শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ঢাকা

কক্সবাজারে ছাড়ের ঘোষণা না মানার অভিযোগ

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৩:১১ এএম

শেয়ার করুন:

কক্সবাজারে ছাড়ের ঘোষণা না মানার অভিযোগ

কক্সবাজারে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। সাতদিনের মেলা উপলক্ষে কক্সবাজারে আবাসিক হোটেলগুলোতে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ এবং রেস্তোরাঁয় ৫০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এই অফারের বিষয়টি জেনে দেশের নানা প্রান্ত  থেকে পর্যটকরা কক্সবাজারে ছুটে আসছেন। তবে এসেই দেখেন আগের নিয়মেই চলছে সবকিছু। অভিযোগ পাওয়া গেছে, জেলা প্রশাসনের ঘোষণা মানছেন না হোটেল ও রেস্তোরাঁ  মালিকরা। এতে বিভ্রান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন কক্সবাজারে আসা পর্যটকরা। 

জানা যায়, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারের লাবনী পয়েন্টে ২৭ সেপ্টেম্বর সাত দিনব্যাপী পর্যটন মেলার অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, সব রেস্তোরাঁয় খাবারের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়, কিটকট চেয়ার প্রতি ঘণ্টায় ২০ টাকা (মেলাব্যাপী), ফটোগ্রাফারের মাধ্যমে ছবি তোলা প্রতি কপি ২ টাকা, ওয়াটার বাইক, জেটস্কি রাইড, বিচবাইক ২০ শতাংশ, প্যারাসেইলিংয়ে ৩০ শতাংশ, টিউব ভাড়ায় ৩০ শতাংশ ছাড়, চাঁদের গাড়ি রাইড ও লকারে ৫০ শতাংশ এবং গাড়ি পার্কিংয়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।


বিজ্ঞাপন


বুধবার সকাল থেকে  কক্সবাজারে পর্যটকরা পৌঁছার পর হোটেল বুকিং দিতে গিয়ে বাঁধে বিপত্তি। ছাড় তো দূরের কথা নরমাল মৌসুমের চেয়ে বেশি হোটেলের ভাড়া দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশাসনকে অবগত করেও কোনো ছাড় পাচ্ছেন না পর্যটকরা। 

সরেজমিনে দেখা যায়, হোটেল ও রেস্তারাঁয় ডিসকাউন্ট দেওয়ায় অল্প খরচে কক্সবাজার ভ্রমণ করা যাবে মনে করে পরিবারের ৭ সদস্য নিয়ে ঢাকার হাতিরঝিল থেকে  কক্সবাজারে এসেছেন মুস্তাফা আলী ও মরিয়ম দম্পতি । 

মুস্তাফা  বলেন, কক্সবাজারে অন্তত ২০টি হোটেল ঘুরেও আমি ছাড় পাইনি। বরং স্বাভাবিক সময় কক্সবাজারে ১ থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে ভালো হোটেল রুম পাওয়া যেত, এবার এসে মনে হয়েছে তার চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। রেস্তোরাঁগুলো রীতিমতো ডাকাতি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, জেলা প্রশাসন বা হোটেল মালিক যারাই ছাড়ের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে, তাদের বিরুদ্ধ মামলা করা উচিত।

ময়মনসিংহ  থেকে আগত আবুল কালাম নামে এক পর্যটক বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজার পৌঁছে বিভিন্ন হোটেলে গেছি। কিন্তু পর্যটক মেলা উপলক্ষে যে ডিসকাউন্ট (ছাড়) দেওয়ার কথা ছিল বাস্তবে তা নেই। আগে তাদের যে রেট ছিল বর্তমানেও একই অবস্থা, যা পর্যটকদের সঙ্গে এক ধরনের বাটপারি। একই ধরনের অভিযোগ করছেন সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অংখ্য পর্যটক।


বিজ্ঞাপন


হোটেল-মোটেল জোন ও রেস্তোরাঁগুলোতে ঘুরে পর্যটকদের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। জেলা প্রশাসনের ঘোষণা সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। এ কারণে প্রতিনিয়ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পর্যটকদের তর্ক চলছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

তবে হোটেল ও রেস্তোরাঁর ব্যবসায়ীদের দাবি, জেলা প্রশাসন হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকদের সঙ্গে আলাপ না করে নিজেদের মতো ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছেন। এ কারণে পর্যটকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর দায় আমরা  নেবো না, জেলা প্রশাসনকে নিতে হবে।

এ বিষয়ে  কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী  টুটুল বলেন, মুলত আমাদের কারও সঙ্গে আলাপ না করে জেলা প্রশাসন রেস্তোরাঁয় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছে। গণমাধ্যম প্রচার করেছে। তাই এর দায় জেলা প্রশাসনকেই নিতে হবে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আমরা উৎসবের জন্য আর্থিক সহযোগিতা করেছি। এরপরও মেলা উপলক্ষে আমাদের সমিতির মালিকানাধীন নন-এসি রুমগুলো মেলা চলাকালে ৮০০ টাকা ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখনও পর্যটকের তেমন সাড়া পাইনি। 

কিছু হোটেল ব্যবসায়ী বলছেন, পর্যটন মৌসুম ছাড়া সারা বছরই নন-এসি রুমের ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা  করে নিয়ে থাকেন তারা। এখনো তাই নিচ্ছেন। বিশেষ ছাড়ের বিষয়টি তারা জানেন না।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু সুফিয়ান বলেন, হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিকদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন সমন্বয় করে ছাড়ের বিষয়টি ঘোষণা করেছে। তারা যদি এখন সেটা না মানেন, সত্যিই দুঃখজনক ব্যাপারটি। 

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর