শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

যে কারণে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে পড়ে কোটি টাকা

কান্ট্রি ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২২, ০২:৪০ পিএম

শেয়ার করুন:

যে কারণে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে পড়ে কোটি টাকা
ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বে গর্ব করার মতো বাংলাদেশের আছে হাজার বছরের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ স্থাপত্যকলা। শিল্পের এই মাধ্যমে কোনো অংশে কম ছিল না এ অঞ্চল। বাংলাদেশের যে স্থাপনাশৈলী এখনও বিমোহিত করে চলেছে অগণিত ভ্রমণপ্রিয় ও মননশীল মানুষকে, তার মধ্যে আছে দেশজুড়ে থাকা অগণিত নয়নাভিরাম মসজিদ।

ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ জনপদ কিশোরগঞ্জ। নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা আছে এখানে। এর মধ্যে অন্যতম পাগলা মসজিদ। আড়াইশ বছরের পুরনো মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখনও। শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থান এই স্থাপত্যের। পাঁচ তলা উঁচু মিনারের এই মসজিদটি দূর থেকেই নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। নির্মাণশৈলী মুগ্ধ হবার মতো। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে বাড়তি নান্দনিকতা যোগ করেছে পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদী। তবে দেশজুড়ে এর পরিচিতি রয়েছে অন্য কারণে।


বিজ্ঞাপন


আরও পড়ুন— পাগলা মসজিদের সিন্দুকে মিলেছে ১৫ বস্তা টাকা

শুধু মুসলমানরাই নয়, অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও এই মসজিদে দান করে দু’হাত খুলে। দেশের অন্যতম বিত্তশালী মসজিদও এটি। মানুষের বিশ্বাস, কোনো আশা নিয়ে একনিষ্ঠ মনে এ মসজিদে দান করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। রোগ শোক ছাড়াও মানুষ বিভিন্ন উপলক্ষ নিয়ে মানতের পর দান করেন এ মসজিদে। যুগ যুগ ধরে এ বিশ্বাস থেকেই মসজিদটিতে দান করছেন বিভিন্ন ধর্ম বর্ণের মানুষ। এখানকার দান বাক্সগুলো খোলা হয় তিন মাস পরপর। সেখানে পাওয়া যায়- নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, বৈদেশিক মুদ্রা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী। এগুলো পরে নিলামে তোলা হয়। এতে প্রতিবার আয় হয় প্রায় কোটি টাকার মতো। মসজিদের উন্নয়ন ও খরচ মেটানোর পর বাকি টাকা ব্যয় হয় আশপাশের অন্যসব মসজিদের উন্নয়ন ও দুস্থদের সাহায্যে। অনুদান দেওয়া হয় এলাকায় দরিদ্র অসহায়, অসুস্থ এবং অসচ্ছল পরিবারকে। চলে লেখাপড়া, চিকিৎসা, অভাবী নারীদের বিয়েতে সাহায্যসহ নানা গণমুখী কার্যক্রম। মসজিদের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে নুরুল কোরআন এতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদরাসা-বললেন স্থানীয়রা।

পাগলা মসজিদের প্রতিষ্ঠা নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে লোকমুখে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ‘এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দার মাঝখানে মাদুর পেতে ভেসে আসেন এ অঞ্চলে। এরপর এখন যেখানে মসজিদটি আছে, সেখানে অবস্থান করেন। তাকে ঘিরে সমবেত হয় ভক্তরা। পরে ওই দরবেশ যাতে ইবাদত করতে পারেন, সেজন্য নদীর মাঝের টিলার ওপর একটি টিনের ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়। ওই ঘরটিই পরে ‘পাগলা মসজিদ’ হয়ে যায়।

আরো জনশ্রুতি আছে, হয়বতনগর প্রতিষ্ঠাতাদের পরিবারের এক নিঃসন্তান বেগমকে জনগণ ‘পাগলা বিবি’ বলে ডাকতো। দেওয়ানবাড়ির এ বেগম নরসুন্দার তীরে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে একটি মসজিদ নির্মাণ করলে ওটার নাম রাখা হয় পাগলা বিবির মসজিদ। এরকম আরো অসংখ্য জনশ্রুতি মিলে এলাকার লোকমুখে। বর্তমানে মসজিদের জায়গা রয়েছে প্রায় ৪ একর। এর আগে ১৯৭৯ সালের ১০ মে ওয়াকফ স্টেটে চলে যায় মসজিদটি। এর পর থেকে সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসকই পরিচালনা করে আসছে মসজিদটি।


বিজ্ঞাপন


এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর