শুক্রবার, ৩ মে, ২০২৪, ঢাকা

‘ছেলের কাপড় কেনার টাকা দিয়ে লাশ সৎকার করতে হবে’

রাজু আহম্মেদ
প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১১:১৯ এএম

শেয়ার করুন:

‘ছেলের কাপড় কেনার টাকা দিয়ে লাশ সৎকার করতে হবে’
ছবি : ঢাকা মেইল

‘বাচ্চাটা খুব বায়না ধরেছিল নতুন কাপড় নেবে। কপালে চুমু খেয়ে বলেছিলাম, মহালয়া শেষ হলে তারপর কিনে দেবো। সারাদিন কাজ করে টাকাও রাখছিলাম নতুন কাপড় কেনার জন্য। তার নতুন কাপড় পরা হলো না। সেই টাকা দিয়ে এখন লাশ সৎকার করতে হবে। আমার আজ সব শেষ হয়ে গেল। কি নিয়ে বেঁচে থাকব আমি’হৃদয়বিদারক কথাগুলো বলছিলেন রবিন চন্দ্র।  

রবিন পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার হাতিডুবা ছত্রশিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা। পেশায় একজন ইট ভাটা শ্রমিক। পূজায় তিন বছর বয়সী ছেলের নতুন কাপড় কেনার টাকা জোগাড় করতে গিয়েছিলেন কাজে। তবে সেই মহালয়ার দিনেই পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মায়ের সঙ্গে মারা যায় ৩ বছরের ছেলে বিষ্ণু রায়। শুধু স্ত্রী–সন্তান নয়, রবিন হারিয়েছেন আরও দুই স্বজনকে। নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন রবিনের ছোট ভাই কার্তিক রায়ের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী (২৫) ও বড় ভাই বাবুল রায়ের ছেলে দীপঙ্কর (৩)।


বিজ্ঞাপন


গতকাল রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ছেলে বিষ্ণুর লাশ ফেরত পাওয়ার পর স্ত্রী ও ছেলের লাশের পাশে বসে বিলাপ করছিলেন রবিন চন্দ্র। পরিবারের ৪ সদস্য হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা। মাতম চলছে রবিনের পরিবারসহ পুরো এলাকায়।

রবিন চন্দ্র বলেন, কাজে যাওয়ার সময় ছেলেটা আমার কোলে উঠে বলছিল বাবা আমার পূজার কাপড় কই। কপালে চুমু খেয়ে বলছিলাম, বাবা সন্ধ্যায় কিনে দিব মহালয়া শেষ হলে। সারাদিন কাজ করে টাকাও জোগাড় করেছিলাম। কিন্তু আমার এখন সব শেষ। আমার বাচ্চার আর নতুন কাপড় পরা হলো না। সেই টাকা দিয়ে তার লাশের সৎকার করতে হবে। আমার আজ সব শেষ হয়ে গেল। কি নিয়ে বেঁচে থাকব আমি? 

গতকাল রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে সেজেগুজে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন রবিনের স্ত্রী–সন্তান। বেলা ১টার দিকে আউলিয়ার ঘাটে পৌঁছান তারা। পথে কিছুটা দেরি হয়। উদ্দেশ্য বদেশ্বরী মন্দিরের মহালয়ার অনুষ্ঠানে আগেভাগেই যোগ দেওয়া। তড়িঘড়ি করে ভিড়ের মধ্যেই নৌকায় ওঠেন তারা।

কিছু দূর যেতেই দুলতে থাকে নৌকাটি। শুরু হয় চিৎকার–চেঁচামেচি আর আর্তনাদ। দেখতে দেখতে ডুবে যায় নৌকাটি। এতে নৌকায় থাকা শতাধিক যাত্রী পানিতে ডুবে যান। কেউ কেউ সাঁতরে পাড়ে উঠে এলেও মৃত্যু হয় ৩০ জনের। এর মধ্যে রবিনের পরিবারের রয়েছেন চারজন।


বিজ্ঞাপন


সেই নৌকায় ছিল এক কিশোর দীপু চন্দ্র (১৫)। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় সে। দিপু বলেন, প্রায় ১০০ জনের বেশি লোক আমরা নৌকায় ছিলাম। হঠাৎ নৌকা ডুবে যাওয়ায় কিছুক্ষণ আমি কিছু বুঝিনি, পরে সাঁতরে নিজে বাঁচি। নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেল। এতো খুঁজলাম কাউকে পেলাম না। কয়েকজনের লাশ ডাঙায় নিয়ে আসলাম। 

এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন দিপু।

দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম বলেন, এমন মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ। এখন পর্যন্ত আমার ইউনিয়নের ৮ জনের লাশ পাওয়া গেছে। একি পরিবারের ৪ জনের লাশ পাওয়া গেছে। পুরো ইউনিয়নের শোকের মাতম চলছে। আরও লাশ পাওয়া যেতে পারে।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর