শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘বংশের প্রদীপ শ্যাষ, সংসারটা কায় দেখবে’

রাজু আহম্মেদ
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:৩৮ পিএম

শেয়ার করুন:

‘বংশের প্রদীপ শ্যাষ, সংসারটা কায় দেখবে’

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মারেয়ার বটতলী গ্রামে ষাটোর্ধ্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা মঙ্গলু চন্দ্র রায়। তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বড় ছেলে হরি কিশোর রায়। সংসারের খুঁটিনাটি থেকে বড় আয়োজন সব দেখতেন তিনি।

তবে পঞ্চগড়ে বোদা উপজেলার করতোয়া নদীর মাড়েয়া আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় প্রাণ হারান মঙ্গুলুর ছেলে হরি কিশোর। সেই সাথে প্রাণ হারায় মঙ্গুলুর মেয়ে পারুল রাণী, ছেলের বউ কনিকা ও তার বোন মনিকা এবং বিয়াই সরেন রায়।


বিজ্ঞাপন


এক সাথে পরিবারের পাঁচ সদস্য হারানোর শোক আর সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মঙ্গুলু চন্দ্র।

এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মঙ্গুলু চন্দ্র ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘ওতো গুলা সাংবাদিক ছিলেন ওইখানে কী করলেন। আজ বক্তব্য নিতে আসছেন। ফায়ার সার্ভিস ছিল। তিন দিন হয় লাশটা আমাক দিতে পারল না ওঠেয়া। অথচ পাবলিক তুলে দিল। আমি নিজেও সেন্সলেস তারপরও যে দাঁড়ে আছি আপনার মাঝে এটা আমি ভগবানের কাছে আরাধনা করছি। এতো দুঃখ বেদনা দেওয়ার পরে এর চেয়ে আমি কী বলব।’

মঙ্গুলু বলেন, ‘আজকে বদেশ্বরী মহালয়া যাইতে কালে তীর্থধান স্থান যাইতে কালে আমাদের বউ-ছোঁয়া, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে হারাইলাম। দুঃখ থুবার জায়গা নাই। আমি তিনজন হারাইছি আমার পরিবারের, আমার মেয়ে, বড় ছেলে, ছেলের বউ গেইছে। আমার প্রদীপটা শ্যাষ হয়া গেইছে। আমার যে একটা বংশের প্রদীপ। সেটা শ্যাষ হয়া গেইছে। এখন আমার সংসারটা কায় দেখবে?

ওই ঘটনায় বেঁচে ফিরেছেন মঙ্গুলুর জামাই বিনয় চন্দ্র রায়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আগে কাকিমারা গেলেন পরে আমরা উঠলাম মানুষের এত ভিড় কে শুনে কার কথা। ভগবানের নাম নিয়ে চলা শুরু করলাম, এক মিনিটের মাথায় এমন ঘটনা। প্রাণে বেঁচে উঠে চারিদিকে দেখি কেউ নাই। দাদা নাই, বৌদি আমার বোন, বউ কেউ নাই।’


বিজ্ঞাপন


মঙ্গুলুর চন্দ্রের ভাতিজা সুরেশ চন্দ্র বলেন, ‘যে দাদা আমার নিজের ভাইয়ের মত দেখত কী আর বলব। যে দাদা এই পরিবারটা চালাইতো। সেই এখন সংসারে নাই। দাদাই পরিবার টা ধরে রাখছিল, এ দাদার জন্য কান্নাকাটি, কী বলব, আমাদের কদিন ধরে খাওয়া দাওয়াই বন্ধ। এখন এই কাকা আমার কীভাবে চলবে। তার এখন বৃদ্ধ বয়স, চলতে পারে না। কী করে চলবে। যে দাদা পরিবার টা চালাইত সেই এখন নাই।’

mongu2

চাচি পতন বালা বলেন, ‘হরি কিশোরের সাথে সব জায়গায় একসাথে যাই, কোনটে ছাড়ি যায় না, কোন ছাড়ি খায় না। ওইদিন এক সাথে যাওয়ার কথা হামরা কেনে বা আগত গেনো। কেমন করি এটা কি হয়া গেল? এত বড় একটা বাড়ির তিন জন মারা গেইছে। কী করে থাকিবে এমরা।’

প্রতিবেশী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরাও ক্লান্ত হয়ে গেছি আজ তিন-চারদিন থেকে এইগুলা ঘটনায়। মঙ্গুলু ভাই যে কীভাবে এই শোকটা কীভাবে পালন করবে এটা উনি জানে আর আল্লাহ জানে, আমাদেরও কান্না আসে, চোখে পানি রাখতে পারি না। আমি কথা বলতে পারছি না।’

এর আগে গত রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাট এলাকায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।

জেলা প্রশাসনের জরুরি তথ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, ৬৮ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বজনদের দেওয়া তালিকা অনুসারে হিমালয়সহ চারজন নিখোঁজ রয়েছে।

৬৮ জন মৃতদের মধ্যে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ৪৪ জন, দেবীগঞ্জের ১৮ জন, আটোয়ারীর দুজন, ঠাকুরগাঁওয়ের তিনজন ও পঞ্চগড় সদরের একজন রয়েছেন।

মৃত ৬৮ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন এবং পুরুষ ১৭ জন। বাকি ২১ জন শিশু।

প্রতিনিধি/জেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর