শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

ক্যান্সারে আক্রান্ত ছেলেকে বাঁচাতে দিনমজুর বাবার আকুতি

মো: জাহিদ হাসান মিলু
প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০২২, ০৬:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

ক্যান্সারে আক্রান্ত ছেলেকে বাঁচাতে দিনমজুর বাবার আকুতি

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধনতলা মন্ডলপাড়া গ্রামের দিন মজুর মো. জহিরুল ইসলামের ছেলে মো. সৈকত আলী জয়। প্রায় দুই মাস আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মো. সৈকত আলী জয়ের ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরে তার। দারিদ্রতার জন্য জয়ের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার বাবা-মা। পরিবারের এই কনিষ্ঠ সন্তানকে বাঁচাতে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে বাবা-মা আকুতি জানিয়েছেন।

২০০০ সালে ধনতলা মন্ডলপাড়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন সারজিনা আক্তার। বিয়ের এক বছরের মধ্যে তাদের সংসারে আসে নতুন সদস্য কন্যা সন্তান। জহিরুল ইসলাম দিন মজুরি দিয়ে সংসার চালালেও দরিদ্রতার মধ্যেও কন্যা সন্তানকে নিয়ে বেশ হাসি খুশি জীবন যাপন করছিল তারা। কয়েক বছর পরে তাদের সংসারে আবার আসে এক কন্যা সন্তান। এর পর ২০০৮ সালের শেষের দিকে তাদের পরিবারে জন্ম নেয় এক ছেলে সন্তান। নাম রাখা হয় মো. সৈকত আলী জয়। মোট ৫ সদস্যের সংসার তাদের ভালই চলছিল। এর মধ্যে বড় হতে থাকে তাদের দুই কন্যা ও এক ছেলে। তাদেরকে ভর্তি করান স্থানীয় বিদ্যালয়ে।


বিজ্ঞাপন


জানা যায়, কিছু দিন আগে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন জহিরুল ইসলাম। আর দ্বিতীয় মেয়ে জুঁই আক্তার ধনতলা উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। তাদের কনিষ্ঠ পুত্র সন্তান মো. সৈকত আলী জয়। জয়ের বয়স ১৪ বছর। সেও ধনতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। মেধাবী ছাত্র হিসেবেও এলাকায় তার পরিচিতি আছে। তার ক্লাশ রোল তিন।

গত ছয় মাস আগে বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর পরই হঠাৎ করে জয়ের দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়। তখন জয়কে নিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন তার পরিবার। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ি কিছু দিন চিকিৎসা করেও কোনো ফল না পাওয়ায় আবার  চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে সেই চিকিৎসক তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন। সেখানকার চিকিৎসক আবার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে পরিক্ষা নিরীক্ষা করে চলতি বছরের গত ১৪ই আগস্টে ধরা পরে জয়ের ব্লাড ক্যান্সার।

গত ছয় মাস ধরে ছেলের রোগ নির্ণয় করাতেই পুরো পরিবারটি নি:স্ব হয়ে পড়েন। বলতে গেলে এখন বসত ভিটা ছাড়া সেই পরিবারের কিছুই নেই। তাই এখনো সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তারা।

শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রক্ত দিতে এলে জয়ের বাবার সাথে কথা হয় ঢাকা মেইলের প্রতিবেদকের। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে ঢাকা মেইলকে জানান, গত ছয় মাস আগে দাঁতের মাড়ি ফুলে ব্যাথা হলে জয়কে ঠাকুরগাঁওয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে রংপুর মেডিকেলে নিয়ে যাই। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে এনে পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে জয়ের লিউকেমিয়া ক্যান্সার ধরা পরে। ক্যান্সারের চিকিৎসা করতে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানান চিকিৎসকরা। এই ছয় মাসে ছেলের রোগ নির্ণয় করতেই সয়-সম্বল বলতে আবাদি ১২ শতক জমি ছিল তাও শেষ করে ফেলেছি। এখন আমি নিঃস্ব। অথচ ছেলের চিকিৎসা এখনো শুরুই করতে পারিনি। এখন মাসে প্রায় ৪-৫ ব্যাগ রক্ত দিতে হচ্ছে জয়ের শরীরে। তাই আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সরকার ও সমাজের বিত্তশালীদের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চাচ্ছি। সাহায্য সহযোগিতা পেলে হয়তো আমার ছেলেটা সুস্থ্য হয়ে উঠবে, আগের মতো খেলাধুলা করবে ও স্কুলে যেতে পারবে।


বিজ্ঞাপন


need help
বাবা-মার মাঝখানে বসা মো. সৈকত আলী জয়

হাসপাতালের বেডে থাকা সৈকত আলী জয় জানে না সে কোন রোগে আক্রান্ত। তার সমস্যার কথা জানতে চাইলে ঢাকা মেইলকে জয় বলেন, ‘আমার শরীরে রক্ত থাকে না, জ্বর আসে, মাথা ঘুরে ও বমি বমি লাগে। আমার বাবার টাকা নেই। তাই আমার চিকিৎসা করাতে পারছে না। আমি সুস্থ হতে চাই ও সুস্থ হয়ে পড়াশোনা করে আমি শিক্ষক হবো। আশেপাশে কোনো ধনবান ব্যক্তি থাকলে আমাকে সহযোগিতা করুন।

সৈকত আলী জয়ের পাশে বসা তার মা সারজিনা। তার দিকে তাকানো মাত্রই তিনি হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলেন। বলেন, আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। আমার ছেলেকে বাঁচাতে দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন।

স্থানীয় আবু রাসেল নামে এক ব্যাক্তি বলেন, ‘জয় অনেক মেধাবি ছাত্র। সে হঠাৎ করে ক্যান্সারে আক্রান্ত। তার বাবা একজন দিন মজুর। বসত ভিটার পাশাপাশি তার বাবার একটু আবাদি জমি ছিল কিন্তু ছেলের চিকিৎসার জন্য সেটুকুও বিক্রি করে শেষ করে ফেলেছে। বলা চলে তার বাবা পথে নেমে গেছে। তার বসত ভিটা ছাড়া এখন আর কিছুই নেই। যদি সকলে তার ছেলের চিকিৎসার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে হয়তো তার ছেলে সুস্থ হয়ে উঠবে ও তার পরিবারের মুখে হাসি ফুটবে।
 
জয়ের চাচাতো ভাগিনা রকি জানান, ‘আমি শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি যে জয় ক্যান্সারের মতো বড় রোগে আক্রান্ত। যখন আমি রির্পোট গুলো দেখি তখন বিশ্বাস হয় যে সে আসলে ক্যান্সারে আক্রান্ত। এখন দ্রুত তার চিকিৎসা করা প্রয়োজন। তাই যে যতটুকু পারেন আর্থিক সহযোগিতা করুন। চিকিৎসা করলে হয়তো সে সুস্থ হয়ে আবার তার বাবা-মায়ের কোলে ফিরতে পারবে।,

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুল রহমান ঢাকা মেইলকে জানান, ঢাকা মেডিকেলের এক রির্পোটে জয়ের লিউকেমিয়া অর্থাৎ  ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরে। এই রোগে শরীরের রক্ত কণিকা গুলো কমে যায়। তবে হতাশ হওয়ার কিছুই নেই বর্তমানে এই রোগের চিকিৎসা হয়। অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব তার চিকিৎসা শুরু করা। তাহলেই হয়তো সে সুস্থ হয়ে উঠবে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর