শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

অন্ধ ও পঙ্গু ইউনুসের ব্যবসার আয়েই পুরো সংসার

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:৪৯ পিএম

শেয়ার করুন:

অন্ধ ও পঙ্গু ইউনুসের ব্যবসার আয়েই পুরো সংসার

মো. ইউনুস আলী। বয়স ২৪। পেশায় একজন কোয়েল পাখি বিক্রেতা। দুই পা থাকলেও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেন না তিনি। চোখেও দেখতে পায় না।

আট-দশজনের মতো শারীরিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও ভিক্ষাবৃত্তি পেশা হিসেবে না নিয়ে কোয়েল পাখি বিক্রি করে চলে তাঁর সংসার। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও সমাজের মানুষের কাছে বোঝা হতে চাননি।


বিজ্ঞাপন


তাই নিজ উদ্যোগে পাখি ব্যবসা করে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে চলেছেন। শারীরিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও সীমাবদ্ধতা তাকে থামাতে পারেনি।

নাটোর সদর উপজেলার রথবাড়ি রাজাপুর মোড় এলাকার আবুল কালাম আজাদের ছেলে। পরিবারের বৃদ্ধ বাবা-মা, তিন বোন আর দুই ভাইয়ের মধ্য ইউনুস মেজ। বাবা আবুল কালাম পান বিক্রেতা।

ছোটবেলা থেকেই ইউনুস আলী স্বপ্ন দেখতেন পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন তাঁর দুস্বপ্নে পরিণিত হয়েছে। ৮ বছর বয়সে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় হঠ্যৎ অসুস্থ্ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় ইউনুস দুই পায়ের শক্তি ও দৃষ্টি হারাতে হয়।


বিজ্ঞাপন


শহরের নিচাবাজার এলাকার রাস্তার পাশে বসে খাঁচায় কোয়েল পাখি বিক্রি করছেন ইউনুস আলী। সেই শারীরিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ইউনুস আলীর সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের প্রতিবেদকের। তিনি জানান, তার জন্ম স্বাভাবিক হলেও ৮ বছর বয়সে হঠাৎ একদিন পেট ব্যাথা ও বমি শুরু হলে পরিবারের লোকজন নাটোর শহরের এক শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় তার দুই পায়ের শক্তি ও দু'চোখের দৃষ্টি হারাতে হয়। পরবর্তীতে পরিবার অনেক চিকিৎসা করিয়েও ফিরে পাননি আগের সেই দৃষ্টি শক্তি। এক পর্যায়ে পরিবারের কাছে নিজেকে বোঝা না করে নিজ উদ্যোগে ৬ বছর আগে পাখির বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। এখন পাখি বিক্রির টাকা দিয়ে চলে তার পুরো পরিবার।

ইউনুস আলী বলেন, অনেক স্বপ্ন দেখতাম পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি করব। সেই স্বপ্ন নিয়ে স্কুলেও ভর্তি করিয়েছিল পরিবার। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ অন্ধকারে ডুবে গেছে। ভুল চিকিৎসার কারণে আমি দৃষ্টি হারিয়েছি। আমি পা দিয়ে চলাচলও করতে পারি না। অনেক বছর পরিবারের উপর বোঝা হয়ে ছিলাম। পরে ভাবলাম কতদিন বৃদ্ধ বাবার টাকায় খাব। একদিন মনে সাহস নিয়ে কোয়েল পাখি বিক্রি শুরু করলাম। এখন প্রতিদিন বিক্রি করি। যা ইনকাম করি তা দিয়ে পরিবার চালাই।

ইউনুস আরও বলেন, আমার মতো কোনো মায়ের সন্তানের যেন ভুল চিকিৎসায় দৃষ্টি হারাতে না হয়। আমি যত দিন বাঁচব তত দিন এ ব্যবসা নিয়েই থাকতে চাই। আমার খুব ইচ্ছা এ ব্যবসাটা বড় পরিসরে করার। আর্থিক সংকটের জন্য করতে পারি না। যদি সমাজের বিত্তবান মানুষেরা আমাকে সহযোগিতা করেন তাহলে আমার ব্যবসাটা বড় করতে পারতাম।

ইউনুসের বাবা আবুল কামাল আজাদ বলেন, ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় আমার ছেলে আজ দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছে। তবুও আমার ছেলে বুকে সাহস নিয়ে ব্যবসা করছে। তার অনেক স্বপ্ন ছিল। সে নিজে উপার্জন করে সংসার চালাচ্ছে। আমি ছেলেকে নিয়ে ধন্য।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ঢাকা মেইলকে বলেন, একজন শারীরিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও সে ব্যবসা করে উপার্জন করছেন। ভিক্ষাবৃত্তি না করে তিনি সৎ পথে কাজ করছেন। অনেক প্রশংসনীয়। তার পেশাকে শ্রদ্ধা জানাই। সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিরা যদি তাদের মতো  মানুষের পাশে দাঁড়ান তাহলে তাদের জীবন-সংগ্রাম আরও সহজ হবে। তাদের পাশে জেলা প্রশাসন রয়েছে। জেলা প্রশাসন সব সময় তাদের সহযোগিতা করছেন বলেও তিনি জানান।

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর