গিয়েছেন যুদ্ধ করতে৷ যু্দ্ধ করেছেন ঠিকই, তবে অস্ত্র নয়, ক্যামেরা হাতে৷ মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার কাজও করেছেন দিন-রাত। কলকাতার করিমপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ট্রেনিং দিয়ে দেশে পাঠাতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। আবার নিজে ট্রেনিং শেষে ভলান্টিয়ার্স সার্ভিস কোরে যোগদানের পরে ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে ছবি তোলার কাজ করতেন।
একাত্তরের কুষ্টিয়ার সেই তরুণ আবদুল হামিদ রায়হান, যার বয়স এখন একানব্বই৷ চয়েন উদ্দিন ও জোবেদা খাতুনের বড় সন্তান হামিদ রায়হান৷ বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের ৫২ মসজিদ বাড়ি লেনে (বর্তমানে সেটি ১১ নম্বর খলিলুর রহমান সড়ক)৷ ১৯৩২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া সদরের বুড়িয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কুষ্টিয়া সিরাজুল হক মুসলিম হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন।
বিজ্ঞাপন

ফটোগ্রাফিতে নেশা হওয়ার কারণ এবং মুক্তিসংগ্রামে জড়ানোর গল্প দিয়ে শুরু হলো তার সঙ্গে আলাপচারিতা৷ হামিদ রায়হান বলেন, তখন ক্লাস নাইনে পড়ি৷ হঠাৎ বাবা অসুস্থ হন৷ বড় ছেলে আমি৷ তাই লেখাপড়া বাদ দিয়ে সংসারের হাল ধরি৷ তামাক পাতার ব্যবসা শুরু করি প্রথম৷ পরে ম্যানেজার পদে চাকুরি নিই কুতুবউদ্দিন অ্যান্ড সন্স টোবাকোতে৷ ওখানেই কাজ করেছি মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত।
ফটো তোলার ঝোঁক ছিল আগে থেকেই৷ একটা কম দামি ক্যামেরা ছিল, লুবিডর ক্যামেরা৷ ওটা দিয়েই ফটো তুলতাম৷ ইয়াসিকা ক্যামেরা পোস্টালে অর্ডার করা যেতো তখন৷ টাকা জমিয়ে একবার ৫০০ টাকায় ইয়াসিকা সিক্স-থার্টিফাইভ ক্যামেরা করাচি থেকে আনাই পোস্টালের মাধ্যমে৷ ওই ক্যামেরাটাই ইউজ করেছি একাত্তরে৷

বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ফটোগ্রাফি শিখেছি নিজে নিজে৷ স্টুডিওতে গিয়ে দেখতাম কীভাবে ওরা এনলার্জ করে৷ তখন কৌতুহলও বেড়ে যায়৷ খুব বেশি টাকা তখন ছিল না৷ তাই লেদমেশিনে নিজের মতো যন্ত্রাংশ তৈরি করি৷ করাচি থেকে দেড়শ টাকায় আনাই একটা লেন্সও৷ রেলগেইটের লাইটে যে কাঁচ লাগানো থাকে, ওরকম দুটো কাঁচও জোগাড় করি৷ এগুলো দিয়েই বানাই এনলার্জ৷ ওটা বানানোর কথা তখন চিন্তাও করা যেতো না৷ পরে অফিসের ভেতর একটা রুমকে স্টুডিও বানিয়ে ফেললাম৷ এভাবেই ফটোগ্রাফির আগ্রহটা জীবন্ত রাখি৷ স্টুডিওটির নাম রূপান্তর। বর্তমানে ছেলে আব্দুল মান্নান শাহিন সেটি দেখভাল করেন।

তারপর এলো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা এবং রাজনীতিতে জড়ানোর প্রসঙ্গ৷ ক্যামেরা হাতে বলতে গেলে সারাজীবনই কাটিয়ে দেওয়া হামিদ রায়হান বলেন, বাল্যবন্ধু ছিলেন ব্যারিস্টার আমীর-উল-ইসলাম৷ একসঙ্গে স্কুলে পড়েছি৷ ১৯৭০ সালের মার্চের ঘটনা৷ তখন আমি কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট৷ নির্বাচনি জনসভা হবে, শেখ মুজিব আসবেন কুষ্টিয়াতে৷ ব্যারিস্টারকে তিনি বললেন, ‘তুই যশোরে আয়, আমি রাতে নামবো ওখানে৷’
ব্যারিস্টারসহ একটা গাড়ি নিয়ে আমরা যাই যশোরে৷ কিন্তু ওইদিন ফ্লাইট লেট হয়৷ বেশি রাত হওয়ায় বঙ্গবন্ধুকে ঝিনাইদহেই রাখলাম৷ সকালে নিয়ে আসি কুষ্টিয়াতে, উনি ওঠেন ডাকবাংলোতে৷
বঙ্গবন্ধুকে খাওয়ানোর দায়িত্ব ছিল আমার ওপর৷ বাড়ির গরুর দুধ পর্যন্ত তাকে খাইয়েছি৷ মায়ের বয়স তখন অনেক৷ বঙ্গবন্ধুকে উনি খুব পছন্দ করতেন৷ তাই অসুস্থ শরীর নিয়েই ভাষণ শুনতে হাজির হয়েছিলেন কুষ্টিয়া ইউনাইটেড হাইস্কুল মাঠে৷ পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর যে ভূমিকা দেখেছি, তখনই বুঝেছি, নেতা একটাও যদি হয় তিনিই হবেন৷ বাঙালিকে ভালোবাসেন এমন জোরদার নেতা তখন ছিল না৷ ফলে বঙ্গবন্ধুই হয়ে ওঠেন বাঙালির প্রাণের নেতা৷ কুষ্টিয়াতে বঙ্গবন্ধুর কয়েকটি পোট্রেট ও জনসভার ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছিলাম৷ ওই ছবিগুলোই আজ কথা বলছে৷ একাত্তরের আন্দোলন, প্রতিবাদ, আত্মত্যাগ ও বীরত্বের ইতিহাসটাও ছবির মাধ্যমেই জীবন্ত হয়ে আছে৷
বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে যাওয়া ও ছবি তোলার আগ্রহের কথাগুলো এভাবেই তুলে ধরেন যুদ্ধ-আলোকচিত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ রায়হান৷
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের পর থেকেই কুষ্টিয়া উত্তপ্ত হতে থাকে৷ ২৩ মার্চ ইসলামিয়া কলেজ মাঠে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে শোডাউন করে ছাত্র-মজুর-জনতা৷ ২৫ মার্চ কুষ্টিয়া হাইস্কুল মাঠে ছাত্র নেতারা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন গোলাম কিবরিয়া, আব্দুর রউফ চৌধুরী, নূরে আলম জিকো প্রমুখ৷ ওইদিন সাধারণ মানুষ ও ছাত্ররা লাঠিসোটা, তীর-ধনুক, দা ও ড্যামি রাইফেল নিয়ে সমাবেশও করে৷ ওই আন্দোলনে হামিদ রায়হান নিজে শুধু যুক্তই থাকেননি, বরং ক্যামেরায় ছবিও তুলে রেখেছেন৷

২৫ মার্চ ১৯৭১৷ রাতেই সারাদেশে শুরু হয় গণহত্যা৷ তখন কী করলেন হামিদ রায়হান? তার ভাষায়—আমার খেয়াল হলো ছবিগুলোর প্রত্যেকটা নেগেটিভ রাখবো৷ ওগুলো অফিসেই ছিল৷ কারফিউ শেষ হলে নেগেটিভগুলো নিয়ে পরিবারসহ চলে যাই ভায়রার বাড়িতে, দৌলতপুরের কামালপুরে৷ পরে সেখান থেকে যাই ভারতের করিমপুরে৷ থাকি জামশেদপুরের এক ভাড়া বাড়িতে৷ কুমারখালির এমপিএ গোলাম কিবরিয়া সাহেবসহ নেতৃবৃন্দরা একটি রিক্রুটিং ক্যাম্প খোলার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন সেখানে৷ কিবরিয়া সাহেব পূর্বপরিচিত৷ ফলে তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ শুরু করি৷ করিমপুর রিক্রুটিং ক্যাম্পটি চালু হলে ধীরে ধীরে যুবকরা আসতে থাকে৷ সেখান থেকেই তাদের বাছাই করে ট্রেনিংয়ে পাঠানো হতো৷
তখন কী ধরনের ছবি তুলতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, ওই সময়টায় ছবি তোলায় ভাটা পড়ে যায়৷ মনে তখন দেশকে মুক্ত করার চিন্তা৷ ২৪ ঘণ্টাই ক্যাম্পে থাকতাম৷ যুবকদের সংগঠিত করা, তাদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করাসহ মাস্টাররোল তৈরি করতে হতো প্রতিদিনই৷ প্রায় দুই হাজারের মতো যুবক ছিল ক্যাম্পে৷ ফলে এত লোকের খাবার আয়োজন করা খুব সহজ কাজ ছিল না৷ কিন্তু ক্যাম্প থেকে যখন হায়ার ট্রেনিংয়ে যুবকদের পাঠানো হতো তখন খুব আনন্দ লাগতো৷

