রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

৩২৪ বছরের ঐতিহ্য জামালপুরের দয়াময়ী মন্দির

আলমগীর হোসেন
প্রকাশিত: ০৭ অক্টোবর ২০২২, ০১:০৮ পিএম

শেয়ার করুন:

৩২৪ বছরের ঐতিহ্য জামালপুরের দয়াময়ী মন্দির
ছবি : ঢাকা মেইল

জামালপুর পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র জিরো পয়েন্টে অবস্থিত সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীদের কারুকার্যপূর্ণ ধর্মীয় দর্শনীয় অন্যতম প্রতিষ্ঠান শ্রী শ্রী রীঁ দয়াময়ী মন্দির। আজ থেকে তিনশ একুশ বছরের পুরানো এ মন্দির। ১৬৯৮ সালে এ মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। 

মুর্শিদকুলি খাঁর সময়ে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন জায়গিরদার শ্রী কৃষ্ণ রায় চৌধুরী। তিনি ছিলেন তৎকালীন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানার অন্তর্গত গৌরিপুর রামগোপালপুর জমিদারের জাফরশাহী পরগনার জায়গীরদার। পরবর্তীতে মন্দিরটি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করেন তৎকালীন রাণী শ্রীমতি নারায়ণী রায় চৌধুরী। 


বিজ্ঞাপন


jamalpur

জনশ্রুতি রয়েছে জায়গীরদার শ্রী কৃষ্ণ রায় চৌধুরী ঔরশজাত সন্তান রাজা যোগেন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর সহধর্মীণি রাধারঙ্গিনী দেবী চৌধুরানী। তিনি স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়ে স্বামীকে অনুরোধ করে পরবর্তি মন্দিরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে শ্রী শ্রী রীঁ দয়াময়ী মন্দিরের নাম করণ করেন।

হাজারও ইতিহাসের স্বাক্ষী কারুকার্যপূর্ণ মন্দিরটিতে প্রতিদিনই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূজা অর্চনা করে থাকেন। এছাড়াও দূর্গাপূজার সময় লাখ লাখ ভক্তের সমাগমে মুখরিত হয়ে থাকে মন্দিরটিতে। আবার চৈত্রমাসে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান উৎসবের পর মন্দির ও তার আশপাশে চলে ৪ দিনব্যাপী মেলা। গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোও এখানে নানাভাবে উদযাপিত হয়। 

এই মন্দিরটির পাশেই রয়েছে শিবমন্দির, কালিমন্দির, নাটমন্দির ও মনসা দেবীর মন্দির। আর মন্দিরের পাশের প্রধান সড়কের সঙ্গে লাগানো আছে শ্রী শ্রী রাধামোহন জিউ মন্দির। রাধামোহন জিউ মন্দিরটিও প্রায় ১২০ বছরের পুরনো। এসব মন্দিরে দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন কারুকার্য পুর্ন চিত্রকর্ম রয়েছে। যা দেখলে এখনো চোখ ফেরানো যায় না।


বিজ্ঞাপন


jamalpur

মন্দির কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দাসের সাথে কথা হয় ঢাকা মেইলের প্রতিবেদকের। 

তিনি বলেন, ‘শ্রী শ্রী রীঁ (ঈশ্বর) দয়াময়ী মহাদেব্যা মাতার জাগ্রত শক্তির মাহাত্বের নানা অলৌকিক কাহিনী শুধু বাংলাদেশে নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত রয়েছে। তাই প্রতি বছর পশ্চিমবঙ্গের ভক্তরা ছুটে আসেন জামালপুরে। ভক্তরা এ মন্দিরে এসে ছাগ শিশু (পাঠা) ও অন্যান্য আনুসাঙ্গীক উপচার মানত করে মন্দিরে পুজা অর্চনার মধ্যে দিয়ে সন্তুষ্টি চিত্তে বাড়ি ফিরে যান।’ 

তিনি আরও জানান, ১৯৯৫ সালের পর মন্দিরের অভূতপূর্বক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। শ্রী শ্রী রীঁ দয়াময়ী মন্দির, অন্নপর্ণা শ্রী শ্রী শিব বিগ্রহ, নাট মন্দির, ভোগ ঘরসহ মন্দির কমপ্লেক্স দ্বিতল ভবনের ২৭টি কক্ষ পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে। 

শ্রী শ্রী রী দয়াময়ী মন্দিরের পুরোহিত নিরঞ্জন ভাদূড়ী বলেন, ‘আমাদের এই মন্দিরে অন্যান্য মন্দিরের মতো সব পূজাই হয়। তবে একটি বিশেষত্ব হচ্ছে। এই মন্দিরে দেবী অন্নপূর্ণার একটি মন্দির রয়েছে। দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির সব জায়গায় নেই। পুরো বাংলাদেশে হয়তো ৫ থেকে ৬টি জায়গায় দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই মন্দির দেখতে অনেকেই আসে। অনেকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে। আমরা সেসবের উত্তর দেই।  দর্শনার্থীদের সাথে কথা বলে ভালোই লাগে।’

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর