নওগাঁ জেলা শহর থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নটিতে রয়েছে ৪২ গ্রাম। আগ্রাদ্বিগুন বাজারে প্রত্যন্ত জনপদেই গড়ে উঠেছে এক আধুনিক পাঠাগার। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পাঠাগারটিতে টেবিল, শেলফ ও আলমারিতে সুন্দর করে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন বই। প্রায় চার হাজার বইয়ের পাশাপাশি পাঠাগারটিতে রয়েছে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শিক্ষার ব্যবস্থা।
প্রত্যন্ত গ্রামে ব্যতিক্রমী পাঠাগার তৈরির উদ্যোক্তা আলমগীর কবির নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি নিজ বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে পাঠাগার তৈরির কার্যক্রম শুরু করেন। প্রায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুট জায়গার ওপর গড়ে তুলেছেন এই পাঠাগার। তার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান টানা ১৭ বছর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১০ সালে তিনি মারা যান। বাবার নামেই পাঠাগারের নামকরণ করেছেন তিনি। ‘মুজিবুর রহমান স্মৃতি পাঠাগার’ এখন স্থানীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রে।বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও গ্রীণ ভয়েস বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা পরিবেশবিদ হিসেবে সারা দেশে তিনি ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন।
বিজ্ঞাপন
![]()
পাঠাগারে বই পড়তে আসা স্থানীয় আগ্রাদ্বিগুন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রুবেল হোসেন বলেন, ‘একটা ইউনিয়ন পর্যায়ে এত সুন্দর পাঠাগার পাব তা কল্পনা করিনি। অবসর সময়ে আমরা এখানে এসে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে থাকি। অনেক সুন্দর ও চমৎকার একটি পাঠাগার।’
মুসফিকা আক্তার নামের শিক্ষার্থী বলেন, আমি সত্যিই মুগ্ধ এমন একটি পাঠাগার স্থাপন করায়। আমরা প্রতিদিনই কয়েকজন এখানে বই পড়তে আসি। এখানে এসে বই পড়তে আমাদের খুব ভালো লাগে।
জুবায়ের হোসেন নামের স্থানীয় যুবক বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তবে সময় পেলেই পাঠাগারে চলে আসি। আমি সত্যিই মুগ্ধ এমন একটি পাঠাগার এই এলাকায় স্থাপন করায়। ইতিহাস, সাহিত্য, মুক্তিযুদ্ধ, খেলা-ধুলাসহ সব ধরনের বই এখানে আছে। প্রত্যন্ত একটি এলাকায় এমন পাঠাগার করায় আলমগীর ভাইয়ের এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বিজ্ঞাপন
![]()
আলমগীর কবিরের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পাঠাগারটি উন্মুক্ত রয়েছে সবার জন্য। বই, ডেকোরেশনসহ এটি তৈরিতে প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী রাখা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঠাগারটি খোলা থাকে। পাঠাগারে একসঙ্গে ৪০-৫০ জন বসে বই পড়তে পারেন। বাবার মৃত্যুর পর চার ভাই মিলে মুজিবুর রহমান নামে একটি ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। সেই ফাউন্ডেশনের পক্ষে থেকে ২০১৫ সাল থেকে অসহায় শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি নানা ধরনের সামাজিক কাজ করছেন তারা। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেই তৈরি করা হয়েছে ‘মুজিবুর রহমান স্মৃতি পাঠাগার’।
আলমগীর কবির বলেন, ‘জ্ঞান চর্চার অভাবে আমাদের সমাজে প্রগতিশীল মানুষের বড়ই অভাব। প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এমন উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের পাঠাগারে প্রায় চার হাজারের মতো বই আছে। আমাদের ইউনিয়নে মোট ৪২ গ্রাম আছে। প্রতিটি গ্রাম থেকে ২-৩ জন নিয়ে টিম করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহে তারা পড়ার জন্য পাঠাগারে আসবে। কবি, সাহিত্যিকদের জীবনী, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, উপজেলায় ১৩৯টি প্রাথমিক, ২৬টি মাধ্যমিক ও ১৪টি মাদরাসা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে ২২-২৫ জন ছাত্রছাত্রী বাছাই করে দেবেন। যাদের সকালে বিদ্যালয়ে গিয়ে নিজস্ব পরিবহন দিয়ে লাইব্রেরিতে নিয়ে আসা হবে। তারা পছন্দমতো বই পড়বে।
নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ, শিক্ষাবিদ ও গবেষক শরিফুল ইসলাম খান বলেন, একটি পাঠাগারের যে ধরনের পরিবেশ থাকা দরকার তার সবগুলোই সেখানে বিদ্যমান। পাঠাগারটি সময় উপযোগী সময়ে তৈরী করা হয়েছে। এমন একটি উদ্যোগকে স্বাধুবাদ জানাই। আশা করছি এলাকার সকল শিক্ষার্থী ও বইপ্রেমীরা সেখানে গিয়ে বই পড়বেন। সেই সাথে নিজেদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন।
ধামইরহাট উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম জানান, প্রত্যন্ত এলাকায় এমন একটি পাঠাগার সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। আমি আশা করি, পাঠাগারে শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষ আসবে, বই পড়বে। যদি কোনো ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় পাঠাগারে তাহলে অবশ্যই উপজেলা প্রশাসন এর পক্ষ থেকে তা করা হবে।
টিবি

