শারদীয় দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীতে গত বছর কুমিল্লা নগরের নানুয়াদিঘির উত্তর পাড়ের পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় পূজা বন্ধ হয়ে যায়। এতে কান্নায় ভেঙে পড়ে এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
এবার প্রশাসনের অভয়ে একই স্থানে পূজা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, নানুয়াদিঘির উত্তর পাড়ে ঘাটলা ঘিরে সড়কের গা ঘেঁষেই স্থানীয় দর্পণ সংঘের উদ্যোগে পূজামণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার পূজামণ্ডপ আকারে ছোট। তখন পর্যন্ত প্রতিমা বসানো হয়নি। প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে অন্যস্থানে। সেখান থেকে এনে প্রতিমা বসানো হবে। দিঘির উত্তর ও পশ্চিম পাড়ের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন, এবার পূজায় কোনো ঝামেলা হবে না। তবে ভয় আছে, হঠাৎ যদি কেউ পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়।
নানুয়াদিঘির পাড় এলাকার এক পুণ্যার্থী বলেন, ‘গত বছর কে কী কারণে পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননা করল, তার তদন্ত হলো না। এতে একটা শঙ্কা আছে। তারপরও উৎসব হবে। আমাদের এলাকায় আমরা হিন্দু-মুসলিম একসঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করি।’
কুমিল্লা মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত্য দাস টিটু বলেন, গতবারের ঘটনায় মানুষের মনে ক্ষত রয়ে গেছে। চাপা আতঙ্কও আছে। এরপরও প্রশাসনের আশ্বাসে পূজা করা হচ্ছে। এবার পূজামণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
কুমিল্লা-৬ এর সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার বলেন, কুমিল্লা একটি সম্প্রতির জেলা। এবার কুমিল্লায় যেন কোনো প্রকার অকারেন্স ঘটতে দেওয়া হবে না। নানুয়া দিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে পূজা হবে। আমি এখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিব। প্রায় ১ সপ্তাহ আগ থেকে এখানে সার্বক্ষণিক পুলিশের গাড়ি থাকে। সে জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা প্রতিটি পূজামণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবকের কাজে নিয়োজিত থাকবেন। প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা থাকবে একাধিক।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, গত বছরের ১৩ অক্টোবর নানুয়াদিঘির পাড়ের পূজামণ্ডপে কোরআন অবমাননাকে কেন্দ্র করে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এর জেরে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ১২টি মামলা হয়। পুলিশ এসব মামলার তদন্ত করছে। এবার নানুয়াদিঘিসহ সব স্থানের পূজামণ্ডপের ওপর কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, প্রতিটি পূজামণ্ডপে চারজন আনসার সদস্য থাকবেন। এছাড়া পুলিশের বিশেষ টহলের গাড়ি কিছুক্ষণ পর পর টহল দিবে, থাকবে র্যাবের টহল। সিভিল ড্রেসে ডিবি মোতায়েন এবং সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য বিজিবিকেও কাজে লাগানো হবে। এছাড়া জেলা ম্যাজিসট্রেটগণ, ইউএনও এবং এসিল্যান্ডরা দায়িত্বে থাকবেন। পূজামণ্ডপে প্রবেশের সময় মেটাল ডিকেটক্টর দিয়ে তল্লাশি করে মণ্ডপে যেতে দেওয়া হবে।
পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান পিপিএম বার বলেন, যেহেতু স্বাধীনতার স্বপক্ষীয় সরকার ক্ষমতায় আছে এবং সামনে জাতীয় নির্বাচন। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা আমরা কুমিল্লায় ঘটতে দিব না। এজন্য আমরা সতর্ক রয়েছি।
প্রতিনিধি/এইচই