শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪, ঢাকা

ফারদিনের বুয়েটের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন থামিয়ে দিল ঘাতকেরা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর ২০২২, ০৭:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

ফারদিনের বুয়েটের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন থামিয়ে দিল ঘাতকেরা
ছবি : ঢাকা মেইল

দীর্ঘদিন থেকে ফারদিনের পরিবার নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে ঢাকায় থাকছেন। দুই চাচা আর এক ফুফু নারায়ণগঞ্জে থাকায় মাঝে মাঝে বেড়াতে আসতেন। কিন্তু এলাকার কারও সঙ্গে মিশতেন না ফারদিন। ফলে স্থানীয়দের কাছে অপরিচিতই রয়ে গেছেন তারা। মৃত্যুর সংবাদে পরিবার দাফনের জন্য দেলপাড়া কেন্দ্রীয় কবরস্থানে প্রস্তুতি নিলেও স্থানীয় মানুষ জানেনই না, তাদের এলাকার সন্তানকে নিয়েই সারা দেশে চলছে আলোচনা।

পরিবারের দাবি, গত ৪ নভেম্বর দুপুর ৩টায় বুয়েট আবাসিক হলে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেননি তিনি। পরদিন ৫ নভেম্বর তার পরীক্ষা ছিল। কিন্তু তিনি আর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। এরপরেই পরিবার থেকে রামপুরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। 


বিজ্ঞাপন


নিখোঁজের তিন দিন পর গতকাল সোমবার (৭ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৪টায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন বনানী ঘাট সংলগ্ন লক্ষ্মী নারায়ন কটন মিলের পেছনে ভাসমান অবস্থায় তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

>> আরও পড়ুন: ফারদিনের শরীর-মাথায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে: চিকিৎসক

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ফারদিন নূর পরশ বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৮তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। পৈতৃক বাড়ি নারায়নগঞ্জের ফতুল্লার দেলপাড়া নয়ামাটি এলাকায় হলেও থাকতেন ঢাকার কোনাপাড়ায়। বাবা কাজী নূর উদ্দিন ‘দা রিভারাইন’ নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক। ফারদিন তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। মেজো ভাই তাজিম একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং ছোট ভাই তামিম সম্প্রতি এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।

ছেলের মরদেহ নিয়ে মর্গের বাইরে কাঁদছিলেন ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন। তিনি বেশ কয়েকবার গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। 


বিজ্ঞাপন


নূর উদ্দিন নিজ ছেলের সম্পর্কে বলেন, বুয়েটে মেধা তালিকায় তৃতীয় হয়েছিল ফারদিন। সার্বক্ষণিক তার মাথায় ছিল পড়াশোনা আর বিতর্ক। সে কোনো রাজনৈতিক দল বা মতাদর্শের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। সম্প্রতি স্পেনে একটি আন্তর্জাতিক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ডিসেম্বরে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তার পাসপোর্ট ভিসাও প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সেই যাওয়ার আর হয়নি। আমার ফারদিন চেয়েছিল শিক্ষক হতে। ঘাতকেরা সেই স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার দাবি করে নূর উদ্দিন বলেন, আমি সাংবাদিকতা করার কারণে তেমন অর্থ ছিল না। ফারদিন প্রাইভেট পড়িয়ে পড়ালেখার খরচ চালাত। উদ্ভাসসহ কিছু কোচিং এ টিউশনি করাত। আমাদের পরিবারে আর্থিকভাবে সহায়তা করত আমার ছেলেটি। আমার ছেলেকে যারা হত্যা করল আমি তাদের বিচার দাবি করছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

>> আরও পড়ুন: পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বুয়েটছাত্র ফারদিনকে: দাবি পরিবারের

ফারদিনের ফুপাতো ভাই সাঈদ আল শাকিব কথায় কথায় জানান, ফারদিন নূর পরশ নিজ পরিবারের সদস্যদের কাছে পরশ নামে পরিচিত। অত্যন্ত নম্র ও শান্ত স্বভাবের ছিলেন তিনি। একই বয়সী আরও ভাই বোনেরা দুরন্তপনা করলেও ফারদিন ছিলেন একেবারেই ভিন্ন। পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল প্রবল। আর সেই কারণেই পুরো বংশের মধ্যে একমাত্র মেধাবী ছেলে হিসেবে তাকেই বিবেচনা করা হতো। চাচা, ফুফু এবং ভাই বোনের কাছেও আদরের পাত্র ছিলেন ফারদিন।

শাকিব বলেন, ফারদিন আমার এক বছরের বড়। পারিবারিক কারণে তারা কোনাপাড়ায় থাকত। মামার (নূর উদ্দিন) আর্থিক অবস্থা তত ভালো ছিল না। সাংবাদিকতা করার কারণে চাকরি থাকত তো থাকত না এমন পরিস্থিতি ছিল। এমনও দিন গেছে ফারদিন উপোস থেকেও পড়াশোনা করেছে। অথচ আমি আর্থিক দুর্বলতার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে চাকরিতে যুক্ত হয়েছি। ফারদিন কষ্ট করেছে বলেই বুয়েটে চান্স পেয়েছে। পুরো পরিবারের সবাই ফারদিনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখত। সেই ভাইটাই আজ আর নেই।

এদিকে নিহত ফারদিনের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ নৌপুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা বলেন, নিহত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের পকেট থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ, ও ব্লুটুথ ইয়ারফোন উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ঘটনায় ফারদিনের বাবা মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।

তবে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ফারদিনের মরদেহ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক শেখ ফরহাদ বলেন, বুয়েট ছাত্র ফারদিনের মাথার বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার বুকের ভেতরেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। দ্রুতই ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর