শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

সরকার আসে সরকার যায়, একটি ব্রিজ কেউ করে দিলো না

সুমন আলী
প্রকাশিত: ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:১৪ পিএম

শেয়ার করুন:

সরকার আসে সরকার যায়, একটি ব্রিজ কেউ করে দিলো না
ছবি: ঢাকা মেইল

সরকার আসে সরকার যায় কিন্তু একটি ব্রিজ কেউ করে দিলো না। দেশের এত উন্নয়ন তবুও আমাদের এলাকার উন্নতির জন্য একটি মাত্র ব্রিজের দাবি, সেটাও পূরণ হলো না। এভাবেই আক্ষেপ প্রকাশ করছিলেন ব্রিজের দাবি পূরণ না হওয়ায় নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের জামগ্রাম ও তিলাবদুরী গ্ৰামের বাসিন্দারা।

এই দুই গ্ৰামে খালের ওপর নির্মাণ করা বাসিন্দাদের তৈরি ৪টি বাঁশের সাঁকোই খালের দুপারের মানুষদের একমাত্র ভরসা। একটিক ব্রিজের অভাবে যুগ যুগ ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে দু’পাড়ের শিক্ষার্থী, কৃষকসহ হাজারও সাধারণ মানুষ। হাজার হাজার হেক্টর জমিতে উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণ নিয়ে একদিকে কৃষক যেমন বিড়ম্বনায় পড়ছেন, অন্যদিকে শিক্ষার্থী এবং সাধারণ পথচারিদেরও পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। এছাড়া খালের অপর পাশে কেন্দ্রীয় গোরস্থানে মরদেহ নিয়ে যেতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বছরের পর বছর। তাই দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি স্থানীয়দের।


বিজ্ঞাপন


naogaon

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সবুজে ঘেরা নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী গ্রামের নাম হচ্ছে জামগ্রাম ও তিলাবদুরী। গ্রামের পশ্চিম দিক দিয়ে বয়ে গেছে রতনডারা খাল। যে খালে সারাটা বছর জুড়ে পানি থাকে। সম্প্রতি খালটি এলজিইডির আওতায় পুনঃখনন করায় তা অনেক গভীর হয়েছে। এ খালের পূর্বপাশে শতশত পরিবারের বসবাস। খালের পশ্চিম দিকে রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। গ্রামের শতশত কৃষক এ মাঠেই বোরো ও আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে থাকেন। গ্রাম ও মাঠের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খালের ওপর কোনো সেতু না থাকায় মাঠের ফসল ঘরে তুলতে তাদের দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয়। এদিকে, মাঠ ছাড়াও ওই খালের পশ্চিমে রয়েছে গ্রামবাসীর কবরস্থান। যেখানে লাশ বহনে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্তমানে এই খালের তিলাবদুরী নামক স্থানে একটি, জামগ্রাম মাদরাসা বাজার সংলগ্ন স্থানে একটি, জামগ্রাম পশ্চিমপাড়া সংলগ্ন স্থানে একটি ও জামগ্রাম ঢাকাপাড়া সংলগ্ন স্থানে একটি বাঁশের তৈরি নড়োবড়ো সাঁকো দিয়েই পারাপার হতে হচ্ছে জামগ্রাম, ভোঁপাড়া, শলিয়া, কাশিয়াবাড়িসহ ১০-১২ গ্রামের হাজার হাজার বাসিন্দাদের। বছরের প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের এই সব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতে হয়। কোনো অসুস্থ রোগীদেরও ঝুঁকি নিয়ে এই সাঁকো পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত ও কৃষি পণ্য পরিবহনে এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণ অতীব জরুরি। একটি ব্রিজের অভাবে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন-যাপনে এখনোও আধুনিকতার ছোঁয়া স্পর্শ করতে পারেনি।

naogaon

স্থানীয় জামগ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে তবুও আমরা আধুনিক সেবা থেকে বঞ্চিত। রাস্তা পারা-পারের জন্য নেই ব্রিজ। সরকার আসে সরকার যায় আমাদের সেতু কেউ করে দেয় না। একটি সেতুর অভাবে কত ভোগান্তি পোহাতে হয়, সেটা কেউ বুঝতে চায় না।


বিজ্ঞাপন


জনি হোসেন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, আমাদের জাম গ্রামের পাশে ৩ কিলোমিটার দূরে ভোঁপাড়া গ্রামে স্কুলে যায় এই গ্রামের শতশত শিক্ষার্থী। যখন সাঁকো যখন ভাঙা থাকে তখন আরও বিপদ হয়। ১০-১২ কিলোমিটার ঘুরে ৩০ থেকে ৪০ টাকা খরচ করে ঘুরে স্কুলে যেতে হয়। খালের ওপারে প্রায় আড়াই হাজার বিঘা ফসলি জমি। আবার কবরস্থানও আছে। সব মিলে একটি ব্রিজ খুবই জরুরি।

তিলাবদুরী গ্রামের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী লামিয়া খাতুন বলেন, পাশ্ববর্তী ভোঁপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে যেতে বাঁশের সাঁকো দিয়ে যেতে অনেক সময় ভয় লাগে। একবার সাঁকোতে পা আটকে গিয়েছিল। একটি ব্রিজ আমাদের দরকার। দ্রুত যেন ব্রিজ করা হয় সেই দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।

আব্দুল মান্নান, মিজানুর রহমান, মোসলেম উদ্দিনসহ স্থানীয় বেশ কয়েকজন বলেন, দেশের চারদিকে এতো উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু সেই উন্নয়ন ছোঁয়া আমাদের এখানে নাই। একটি ব্রিজই তো দাবি আমাদের সেটাও কি হবে না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কত সরকার যে এলো গেল কিন্তু একটি ব্রিজ আমাদের করে দিলোনা। জনপ্রতিনিধিদের কত বার আমরা বলেছি তারা শুধু আশার বাণী শুনিয়ে যায়।

naogaon

নওগাঁর এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জামগ্রাম ও তিলাবদুরী গ্রামের মধ্যে দিয়ে একটি খাল বয়ে গেছে। সেই এলাকায় ৪টি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। এলাকাবাসীর যাতায়াত, শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া, ফসলী জমি সব মিলে তাদের কথা চিন্তা একটি ব্রিজ খুবই প্রয়াজন। আমরা স্থানগুলো পরিদর্শন করে এবং স্থানীয় সাংসদের সঙ্গে আলাপ করে ব্রিজ নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নওগাঁ-৬ আসনের (আত্রাই-রাণীনগর) সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, ফসল আনা-নেওয়া, শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের যাতাযাতের জন্য একটি ব্রিজ খুবই জরুরি। ওই এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণের। আমি এ বিষয়ে যথাযথ কৃর্তপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্রিজ নির্মাণের জন্য যা যা করা দরকার সেটা করবো। আশা করছি এ ভোগান্তি আর বেশি দিন পোহাতে হবেনা।

এদিকে, দ্রুত হাজার হাজার মানুষের স্বপ্ন খালের ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করে এই অঞ্চলের মানুষদের অর্থনৈতিক ও আর্থ সামাজিক পরিবর্তনের চাকাকে সচল করতে সরকারের দৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয়রা।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর