারেন্টে দাগি-র্নিদাগি কোনো কিছু বলার থাকে না। আমি শুধু তাদের সেকশন (ধারা) গুলো দেখি। সেকশনে আছে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ৩, ৪, ৫ ধারা, বিস্ফোরক আইনের মামলা আমি কি ছোট করে দেখবো? আমি কোন মামলা ছোট করে দেখবো? ৩৮০ ধারার মামলা গরুর চুরি মামলা, আমি সেটাও ছোট করে দেখতে পারি না। দেশের জঙ্গিরা কারাগারে থাকাবস্থায় আমাদের সাথে মধুর ব্যবহার করে আবার যখন ঘটনা ঘটায় তখন আমাদের দায়িত্ব নিতে হয় জবাবদিহিতা আমাদেরই দিতে হয়। এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। জেল কোডে ডান্ডাবেড়ি পরানোর কথা বলা আছে।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নান বলেন, আমরা বারবার বলে আসছি দেশে কোনো আইনের শাসন নেই, মানবাধিকার নেই, আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই। সেখানে এসব ঘটনা ঘটতেই থাকবে। সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে এবং নিয়মিতভাবে মানবাধিকার নির্মমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। গাজীপুরের এই ঘটনাটি তার বাস্তব উদাহরণ। একজন রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিকের সাথে এমন আচরণে আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একটা স্বৈরাচারী সরকার দমন, পীড়ন ও ভয়ভীতি দেখিয়েই কিন্তু ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে তারই উদহারণ এটা।

প্রতিনিধি/এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর