বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘ছবি এঁকে বিশ্বের কাছে দেশকে পরিচিত করতে চাই’

সাকলাইন যোবায়ের
প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২২, ০১:৪৩ পিএম

শেয়ার করুন:

‘ছবি এঁকে বিশ্বের কাছে দেশকে পরিচিত করতে চাই’
ছবি: ঢাকা মেইল

খুব ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকা ভীষণ পছন্দ তার। সেই থেকেই রঙে রঙে নির্মাণ করতেন নিজের জগত। পাখি, পাখির বাসা, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফল এঁকে মাকে দেখাতেন। তার রঙের খেলায় প্রাণ পেতো নানান দৃশ্য। দেশীয় চিত্রকলা, এদেশের মাটি, মানুষ, আকাশ, সব কিছুই ফুটে উঠতো তার চিত্রকর্মে। সেই ছোট ছেলেটি এক সময় বড় হলেন। তার রঙের তুলি আর চিন্তার জগতও বেশ প্রসারিত হলো। বাংলার গ্রামীণ জীবন যেমন তার ছবিতে প্রাণ পেল তেমনি শহুরে জীবনের জরা আর যৌবনও ফুলে উঠলো নীবিরভাবে।  

রিপনের ছবিতে আবহমান বাংলার মানুষের যাপিত জীবন, শৈশব, সংস্কৃতি, পেশা, উৎসব, গ্রামীণ জনপদ, গ্রামের বধূ, সারল্য, শ্রমজীবি ও মেহনতি মানুষ, বাংলার প্রকৃতি, ঋতু ফুটে ওঠে। এক কথায় বলতে গেলে— কী নেই যা তার তুলিতে ফুটে ওঠেনি। তার জীবনের থরে থরে কেবল রঙ আর রঙ। শিল্পের দুনিয়ায় তিনি এক স্বাতন্ত্র্য মানুষ।

বলছিলাম চিত্রশিল্পী মুজিবুর রহমান রিপনের কথা। তিনি বেড়ে উঠেছেন কুমিল্লায়, বাসা শহরের মোগলটুলিতে। বর্তমানে চারুপাঠশালা নামে একটি আর্ট একাডেমিতে শিল্প শিক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কিছু যৌথ প্রদর্শনীও রয়েছে গুণী এই শিল্পির।

ripon

রিপনের ছবিতে আবহমান বাংলার মানুষের যাপিত জীবন, শৈশব, সংস্কৃতি, পেশা, উৎসব, গ্রামীণ জনপদ, গ্রামের বধূ, সারল্য, শ্রমজীবি ও মেহনতি মানুষ, বাংলার প্রকৃতি, ঋতু ফুটে ওঠে। এক কথায় বলতে গেলে— কী নেই যা তার তুলিতে ফুটে ওঠেনি। তার জীবনের থরে থরে কেবল রঙ আর রঙ। শিল্পের দুনিয়ায় তিনি এক স্বাতন্ত্র্য মানুষ।

চিত্রশিল্পি মুজিবুর রহমান রিপন বলেন, ‘১৯৭২ সালে আওয়ার লেডী ফাতেমা গার্লস স্কুলে প্রথম শ্রেণি ভর্তি হই। ওই স্কুলের ব্রিটিশ শিক্ষিকা বারবারা খুব ভাল ছবি আঁকতেন। সেটা দেখে ছবি আকার প্রতি আগ্রহ জন্মায় আমার। ভাল ছবি আঁকার কারণে তিনি আমাকে পুরস্কার দিতেন। ইংল্যান্ডে গেলেই আমার জন্য রঙ-তুলি নিয়ে আসতেন। তার অনুপ্রেরণায় ছবি আকাঁর প্রতি আমার ঝোঁক বেড়ে যায়।’


বিজ্ঞাপন


গুণী এই শিল্পি আরও বলেন, ‘ক্লাস সিক্সে কুমিল্লা জিলা স্কুলে ভর্তি হই। জিলা স্কুলে আর্ট ক্লাসের তেমন গুরুত্ব ছিল না। তার পরেও ছবি আঁকা ছাড়িনি। এসএসসি পাসের পর ছবি আঁকার প্রতি আরও সিরিয়াস হয়ে উঠি। আমার বেশির ভাগ ছবি মানুষের রিয়েলস্টিক লাইফ নিয়ে। বেশিরভাগ ছবির বিষয় দেশের শ্রমিক শ্রেণি, জীবনযাত্রা ও জীবিকা নিয়ে। এদেশের গ্রামীণ জনপদ, প্রকৃতি ও সাধারণ মানুষের হাসি, কান্না, আনন্দ  বেদনা আমার চিত্রকলার অনুষঙ্গ। বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করলেও আমার প্রিয় জলরঙ। আমি চাই, আমার আঁকা ছবির মাধ্যমে এদেশকে বিশ্বের কাছে নতুন করে পরিচিত করতে। সে কারণে নিয়মিত আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে কাজ করছি।’

ripon

এই কারণে এই গুণী শিল্পি আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে বেশ কিছু যৌথ প্রদর্শনী করেছেন। এর মধ্যে— ফ্যাব্রিয়ানো অ্যাকুয়ারেলো আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে, ইতালি ২০১৮, অ্যাকুয়েরেলো আন্তর্জাতিক শিল্প প্রদর্শনীতে উরবিনো, ইতালি ২০১৯, প্রথম অলিম্পিয়ার্ট, IWS প্রদর্শনী ভারত ২০১৯। ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার কালার সোসাইটি আর্ট এক্সিবিশন ইন্দোনেশিয়া, ২০১৯ অন্যতম। এছাড়াও তার একাধিক প্রদর্শনী হয়েছে।

এদেশে চিত্রশিল্প কর্ম এখনও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি উল্লেখ করে মুজিবুর রহমান রিপন জানান, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে, এমনকি পাশের দেশ ভারতেও প্রতি ঘরে একটি করে চিত্রশিল্প থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে থাকে না। এর পেছনে ধর্মীয় চেতনা কাজ করে। চিত্র শিল্প বিকাশে এমন চেতনা বড় বাধা। এছাড়া দেশের বড় জেলাগুলোতে এখনো চিত্র শিল্প এক্সিভিশন গ্যালারি নেই। এসব কারণে এদেশে চিত্র শিল্পকর্ম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অনেকে আগ্রহ নিয়ে ছবি আঁকা শেখেন। কিন্তু ভবিষৎ নিশ্চয়তা নেই এজন্য অনেকে এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন।

ripon

চারু পাঠশালার শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা পিংকি এবং সায়মা ইসলাম বলেন,  ‘রিপন স্যারের ছবির ভাষা খুব সহজ সরল ও সুন্দর। সাধারণ মানুষও খুব সহজেই তার ছবির ভাষা বুঝতে পারে। আমরা চারু পাঠশালাতে তার কাছে ছবি আঁকা শিখছি। তিনি চমৎকারভাবে আমাদেরকে ছবি আঁকানো শেখাচ্ছেন।’

করোনাকালীন ২০২১ সালে উত্তম গুহ, মুজিবুর রহমান রিপন, সুলতান শাহরিয়ার, চন্দন দেব রায়সহ বেশ কয়েকজন মিলে পথিকৃৎ কুমিল্লা চারু শিল্পী পরিষদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। যেখানে প্রতিষ্ঠিত আর্ট শিল্পীদের পাশাপাশি যারা নবীন কিন্তু ভাল ছবি আঁকেন তাদেরকে এ সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

কুমিল্লা আর্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শিল্পী সুলতান শাহরিয়ার ঢাকা মেইলকে জানান, রিপন একজন দক্ষ রঙতুলির কারিগর। তার আঁকা জলরঙয়ের ছবি যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। বাংলাদেশের মানুষের কৃষ্টি কালচার এদেশের সংস্কৃতি তার আঁকার মাধ্যমে বিদেশে এই দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে। মুজিবুর রহমান রিপন একজন গুণী চিত্র শিল্পী। 

ripon

রিপনের চিত্রকর্ম সম্পর্কে বাংলাদেশ চলচিত্র শিল্প নির্দেশক উত্তম গুহ ঢাকা মেইলকে জানান, মজিবুর রহমান রিপন খুব ভাল ছবি আঁকেন। বিশেষ করে তার আঁকা জলরঙের ছবিগুলো অসাধারণ। বাংলার মানুষের জীবন তার তুলিতে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে ওঠে। এছাড়া তার ছবিগুলো নিয়মিত আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে প্রদর্শিত হয়। আমাদের দেশের সংস্কৃতি খুব সহজের তার ছবির মাধ্যমে বিদেশে পরিচিতি পায়। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের। রিপন শুধু কুমিল্লার গর্ব না, তিনি সারা দেশের গর্ব।

উল্লেখ্য, করোনাকালীন ২০২১ সালে উত্তম গুহ, মুজিবুর রহমান রিপন, সুলতান শাহরিয়ার, চন্দন দেব রায়সহ বেশ কয়েকজন মিলে পথিকৃৎ কুমিল্লা চারু শিল্পী পরিষদ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। যেখানে প্রতিষ্ঠিত আর্ট শিল্পীদের পাশাপাশি যারা নবীন কিন্তু ভাল ছবি আঁকেন তাদেরকে এ সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর