বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রূপের যাদু ছড়ায় যাদুকাটা

এ আর জুয়েল
প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০২২, ০৮:০২ এএম

শেয়ার করুন:

রূপের যাদু ছড়ায় যাদুকাটা
ছবি: ঢাকা মেইল

যাদুকাটা নদীর শান্ত জলে কিসের যেন মায়া। এই শান্ত নদীর উৎস কোথায়? দূরে তাকালেই চোখে পড়ে পাহাড়। একটি দুটি নয়, চার-চারটি। উঁচু, সবুজে মোড়া। মাথার ওপর আবছা কুয়াশা ওড়াউড়ি করছে। কখনো মেঘ দলছুট হয়ে একদল গড়াগড়ি খাচ্ছে সেই সবুজের ওপর। শীতে কুয়াশার জলে ধুয়ে মুছে পাহাড় যেন আরও সজীব-সতেজ হয়ে উঠছে। দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে নেমে এসেছে নদী। নাম যাদুকাটা। নদীর গভীরতা কম। যাদুকাটার স্বচ্ছ জলে নিচের বালুকণা পর্যন্ত দেখা যায়। আর এ জলেই নৌকা নিয়ে পাথর আর কয়লা তোলায় ব্যস্ত হাজার হাজার বারকি শ্রমিক।

দেশের উওরপূর্বাঞ্চলের জেলা সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পাহাড় ঘেষে অবস্থিত বারিক টিলা ও পাশ দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি নদী যাদুকাটা। যেন নৈর্সগিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় এক স্থান। সুনামগঞ্জ জেলার উওর পশ্চিমে এবং তাহিরপুর উপজেলা থেকে উওরে ভারত সীমান্তে অবস্থিত এ বারেকটিলা ও যাদুকাটা নদী। বর্ষায় পাহাড়ি নদী যাদুকাটার বুকে স্রোতধারা আর শীতে শুকিয়ে যাওয়া যাদুকাটার বুক জুড়ে ধূ-ধূ বালুচর। পাশেই ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সারি-সারি উঁচু নীচু খাসিয়া পাহাড় ও বাংলাদেশের বারিক টিলার সবুজ বনায়ন এবং মাটিয়া পাহাড়।


বিজ্ঞাপন


jadukata

প্রতিনিয়ত ছুটে আসা লোকজনের দৃষ্টি কাড়ে এ প্রকৃতির এ রুপ। এ দুই নান্দনিক নৈর্সগিকতার পাশাপাশি তাহিরপুরের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে যাদুকাটা ও বারিক টিলার পূর্ব প্রান্তে ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম সফর সঙ্গী শাহ আরফিনের আস্তানা। এছাড়াও যাদুকাটা নদীতীরে লাউড় নবগ্রাম শ্রী শ্রী অধৈত প্রভুর মন্দির ও পনাতীর্থ ধাম, পশ্চিমতীরে ইস্কন মন্দির, বোত্তাশাহর মাজার, বড়ছড়া কয়লা ও চুনাপাথর শুল্কস্টেশন, ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প ।

ছোট ছোট নৌকা ঢেউ তুলে ছুটছে এদিক-ওদিক। নদীর এক পাশে বিস্তীর্ণ বালুচর, অন্য পাশে সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। একদা এই যাদুকাটা নদীতীরেই ছিল প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী। এখন রাজ্য নেই, নেই রাজধানীও। তবে যাদুকাটা নদীর উৎসমুখ, নদীর চারপাশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অবশ্যই মুগ্ধ হওয়ার মতো।

jadukata


বিজ্ঞাপন


এলাকার নামের সঙ্গে রাজ্যের নামটিও জড়িয়ে আছে,‘লাউড়েরগড়’। নগ্ন পায়ে বালুচরে হাঁটা বা হাঁটুজলে নেমে ছবি তোলা দুটিই ভাল লাগে। পায়ের নিচে যাদুকাটার ঠান্ডা জল আর মাথার ওপরে পাহাড়। সেই পাহাড়ের পিঠ থেকে বের হয়ে বাংলাদেশে এসেছে যাদুকাটা নদী। যেন নদীর উৎসমুখে দুই পাশ থেকে পাহাড় ঝুলে আছে।

jadukata

পেছনে আরও একটি পাহাড় উঁকি দিচ্ছে। সবকিছু দেখতে ছবির মতো। এ নদীর পশ্চিমে বারেকটিলা আর পুবে শাহ আরেফিনের (রহ.) আস্তানা ও লাউড়েরগড়। এ নদীর আদি নাম রেণুকা। কথিত আছে, নদীতীরবর্তী কোনো গ্রামের এক বধূ মাছ মনে করে নিজের যাদু নামের পুত্রকে কেটে ফেলেছিলেন। আর তখন থেকেই এর নামকরণ হয় যাদুকাটা। শ্রী অদ্বৈত মহাপ্রভুর ইচ্ছানুসারে এই নদীতে পৃথিবীর সপ্তবারির জল একত্রিত হওয়ার পর থেকে এর নাম হয় ‘পনাতীর্থ’। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এখানে দোল পূর্ণিমার রাতে সপ্তবারির জল একত্রিত হয়। আর এই বিশ্বাসেই প্রতি বছর চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে যাদুকাটায় স্নান করার আশায় দেশ-বিদেশের পুণ্যার্থীরা এসে জড়ো হন নদীতীরে অদ্বৈতের ‘নবগ্রামে’। একে কেন্দ্র করে নদীতীরে অনুষ্ঠিত হয় বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সবচেয়ে বড় মেলা ‘বারুণি মেলা’।

jadukata

লাউড়েরগড়ের দক্ষিণ মাথায় নদী তীরে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান। প্রতিবছর চৈত্র মাসে প্রায় একই সময়ে শাহ আরেফিন (রহ.) আস্তানায় ওরস ও যাদুকাটা নদীতীরে পুণ্যস্নান হয়। দুই উৎসব ঘিরে তখন নদীতীরে হিন্দু-মুসলমানের মিলনমেলা বসে। হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর