বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

রূপপুর প্রকল্পে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

রূপপুর প্রকল্পে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আক্রান্ত রোগীর অধিকাংশই নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত দেশি-বিদেশি নাগরিক। এছাড়াও উপজেলার সাহাপুর ও পাকশীসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে রোগী আসছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও জেলা সদর হাসপাতালে।

আক্রান্তের হিসাব অনুযায়ী রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ৩০ জন রোগী ভর্তি আছেন। বিভিন্ন ক্লিনিকেও রোগী ভর্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭০ জনের বেশি রোগী।


বিজ্ঞাপন


তবে আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুর হার খুবই কম। কয়েকদিন আগে রূপপুর প্রকল্পের বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক রকিবুল ইসলাম নামের একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহী মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানোর পর তিনি মারা যান। 

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি থাকা রূপপুর প্রকল্পের নিকিম কম্পানিতে কর্মরত আটঘরিয়ার  আব্দুস সালাম, কামালপুরের ইমরান হোসেন আওতাপাড়ার নুরুলসহ প্রায় ১০/১২ জনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের কোম্পানির অধিকাংশ শ্রমিকই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পাবনায় মাত্র কয়েকজন রোগী ভর্তি হয়েছে। অধিক সংখ্যক রোগী রাজশাহী ও ঢাকাতে ভর্তি হচ্ছে। নিয়মিত এখানে চিকিৎসা না হওয়ায় আমরা এখান থেকে চলে যাব। ডাক্তাররা ঠিকমত খোঁজখবর নেন না। যার কারণে প্রথমে যে অবস্থা নিয়ে হাসপাতালে আসছিলাম তেমনই ধরণ রয়েছে। 

ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পাবনা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আক্রান্ত রোগীর ৯০ ভাগই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মরত কর্তা-কর্মচারী। বাঙালি ছাড়াও আক্রান্তের তালিকায় রয়েছেন রূপপুরে কর্মরত রুশসহ বিদেশি নাগরিকেরা। প্রথমদিকে তারা জ্বরাক্রান্ত হয়ে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। কিন্তু সুস্থ না হওয়ায় অনেকে প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডেঙ্গুর বিষয় নিশ্চিত হয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি হতে আসেন। এছাড়াও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা সরাসরি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক  শফিকুল ইসলাম শামীম বলেন, বিগত বছরের তুলনায় ঈশ্বরদীতে এবার ডেঙ্গু আক্রান্তের হার উদ্বেগজনক। এ কারণে হাসপাতালে ডেঙ্গুর আলাদা ইউনিট চালু করা হয়েছে। তিনি জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা ৯০ ভাগ রোগী আসছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। আমরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে তাদের জানিয়েছি। বাসাবাড়ি বা অফিস চত্বরে জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু মশা  বিস্তার লাভ করে। এজন্য জমে থাকা পানি অপসারণ ও এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে গ্রিনসিটি এলকায় নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।


বিজ্ঞাপন


‘রূপপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি কেন?’ এমন এক প্রশ্নের জবাবে চিকিৎসক শফিকুল শামিম বলেন, আক্রান্ত রোগীর অনেকেই কিন্তু বাইরে থেকে এসেছেন। আবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। 

এদিকে রূপপুর প্রকল্পে একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের অভ্যন্তরে চিকিৎসা ইউনিট রয়েছে। এটি রূপপুর প্রকল্পের মূল ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আছে (Ase) দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু আছের মেডিকেল ইউনিটে চিকিৎসক ফকরুল ইসলাম কিছুদিন যাবৎ অনুপস্থিতির কারণে অভ্যন্তরীণ চিকিৎসাসেবা ব্যহত হচ্ছে।

অন্যদিকে রূপপুরে প্রকল্পের বিদেশিদের আবাসন এলাকা সাহাপুরে ‘গ্রিনসিটি বহুতল ভবনের’ অভ্যন্তরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পাবনা সিভিল সার্জন বিভাগের একটি টিম গত সপ্তাহে গ্রিনসিটি এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন টিমটি এ সময় গ্রিনসিটি ভেতর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নিশ্চিত ও মশা নিধনের জন্য পরামর্শ দেন।

রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। বিশেষ করে গ্রিনসিটি ভবনের অভ্যন্তর ও আশপাশে মশা নিধনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রাশিয়ান নাগরিক রয়েছেন। তারা ঢাকায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের ব্যাপারেও খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। 

পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরী বলেন, জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে রূপপুর প্রকল্প এলাকায়। সেখানকর শ্রমিকরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। কয়েকদিন আগে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের একটি মেডিকেল টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধ বা জনগণকে সচেতন করতে সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

প্রতিনিধি/এএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর