শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ফলতিতা বাজারে প্রতিদিন বেচাকেনা হয় কোটি টাকার মাছ

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১১:৫৫ এএম

শেয়ার করুন:

ফলতিতা বাজারে প্রতিদিন বেচাকেনা হয় কোটি টাকার মাছ
ছবি : ঢাকা মেইল

প্রতিদিন আলো ফোটার আগেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে বাগেরহাটের ফলতিতা মাছ বাজার। শুধু বাগেরহাট জেলায়ই নয়, আশে-পাশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা মাছ কিনতে আসেন এই বাজারে। দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম এ মাছ বাজারে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার মাছ বেচাকেনা হয়। ভরা মৌসুমে এ অংক দাঁড়ায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা৷ সপ্তাহের সাতদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন ফকিরহাট উপজেলার এ মাছ বাজারে।

এ হাটে বাগেরহাট খুলনাঞ্চলের মৎস্য ঘেরে উৎপাদিত মাছই বেশি বেচাকেনা হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।


বিজ্ঞাপন


ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন কয়েকশ মণ সাদা মাছ ও চিংড়ির বেচাকেনা হয় এই হাটে৷ তাছাড়া দেশের বৃহত্তম চিংড়ি ও সাদা মাছের পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত এ হাট দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভোর ৬টা থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে পিকআপ, নসিমন, ভ্যান ও ট্রাকে করে মাছ আসতে শুরু করে এখানে৷ সকাল ৮টা বাজতেই পুরোদমে জমে ওঠে হাট৷ বেচাকেনা চলে বেলা ১২টা পর্যন্ত। বিকেলের আগেই ফলতিতা বাজার পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

bagerhat

শ্রমিকরা বাজারের বিভিন্ন আড়তের সামনে সারি দিয়ে রাখছেন মাছের প্যাকেট। পাইকাররা প্যাকেট খুলে মাছ দেখছেন, পরে দরদাম করে কিনে নিয়ে পরিবহনযোগে ফিরছেন নিজেদের গন্তব্যে।


বিজ্ঞাপন


সকাল থেকে মাছের আনা-নেওয়া, ক্রয়-বিক্রয়, নিলাম—সব মিলে ব্যস্ততায় কাটে আড়ত সংশ্লিষ্ট মানুষদের। মাছের বেচাকেনা শেষ হয়ে গেলে ফাঁকা পড়ে থাকে পুরো এলাকা।

বিক্রি করতে আসা মৎস্যচাষি রহমত বলেন, ফলতিতায় মাছ আনলে বসে থাকা লাগে না। দ্রুত বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে চলে যেতে পারি। তাছাড়া বাজারের পরিবেশ ভালো। আড়তগুলো গোছানো।

bagerhat

তবে কিছুটা আক্ষেপের সুরে তিনি বলেন, জিনিসপত্রের দাম যে পরিমাণ বাড়ছে, তাতে মাছের খাবারের দামও অনেক বেড়ে গেছে। ফলে লাভের পরিমাণ খুবই কম। কোনো কোনো সময় লোকসানও হচ্ছে।

রহমত তিন কেজি ওজনের কাছাকাছি কয়েক মণ কার্প জাতীয় মাছ ও ২৫ কেজি চিংড়ি এনেছিলেন। মণপ্রতি ৭ হাজার টাকায় কার্প মাছ বিক্রি করেন।  

তিনি জানান, লাভ-লস কিছুই হয়নি। আসল টাকা কোনোমতে উঠাতে পেরেছেন। ৮০০ টাকা করে কেজিপ্রতি চিংড়ি বিক্রি করায় সামান্য লাভ করেছেন।

সদর উপজেলার মৎস্যচাষি আকাশ মাহমুদ বলেন, নিজের ঘেরের মাছ এ হাটে নিলামে বিক্রয় করতে এসেছি। এখন মাছের দাম একটু কম, তবে এখানে আড়তগুলোতে মাছ বিক্রি করতে আসলে অন্য হাটের তুলনায় দাম ভালো পাওয়া যায়৷ দ্রুত মাছ বিক্রি হয়ে যায়৷

ফলতিতা বাজারের আড়তদার জনি হাওলাদার জানান, আড়তে গলদা চিংড়ি, রুই ও তেলাপিয়া এসেছে৷ চিংড়ির কেজি সাইজ অনুসারে ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত নিলাম উঠবে বলে তিনি আশা করছেন।

পাঁচ কেজি ওজনের রুই মাছের মণ ১০ হাজার ও ছোট সাইজ ৭ থেকে ৯ হাজার দাম উঠতে পারে। তেলাপিয়া ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হতে পারে।

bagerhat

খুলনা থেকে মাছ কিনতে আসা পাইকার হুমায়ুন বলেন, ফলতিতায় টাটকা মাছ পাই। তাছাড়া দামও মোটামুটি নাগালে থাকে। বড় রাস্তার সঙ্গে বাজার হওয়ায় পরিবহন সুবিধা পাই।

মাছের দাম কেমন—এ প্রশ্নে হুমায়ুন বলেন, দাম তুলনামূলকভাবে এখন একটু বেশি। উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ার কারণেই এ মূল্যবৃদ্ধি বলে জানান তিনি।

মৎস্য ব্যবসায়ী তালিম হোসেন বলেন, এখান থেকে মাছ কিনে ট্রাকে ঢাকায় পাঠাই। ঢাকার পাইকাররাও আসে কিনতে। পদ্মা সেতুর জন্য এই বাজারের বেচাকেনা আরও বেড়েছে। বাজার আরও বড় হচ্ছে।

bagerhat

ফলতিতা মাছ বাজারের আড়তদার কমিটির সভাপতি মো. পাপলু বলেন, ফলতিতা বাজার এই অঞ্চলের বড় মাছের বাজার। সাদা মাছ ও চিংড়ি বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া চিংড়ির রেণুও বিক্রি হয়। দৈনিক কয়েকশ মণ মাছ বিক্রি হয়। এখানে কোটি টাকা লেনদেন হয়। ভরা মৌসুমে ৪-৫ কোটি টাকার মাছও বিক্রি হয়। মূলত পরিবহন সুবিধা ও টাটকা মাছের জন্যই ফলতিতা বাজার ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষের কাছে প্রিয়। বাজারটি রফতানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতেও সহায়তা করে যাচ্ছে।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর