দূর থেকে দেখতে সাদা বকের মতো মনে হলেও চিকন দুটি পা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পাখিটির নাম শামুকখোল। লম্বা দু’টি ঠোঁট দিয়ে শামুক খুঁজে বের করে খায় বলে এর নাম শামুকখোল। তবে এর ইংরেজী নাম এশিয়ান ওপেন বিল, বৈজ্ঞানিক নাম এনাসটমাস ওসিটেন্স। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে এসব পাখি অনুকূল পরিবেশ আর নিরাপদ স্থানে ঝাঁকে ঝাঁকে বাস করতে পছন্দ করে।
দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই পাখিটির দেখা মিলছে জামালপুর পৌর এলাকার মাছিমপুরে। স্থানীয় নূরুল হক মাস্টারের বাড়িতে আবাস গড়েছে এই অতিথি পাখিটি। প্রতি বছর শীতের শুরুতেই ঝাঁকে ঝাঁকে চলে আসে হাজারখানেক শামুকখোল পাখি। পাখির কলকাকলিতেই ঘুম ভাঙে এই গ্রামের মানুষের। খুব সকালে দল বেঁধে বেরিয়ে যায় পাখিগুলো।
বিজ্ঞাপন
সারাদিন ঘুরে, ফিরে, খেয়ে-দেয়ে সন্ধ্যার আগেই পাখিগুলো ফিরে আসে— আশ্রয় নেয় নুরুল মাস্টারের বাড়ির শিমুল ও কড়ই গাছের ডালে। বাড়ির লোকজন পরম মমতায় নিরাপদ আশ্রয় করে দেয় দূর থেকে আসা এসব পাখিদের। এদিকে পাখিগুলো দেখতে নুরুল মাস্টারের বাড়িতে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। সেখানে নেই কোনও পাখি শিকারি, নেই স্থানীয়দের শ্যেন দৃষ্টি। অনুকূল পরিবেশ পেয়ে প্রতি বছর বারবারই ফিরে আসে পাখির দল, থাকে একটানা প্রায় ৬ থেকে ৮ মাস।
নূরুল হক মাস্টারের ছেলে শিমুল মিয়া ঢাকা মেইলকে বলেন, “প্রায় ২০ বছর আগে হঠাৎই এক শীতের সকালে পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙলে বাইরে বের হই আমরা। তখন দেখতে পাই অসংখ্য পাখি আমাদের শিমুল আর কড়াই গাছে আশ্রয় নিয়েছে। প্রথমে দেখতে বকের মতো মনে হলেও পরে আমরা খেয়াল করি পাখিগুলো বকের চেয়ে একটু বড়। আর পাখিগুলো ছিল কালো আর ধূসর রংয়ের। এরপর থেকেই এই গাছেই আশ্রয় নেয় তারা। এমনিতে পাখিগুলো গাছেই থাকে। তবে ঝড় বৃষ্টির দিনে মানুষের বাড়ি-ঘরে আশ্রয় নেয়। তখন এসব পাখিদের চিড়া-মুড়ি খেতে দেন তারা।”
ওই গ্রামের বাসিন্দা গোলাম রাব্বী ঢাকা মেইলকে বলেন, “শীতকালে এ এলাকার আলো বাতাসের সঙ্গে এই পাখিগুলোর রয়েছে এক ধরনের আত্মিক সম্পর্ক। পাখিগুলো এই গাছে আসার পর অনেকেই এই পাখি শিকার করতে আসত। আমরা গ্রামবাসীরা মিলে এই শিকারীদের বাধা দিই। এর ফলে পাখিগুলো নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে এখানে বসবাস করছে।”
কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই পাখিগুলো ধান ক্ষেতে থাকা শামুক আর পোকা খেয়ে থাকে। এর ফলে আমাদের ক্ষেতেরও উপকার হয়। এছাড়া পাখির বর্জ্যে সারের মতো কাজ করে। এক হিসাবে আমাদের উপকারই হয়েছে। ধান ক্ষেত পোকা মাকড় থেকে রক্ষা পাচ্ছে আর পাখির বর্জ্যে সারও হচ্ছে।”
বিজ্ঞাপন
জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জাহাঙ্গীর কবীর ঢাকা মেইলকে বলেন, “শামুকখোল পাখি দলবদ্ধ এবং খাবারের প্রাচুর্য থাকলে অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে থাকতে পছন্দ করে। এই পাখির ঠোঁট অনেকটাই যাঁতাকলের মতো কাজ করায় শক্ত শামুকগুলো তারা অনায়াশে গলধকরণ করতে পারে। আমরা যদি এই পাখিটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করি তাহলে এটি আমাদের জীববৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
এএ