যুদ্ধ-আলোকচিত্রী হিসেবে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে রায়হান বলেন, ট্রেনিং থেকে ফিরে মুক্তিযোদ্ধারা তখন বিভিন্ন জায়গায় অপারেশন শুরু করেছে৷ যুদ্ধ চলছিল পুরোদমে৷ ওই সময় ক্যাম্প থেকে হায়ার ট্রেনিংয়ে লোক নেওয়াও কমে যাচ্ছিলো৷ তখনই মনে হলো, তাহলে ফটোগ্রাফিটাকে কাজে লাগাই৷
১১ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জনসভা হয় টাউন হল ময়দানে৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ৷ রায়হানের তোলা সেদিনের ছবিতে দেখা যায় এম আর আক্তার মুকুল, উপেন তরফদার, জহির রায়হান ও যশোরের রওশনসহ অনেককে৷
সেইদিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারের হেডকোয়ার্টার্স ছিল কলকাতার থিয়েটার রোডে। ১১ ডিসেম্বর যশোর টাউন হল মাঠের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনসুর আলী, কামারুজ্জামান, জহির রায়হান সাহেবদের আসার খবরে দুপুর থেকে মাঠে লোকজন আসতে শুরু করে। বিকাল ৪টার দিকে তারা জনসভাস্থলে পৌঁছান। মাঠ ছিল ছোট, জনসভায় সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতি। হানাদারমুক্ত বাংলার প্রথম জনসভায় প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জনতার উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আর ধ্বংস নয়, যুদ্ধ নয়। এই মুহূর্তে কাজ হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলা।’
সেদিন তাজউদ্দিন সর্বস্তরের মানুষকে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনায় দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

হামিদ রায়হান বলেন, বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর একটি স্মরণীয় দিন। এই দিন হানাদার বাহিনীর কবলমুক্ত যশোরে স্বাধীন বাংলার প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই জনসভায় মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সবাইকে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ভাষণ দিলেন। মানুষ সেগুলো শুনলো। ওই জনসভায় বিদেশি কয়েকজন সাংবাদিক এবং বাংলাদেশের একমাত্র আমিই উপস্থিত ছিলাম।
তিনি বলেন, ভাষণ শেষে তারা যখন চলে গেলেন, তাদের সঙ্গে আমিও যাই। কলকাতার ধর্মতলায় একটি স্টুডিও থেকে ছবিগুলো ওয়াশ করাই। পরদিন জয়বাংলা পত্রিকায় ছবি ছাপা হয়। আমি সেই কাগজ নিয়ে দেশে ফিরে আসি। এরপর ১৩ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় এবং ২০ ডিসেম্বর খুলনার সমাবেশে যোগ দিই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হান বলেন, ১৯৭১ সালের মে মাসে আমি ভারতে যাই। ছিলাম কলকাতার করিমপুর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। সেখানে ২০০ জন করে মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেনিং দিয়ে দেশে পাঠানো হতো। ওই ক্যাম্পের পরিচালক ছিলেন গোলাম কিবরিয়া আর আমি ছিলাম সহকারী পরিচালক। ট্রেনিং শেষে আমি ভলান্টিয়ার্স সার্ভিস কোরে যোগ দিই। সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে ছবি তোলার কাজ করি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে (আগে-পরে) পাঁচ শতাধিক ছবি তুলি। যার নেগেটিভ এখনও আমার স্টুডিওতে (কুষ্টিয়ার রূপান্তর ফটো স্টুডিও) সংরক্ষণ করা আছে।
তিনি জানান, শরণার্থী ক্যাম্প ছাড়াও ছবি তুলেছেন বর্ডার এলাকার অ্যাকশন ক্যাম্পগুলোতে৷ তার ক্যামেরায় তুলে আনি একাত্তরের ৫৪০টির মতো ছবি৷ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে ২৯২টি, দৃককে ১০০টি ও সামরিক জাদুঘর ‘বিজয় কেতন’-এ দিয়েছেন আরও বেশ কিছু ছবি৷

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ রায়হান আরও বলেন, ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হলো। আমিসহ গোলাম কিবরিয়া, বন্ধু ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ৮ ডিসেম্বর ভারত থেকে বেনাপোল হয়ে দেশে আসি। সেসময় দুপুরে খাবার খাই যশোর শহরের চিত্রা মোড়ে (যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র) একটি হোটেলে। তখন যশোরের রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা ছিল। সেসময় যুদ্ধবিধ্বস্ত যশোর শহর ও আশপাশের এলাকার বেশ কিছু ছবি তুলি। আমার তোলা একটি ছবি দেশ-বিদেশে বেশ প্রশংসিত হয়েছিল। ছবিটি ছিল যশোর শহরতলীর রাজারহাট পিকনিক কর্নারের পাশের একটি স্থানের। সেটি ছিল পাকিস্তানিদের ফেলে যাওয়া বোমা-শেলের মধ্যে বিবস্ত্র দুটি শিশুর খেলা করার ছবি।
বাংলাদেশ ভলান্টিয়ার সার্ভিস কোর-এর দল যখন যে জায়গায় যেতো, তাদের সঙ্গেই যেতে হতো হামিদ রায়হানকে৷ বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়েও ছবি তুলতেন তিনি৷ পাটগ্রামের মুক্ত এলাকা পরিদর্শন করতে এসেছিলেন ওয়ার অন ওয়ান্টের চেয়ারম্যান ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ৷ ১৯৭১ সালের পহেলা অক্টোবর তারিখে ডোনাল্ড চেসওয়ার্থসহ পাটগ্রামের কোট-কাচারি, হাসপাতাল ও বিভিন্ন জায়গায় ছবি তোলেন হামিদ রায়হান৷ এছাড়া তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন ট্রেনিং ক্যাম্প, শরণার্থী ক্যাম্প ও মুক্তাঞ্চলগুলোতে৷ পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ধ্বংস করা ব্রিজ, কালভার্ট ও ভবনের ছবিও উঠে এসেছে তার ক্যামেরায়, যা স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সহায়ক হয়েছিল৷
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শিকারপুর ট্রেনিং ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিংয়ের ছবি, ১১ ডিসেম্বর যশোরের পিকনিক কর্নার এলাকায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর ফেলে যাওয়া তাজা রকেট বোমার পাশে দুই শিশুর ছবি, ঝিকরগাছায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্রিজ, ২২ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়া রাজাকারের ছবিও ক্যামেরাবন্দি করেন এ আলোকচিত্রী৷
কুষ্টিয়াতে রাজাকারদের ধরে আনার ছবি, ৬ ডিসেম্বর ভারতের স্বীকৃতির দিন কোলকাতায় একটি মিছিলে প্ল্যাকার্ড হাতে ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা কবি নির্মলেন্দু গুণের ছবিও উঠে আসে তার ক্যামেরায়৷ এই ছবিগুলোই ইতিহাসের মূল্যবান দলিল৷ একাত্তরে হামিদ রায়হানের তোলা ছবিগুলো বিশ্ব গণমাধ্যমে পাঠানো হতো৷ ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত গড়তে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল৷
আলাপচারিতায় যুদ্ধদিনের স্মরণীয় ঘটনার কথাও বলেন আবদুল হামিদ রায়হান৷ তার ভাষায়, খুব কাছ থেকে দেখেছি কীভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে৷ অভুক্ত অবস্থায় মানুষ আসছে দেশ থেকে৷ তিন-চারদিন পর খাবার পেলো৷ আবার কলেরা শুরু হয়ে গেল৷ শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে চোখের একটা অসুখ দেখা দেয় তখন৷ চোখের ওই রোগ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ছিল সব ক্যাম্পে৷ ফলে পশ্চিম বাংলার লোকেরা ওই রোগের নাম দেয় ‘জয় বাংলা রোগ'৷ এক শরণার্থী ক্যাম্পে দেখেছি মা মরে গেছে, বাচ্চা গিয়ে তার দুধ খাচ্ছে৷ এই ছবিটা তুলতে না পারায় খুব আফসোস হয়েছিল৷ হাজার হাজার লোক মরেছে ক্যাম্পে আসার আগেই, খাবারের অভাবে৷ খুলনার গল্লামারি বদ্ধভূমিতে মানুষের হাড়গোড় ও মাথার খুলির স্তুপ ছিল৷ অধিকাংশকেই সেখানে বিহারী ও রাজাকাররা হত্যা করেছিল৷
প্রতিনিধি/এইচই

