শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫, ঢাকা

ছাত্রলীগের এক পক্ষের দাবিতেই কি কুবি’র হল সিলগালা!

জুবায়ের রহমান
প্রকাশিত: ০৫ অক্টোবর ২০২২, ০৭:৫৮ পিএম

শেয়ার করুন:

loading/img

সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তি নিয়ে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়লে বহিরাগতসহ মোটরবাইক নিয়ে ক্যাম্পাস মহড়া দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক রেজা-ই-এলাহীদের অনুসারীরা। এসময় ককটেল বিস্ফোরণ ও ফাঁকাগুলি ছুড়েন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ভাঙচুর করেন তারা। 

এসময় স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর ফজল খানের ছেলে ইকবাল খানের সাথে প্রক্টরিয়াল বডির বাদানুবাদ হলে সকল আবাসিক হল বন্ধের দাবি করেন তিনি। লাঠিহাতে প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে বলেন, ‘হল বন্ধ করেন, না হয় আমরা যাচ্ছি (হলের ভেতরে)।’ তখন একই দাবি করেন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালে নিহত খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাসসহ আরও কয়েকজন স্থানীয় বহিরাগত। পরবর্তীতে তারা প্রশাসন ও পুলিশের উপস্থিতিতে ক্যাম্পাস থেকে চলে যান। 


বিজ্ঞাপন


পরে বর্তমান কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজের অনুসারীরা দেশীয় অস্ত্রসহ ক্যাম্পাস মহড়া দেয় এবং কেন বহিরাগতদের আটক করা হয়নি এই নিয়ে প্রশাসনের সাথে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। ঘটনার পরের দিন ক্যাম্পাসের এমন অস্থিতিশীল অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে আবাসিক হলসমূহ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে বহিরাগতদের ওই পক্ষকে সুবিধা দিতেই কি প্রশাসন সিলগালার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা?

ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস ও তার অনুসারীদের দাবি, বহিরাগতদের সুবিধা দিতেই প্রশাসন তড়িঘড়ি হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ওই অংশের নেতা রেজা-ই-এলাহী বলেন, কমিটি বিলুপ্ত করায় অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম. মোস্তফা কামাল এমপি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিছিল করেছেন তাঁরা। প্রশাসনের ইচ্ছায় আবাসিক হলসমূহ বন্ধ করা হয়েছে। 

ইলিয়াসের অনুসারীদের দাবি, ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে রেজার অনুসারীদেরকে আবাসিক হল দখলের সুযোগ করে দেওয়ার পাঁয়তারা করেছে প্রশাসন। সেই সাথে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে অছাত্র ও বহিরাগতদের আনতেই অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। আতঙ্কে ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী সকল মালপত্র নিয়ে হল ছেড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বলেন, প্রশাসনের সাথে বহিরাগতদের আঁতাত থাকার কারণে ও তাদেরকে বাড়তি সুবিধা দিতেই আবাসিক হল সিলগালা করে রাখা হয়েছে। যারা ক্যাম্পাসে গুলি ছুঁড়ল, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাল তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো প্রকার ব্যবস্থা না নিয়ে ক্যাম্পাস থেকে নিরাপদে বের হয়ে যেতে সহযোগিতা করল। যারা ক্যাম্পাসে আতঙ্ক তৈরি করল, তাদের দাবিই প্রশাসন মেনে নিল।


বিজ্ঞাপন


সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ নাসির হুসেইন বহিরাগতদের মোটরবাইকের ব্যবস্থা করে দেন আদিনা মোড় থেকে এবং প্রক্টরের সামনে দিয়েই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ককটেল ও অস্ত্রসহ প্রবেশ করে। তারাই (শিক্ষকরা) শিখিয়ে দেন, যেন হল বন্ধ করার কথা উঠে। হল সিলগালার পরেরদিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের মসজিদের দিকে তাঁরা (শিক্ষক ও রেজার অনুসারীরা) বসে আড্ডা দিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, প্রতিপক্ষকে তারা এখানে সুযোগ করে দিতে চায়। তাদেরকে (রেজার অনুসারীদের) চাকরি দেওয়ার কথাও নাসির স্যারের মাধ্যমে বলানো হয়েছে। রেজা বললে তারা (অনুসারীরা) বিশ্বাস করবে না, তাই।

তবে সহযোগিতার বিষয়টি অস্বীকার করে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ নাসির হুসেইন বলেন, অসুস্থতার কারণে বিগত কয়েকদিন যাবত ঘর থেকেই বের হতে পারিনি। প্রশাসনেরও কোনো পদ-পদবি নেই যে, আমি কাউকে চাকরি দেওয়ার কথা বলতে পারি। যারা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে, তাদের বিরুদ্ধে যদি এমন অভিযোগ থাকত, তাহলে একটা বিষয় ছিল।

এদিকে হল বন্ধ করার দাবির বিষয়ে একাধিকবার ইকবাল খানকে কল করলেও মোবাইলটি  বন্ধ পাওয়া যায়। তবে খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি বিপ্লব চন্দ্র দাস দাবি করেন, শোডাউনের দিনে প্রশাসনের কাছে আবাসিক হল বন্ধের বিষয়ে কোনো দাবি করা হয়নি। প্রশাসন সবার কাছেই সমান। প্রশাসন মনে করেছে হল বন্ধ করে দিলে ক্যাম্পাস শান্ত থাকবে, সেজন্য তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

একই কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম. আবদুল মঈন ও প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তারা না জেনেই মন্তব্য করেছে। তবে প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই আবাসিক হল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

ভিসি বলেন, প্রশাসন কারও পক্ষ নেয় না। যাদের জীবন নিয়ে শংকা থাকে তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই হল সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সবাই জানিয়েছে এখানে শিক্ষার্থীদের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। তাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন