‘ইচ্ছে করে ডেকে বলি, ওগো কাশের মেয়ে- আজকে আমার চোখ জুড়ালো তোমার দেখা পেয়ে, তোমার হাতে বন্দী আমার ভালোবাসার কাশ, তাইতো আমি এই শরতে তোমার কৃতদাস। কবি নির্মলেন্দু গুণের লেখা কাশফুলের কাব্য’র এই কথাগুলোই মনে ভাসে কাশফুলের সৌন্দর্য দেখে। শেরপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে ছেঁয়ে গেছে কাশফুল। বিশেষ করে প্রতিটা নদীর পাড়ে কাশফুল যেনো একেকটা সাম্রাজ্য। তাই এসব জায়গায় প্রতিদিনই ভিড় করছে প্রকৃতিপ্রেমীরা। কাশবনে ঘুরতে এসে আনন্দঘন মুহুর্তগুলো করছেন ক্যামেরাবন্দী।
সবেতো এই বর্ষা গেলো শরৎ এলো মাত্র, এরই মধ্যে শুভ্র কাশে ভরলো তোমার গাত্র। শরৎতের শুভ্রতার অনন্য প্রতীক কাশফুল।
বিজ্ঞাপন

শেরপুর শহরের শেরীপাড়া, বাটারাঘাট, কসবা কাঠগড়, মোবারকপুরের চিথলিয়া সড়ক, সদরের হরিণধরা, শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়ার মৃগী নদী, নকলা উপজেলা নারায়নখোলা ও বক্ষপুত্র নদীর পাড়সহ বিভিন্ন নদ-নদীর আশপাশে ছেঁয়ে গেছে কাশফুলে। নীল আকাশের নিচে এ যেনো সাদা মেঘের ভেলা। তাইতো শহরের কোলাহল থেকে একটু মনকে জুড়াতে প্রিয়জনকে নিয়ে প্রতিদিন ভিড় করছে এসব জায়গায়। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে থাকে বাড়তি সমাগম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিকালের ঝিলিমিলি রৌদ্দুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন কাশবনে বেড়াতে এসেছেন। নবদম্পতি, কপোত-কপোতী, আবার কেউবা পরিবারে আসছেন ঘুরতে।

বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা বলছেন, প্রতি বছর কাশফুল ফুটলেও এবার বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এসব কাশবন কিছুদিন পর বিক্রি করে বাড়তি টাকাও পাবেন তারা।
বাটারাঘাটের সুমন মিয়া বলেন, এখানে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট আছে। রেস্টুরেন্টে যারা আসে, একফাঁকে কাশবনেও ঘুরতে আসেন তারা। আমরাও তাদেরকে সহায়তা করি।
এক ঘেয়েমি নাগরিক জীবনে শরৎতের এই শুভ্র কাশফুল প্রশান্তি বয়ে এনেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে-প্রাণে। তাই কাশবনে ঘুরতে এসে আনন্দঘন মুহুর্তগুলো করছেন ক্যামেরা বন্দী।

ঘুরতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী সাইমুম জাহান লিজা বলেন, আমরা আসলেও শহরে পরিবেশে এখন এই কাশফুল দেখতে পাই না। এবার অনেক কাশফুল হইছে শহরের বিভিন্ন জায়গায়। আমরা বান্ধবীরা মিলা সবগুলা জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেখছি। আর মনকে প্রশান্তি দিচ্ছি।
কানিজ সুলতানা ইমু বলেন, আসলেও এই কাশফুল গ্রামে বেশি দেখা যায়। কিন্তু এখন গ্রামের পাশাপাশি শহরেও হচ্ছে। এতে আমাদের বিনোদনের জায়গাও সৃষ্টি হয়েছে। আমি মাঝেমধ্যেই স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে আসি।
কলেজ শিক্ষার্থী শোয়াইব রহমান বলেন, আমরা শুধু শহর নয় বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে ও নদীর পাড়ে যে কাশফুল ফুটেছে তা দেখেছি। আমার কাছে আসলেও নকলার নারায়নখোলার কাশফুলের যে সমারোহ হয়েছে সেটা সবচেয়ে ভালো লেগেছে। এবং সেখানের মত কাশফুল আসলে আর কোন জায়গায় হবে কিনা জানি না।
ইশতিয়াক আহম্মেদ জনি বলেন, আমার শখ আসলে ঘুরাঘুরি করা। আমি ঘুরতে ভালোবাসি। আমি নকলা নারায়নখোলার যে কাশবন দেখেছি তা আমার প্রথম দেখা এত বড় বাগান। এইরকম করে কাশফুল হয়েছে আগে কখনো দেখি নাই। খুব ভালো লাগছে কাশফুল দেখতে।
সাজিদুর রহমান সাজিব বলেন, আমি আগে শেরপুরে এমন কাশফুল হয়েছে দেখি নাই। এবার খুব ভালো লাগছে। অবসর সময়ে কাশবনে বন্ধু- বান্ধব নিয়ে ছবি তুলতে যাচ্ছি।
শহরের সজবরখিলার বাসিন্দা সাইয়েদ্যা সুমাইয়া বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাশফুলের ছবি দেখে শহরের বাইরে থেকে একটু নিরিবিলি সময় পার করবার জন্য স্বামী সন্তান নিয়ে কসবায় এসেছি। খুবই ভালো লাগছে।

সোশ্যাল একটিভিস্ট শবনম নূরী ঢাকা মেইলকে বলেন, আসলে শহরের কোলাহলময় জীবন থেকে একটু আলাদা সময় কাটাতে কাশবনে আসছি। এতো কাশফুল ফুটেছে এবার ভাবাই যায় না। সেল্ফি তুললাম, ফুসকা খেলাম। স্বামী-বাচ্চা নিয়ে খুব ভালো সময় কাটাচ্ছি।
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক সাবিহা জামান শাপলা ঢাকা মেইলকে বলেন, ষড়ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। গ্রীষ্মের মাঠ-ঘাট ফাটা প্রখর তাপ, বর্ষার নূপুর শব্দের অবিরল বারিধারা, শরতের স্নিগ্ধতা ও স্বচ্ছতা পেরিয়ে আসে ঋতুরাণী হেমন্ত। নবান্নের এ ঋতুর হাত ধরেই আসে শীতকাল। মানবসৃষ্ট অসচেতন কর্মকাণ্ডের ফলে বৈরী আচরণ করে জলবায়ু। প্রকৃতি তার চিরায়ত রূপ বদলাচ্ছে। তবুও এসময়ে কাশফুলের রূপ দেখলে মন ভরে যায়।
প্রতিনিধি/একেবি

