শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

নৌকাডুবির বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে বাকরুদ্ধ অর্পিতা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৪:১৫ পিএম

শেয়ার করুন:

নৌকাডুবির বর্ণনা করতে গিয়ে কেঁদে বাকরুদ্ধ অর্পিতা

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের আরাজি শিকারপুর গ্রামের হেমন্ত রায়ের মেয়ে অর্পিতা রানী (১৭)। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সেদিনের নৌকাডুবির ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে অর্পিতা কেঁদে কেঁদে বাকরুদ্ধ।  মা, কাকি, তিনবোন এবং দুই ভাগ্নিসহ যাচ্ছিলেন মহালয়ার ধর্মসভায় যোগ দিতে। করতোয়ার ওপারের বদেশ্বরী মন্দিরের অনুষ্ঠানে যেতে চরে বসেন নৌকায়। কিন্তু নৌকাটি মাঝে পথে পৌঁছানোর আগেই তলিয়ে যায় মাঝ নদীতে।

এ ঘটনায় মৃত্যুপুরীতে রূপ নেয় করতোয়ার পাড়। লাশের সারিতে যুক্ত হয় অর্পিতার চার স্বজনের নাম। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন একজন। এ ঘটনায় বড় বোন আলো রানীসহ (২৩) অলৌকিকভাবে বেঁচে ফেরেন অর্পিতা। কিন্তু বেঁচে ফিরেও থামছে না তার আহাজারি।


বিজ্ঞাপন


বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে অর্পিতাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মৃতদের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। একই সঙ্গে পুরো বাড়ি জুড়ে চলছে শোকের মাতম। স্বজন হারানোর বেদনায় অর্পিতার আহাজারি আর দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে উঠেছে আরজি শিকারপুর গ্রামের আকাশ-বাতাস। 

নৌকা ডুবিতে স্ত্রী-সন্তান আর দুই নাতনি হারিয়ে কান্না থামছে না অর্পিতার বাবা হেমন্ত রায়েরও। সমবেদনা জানাতে এসে স্তব্ধ প্রতিবেশিরাও।

হেমন্ত রায় বলেন, ‘খুব আনন্দ নিয়েই আমার স্ত্রী কবিতা রানী (৪০), বড় মেয়ে আলো রানী, মেজো মেয়ে অর্পিতা, ছোট মেয়ে শ্যামলী রানী (১১), ছোটভাই বাসুদেবের বউ রুপালি রানী (৩০), বাসুদেবের মেয়ে নন্দিনী (৮) এবং নাতনি জয়া রানী (৪) ও জ্যোতি রানী (১.৫) বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া ধর্মসভার জন্য যায়। কিন্তু নদী পার হতে গিয়ে সবকিছুই শেষ হয়ে গেল। নৌকাডুবির ঘটনায় আমার দুই মেয়ে এবং এক ভাতিজি বেঁচে ফিরলেও লাশ হয়ে ফিরেছে পরিবারের চারজন জন। এখনও নিখোঁজ রয়েছে নাতনি জয়া রানী।


বিজ্ঞাপন


হেমন্ত রায় বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আর মহালয়া দিয়ে এই উৎসবের শুরু। কিন্তু উৎসবের প্রথম দিনেই হারিয়ে ফেললাম সারাজীবনের সব আনন্দ।

এর আগে, গত রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়া উপলক্ষে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া আউলিয়া ঘাট থেকে শতাধিক মানুষ শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকায় করে বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিলেন। ঘাট থেকে নৌকাটি কিছু দূর যাওয়ার পর দুলতে শুরু করে। এক পর্যায়ে নৌকাটি ডুবে যায়। পরে উদ্ধার অভিযান শুরু করে প্রশাসন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ৬৮ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৪ জন। তাদের উদ্ধারে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) নদীতে আবারো উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকা যোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে ৫০ থেকে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিল। 

ঘটনার পরপরই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায়কে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। 

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘তদন্ত কমিটির সদস্যরা নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান, এবং লাশ উদ্ধার এবং পরিবারকে বিভিন্ন সহায়তা প্রদানে সক্রিয় থাকায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় তিনদিন বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া নিহত প্রত্যেক পরিবারকে মরদেহ সৎকারের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজা টাকা করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর