শনিবার, ৪ মে, ২০২৪, ঢাকা

সৌরবিদ্যুতের আলো বদলে দিয়েছে জেলেদের জীবন

এ এস এম নাসিম
প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২২, ১০:৫৩ এএম

শেয়ার করুন:

সৌরবিদ্যুতের আলো বদলে দিয়েছে জেলেদের জীবন
ছবি : ঢাকা মেইল

শরিফ মাঝি। ৪৪ বছর বয়স তার। নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার শুন্যচর তেলাপিয়া মার্কেট এলাকার বাসিন্দা তিনি। ৭ বছর বয়স থেকে বাবার সঙ্গে নদী ও সাগরে মাছ ধরা শুরু তার। নদীতে শৈশব-কৈশোর-যৌবন পার করা শরিফ মাঝির রয়েছে হাজারও স্মৃতি। একসময় কুপিবাতি, বোম্বা বাতি আর হারিকেন জ্বালিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যেতে হতো তাকে। 

দূর থেকে বড় ট্রলার ও জাহাজের ধাক্কার ভয় থাকতো মনে। তাদের দেওয়া যেত না কোনো সিগনাল। দুর্যোগে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ ছিল না। মোবাইল নিলেও দু-একদিনের মধ্যে চার্জ শেষ হলে বন্ধ হয়ে যেত। দূর সাগরে গেলে পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তা হতো। এখন নদী-সাগরে মাছ ধরতে গেলে তেমন একটা চিন্তা করতে হয় না। যেকোনো সময় মোবাইলে চার্জ দিতে পারে মাঝ নদী বা সাগরে নৌকায় বসেই। মুহূর্তেই বাড়িতেও যোগাযোগ করতে পারে। নৌকায় থাকার সময়ও অন্ধকারের ভয় নেই। সৌর প্যানেল, ব্যাটারি, চার্জার, চার্জ কন্ট্রোলার, ফিশিং লাইট, জব লাইট, ওয়াচ লাইট এবং সাধারণ বাতি সবই রয়েছে শরিফ মাঝির নৌকায়।


বিজ্ঞাপন


noakhali

শুধু শরিফ মাঝি নয়, হাতিয়ার প্রায় লক্ষাধিক জেলের জীবনে এসেছে পরিবর্তন। ছোট-বড় সব ধরনের নৌকা ও ট্রলারে রয়েছে সৌর বিদ্যুতের ব্যবস্থা।

হাতিয়ার বিভিন্ন ঘাটের একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলেদের মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়া, অন্য নৌযানের সাথে নিজেদের নৌযানের সংঘর্ষ এড়াতে নৌকাতে নিশানা বাতি, ভেতরের আলো এবং সংকেত বাতি ইত্যাদি সব কাজেই এখন মাঝিরা সৌর বিদ্যুৎ ও আধুনিক ইলেকট্রিক পণ্য ব্যবহার করেন।

noakhali


বিজ্ঞাপন


সন্ধ্যা নামার পর থেকে হাতিয়ার তীর থেকে নদীতে তাকালে দূর থেকে মনে হয় জোনাকি মিটিমিটি করে জ্বলছে। মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের বুকে বছরের বেশিরভাগ সময়ই সারি সারি নৌকাতে এমন আলো চোখে পড়ে। শুধু আলোই না, নদীতে ভেসে বেড়ানো সব নৌকাতে রয়েছে ডিজিটাল সামগ্রী। এসব পণ্যসামগ্রী ব্যবহারে জেলেদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি হয়েছে। বেড়েছে নানা সুযোগ, জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন ব্যবহার বন্ধ হওয়ার কারণে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন জেলেরা। সৌর শক্তির ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছেন তারা। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিও নেই।

নলচিরা ঘাট এলাকার কিরণ মাঝির সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ১০ বছর আগেও নদী ও সাগরে মাছ ধরার সময় প্রায় রাতের বেলায় অন্য নৌকা ও ফিশিংবোট ধাক্কা দিতো। এতে নদী ও সাগরে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটতো। অনেক জেলের লাশও খুঁজে পাওয়া যেতোনা। মূলত মাছ ধরার নৌযানে লাইটিং সিগনাল বা নিশানা বাতি না থাকায় এসব ঘটনা অহরহ ঘটতে। এখন আর এম দূর্ঘটনা হয়না। এখন নৌযানে নিশানা বাতি ও ভেতরে আলো থাকার কারণে দূর থেকে যে কোন নৌযান চোখে পড়ে। মূলত নৌকায় সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে এমন সুযোগ ও নিরাপত্তা তৈরি হয়েছে। 

নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের করিম মাঝি ঢাকা মেইলকে জানান, ছয় বছর আগে ৫০ ওয়াটের একটি সোলার প্যানেল লাগিয়েছেন তিনি। তা দিয়ে নৌকায় বাতি জ্বালান তিনি। এতে প্রতি মাসে তার দুই-আড়াই হাজার টাকার মতো সাশ্রয় হয়।

noakhali

একই এলাকায় সিরাজ মাঝি ঢাকা মেইলকে জানান, এখন আর মাঝ নদীতে কুপি বা হারিকেন নিয়ে যাই না। এখন সোলার বাতিতে আলো পাই। বাতাসে কুপিবাতি নিভে যাবারও ভয় নেই। নদীতে রাতের সব কাজ সৌরবিদ্যুতের আলোয় চালাতে পারি। নদীতে জাল ফেলা, জাল মেরামত, জাল উঠানো, মাছ বাছাই করা, ফোনে চার্জ দেওয়া সব কিছুই সৌর বিদ্যুতের সাহায্যে চালাই।

এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, জেলেদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন অবশ্যই ভালো খবর। সময়ের পরীক্রমায় তাদের জীবনব্যবস্থা আরো উন্নত হয়েছে। এখন তাদের সব নৌকায় সৌরবিদ্যুত আছে। এতে তাদের ঝুঁকি ও খরচ দুটোই কমেছে। 

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর