শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

পুলিশের ভয়ে ‍পুরুষশূন্য যে গ্রাম

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২২, ১০:২৫ এএম

শেয়ার করুন:

পুলিশের ভয়ে ‍পুরুষশূন্য যে গ্রাম
ছবি : ঢাকা মেইল

পুলিশের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরার আশাশুনির একটি গ্রাম। গণগ্রেফতার এড়াতে ওই এলাকায় ১৫ বছর থেকে ষাটোর্ধ বয়সী পুরুষরা এখন বাড়ি ছাড়া। তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গত তিন দিনে পুলিশের দায়ের করা মামলায় মোট ১৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া বাজার এলাকায় মাদক উদ্ধারকে কেন্দ্র করে সাদা পোশাক থাকা পুলিশের ওপরে হামলা ও মারপিটের ঘটনায় ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, তাদের গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।


বিজ্ঞাপন


গ্রেফতাররা হলেন—তেঁতুলিয়া গ্রামের রেজাউল গাজীর ছেলে সোহাগ গাজী, মৃত ইয়ার আলী ফকিরের ছেলে আকবর ফকির, ব্রাহ্মণ তেঁতুলিয়া গ্রামের মৃত আফাজ উদ্দীন মোড়ল ওরফে পাগলা মোড়লের ছেলে রইচ উদ্দিন মোড়ল ওরফে বড় খোকন, নূর ইসলাম গাজীর ছেলে ফারুক হোসেন, রেজাউল মোড়লের ছেলে কামরুল ইসলাম, এলাহী গাজীর ছেলে রেজাউল গাজী, তেঁতুলিয়া উত্তর পাড়া গ্রামের মৃত রজব আলী মোড়লের ছেলে রুস্তম আলী, মৃত শাহজাহান গাজীর ছেলে জাহাঙ্গীর গাজী, মৃত মোহাম্মদ আলী মোড়লের ছেলে হাবিবুর রহমান, মিত্র তেঁতুলিয়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম সানার ছেলে শাহিনুর ইসলাম। 

এর আগে তেঁতুলিয়া গ্রামের আবুল সরদারের ছেলে আজিজুল সরদার বাবু, মৃত ছবেদ আলী সরদারের ছেলে শহিদুল সরদার, মৃত গোলাম নবী সানার ছেলে মাসুম বিল্লাহ, রুহুল আমিন সানার ছেলে শফিকুল ইসলাম ও সিদ্দিক সরদারের ছেলে আশানুর সরদারকে গ্রেফতার করা হয়।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম (পিপিএম) নেতৃত্বে ইন্সপেক্টর তদন্ত জাহাঙ্গীর হোসেনসহ সাতক্ষীরার ডিবি পুলিশ ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার গ্রেফতারদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে গ্রেফতারদের পরিবারের সদস্যদেররা থানার সামনে ভিড় করছে। এসময় অনেককে বলতে শোনা গেছে, ‘আমাদের সন্তান বা স্বামী আদৌ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না বা ঘটনার সময় অন্য জায়গায় কর্মরত ছিল। অহেতুক তাদের গ্রেফতার করে হয়রানি করা হচ্ছে।’ 
স্থানীয়রা জানায়, পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে ওই গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রেফতারের ভয়ে কেউ রাতে বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেক কষ্টে আছেন গ্রামবাসী। তারা এব্যাপারে জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।


বিজ্ঞাপন


উল্লেখ্য, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গাজী নুর নবী সঙ্গীয় পুলিশ সদস্য মোহন কুমার সেনকে নিয়ে শুক্রবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মাদকদ্রব্য আছে এমন সন্দেহে তেঁতুলিয়া গ্রামের আব্দুর রউফ সরদারের ছেলে রাসেলকে তেঁতুলিয়া বাজার থেকে আটক করে। এসময় তাকে ও তার মোটরসাইকেল তল্লাশি করে কোনো মাদ্রকদ্রব্য পায়নি পুলিশ। তল্লাশির এক পর্যায় তার গাড়ির পাশে ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া গেছে বলে জানায় পুলিশ সদস্য মোহন কুমার সেন। এসময় রাসেল চিৎকার দিয়ে বলে, আমাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। আপনারা কে কোথায় আছেন আমাকে উদ্ধার করেন। তার চিৎকার শুনে চতুর্দিক থেকে লোকজন ছুটে এসে তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশের ওপরে অতর্কিত হামলা করে। এতে এসআই গাজী নুর নবী ও মোহন কুমার সেন আহত হন। এসময় রাসেল ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়। এক পর্যায় বাজারের লোকজন পুলিশকে পার্শ্ববর্তী একটি ঘরে নিয়ে আটকে রাখে।

এ খবর জানতে পেরে আশাশুনি থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে সাতক্ষীরা থেকে আসা অতিরিক্ত পুলিশসহ ডিবি পুলিশের একটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আটক থাকা পুলিশ সদস্যদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় এসআই গাজী নুর নবী বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরও ৪০-৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম (পিপিএম) জানান, মাদকদ্রব্য উদ্ধারকে কেন্দ্র করে তেঁতুলিয়া বাজারে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর