শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

৮০ বছর বয়সেও দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা গড়ছেন মন্টু চন্দ্র

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৩১ পিএম

শেয়ার করুন:

৮০ বছর বয়সেও দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা গড়ছেন মন্টু চন্দ্র
ছবি : ঢাকা মেইল

১২ বছর বয়সে বাবার হাত ধরে প্রতিমা তৈরির হাতেখড়ি। বয়স ২০ বছর হলে নিজে নিজেই শুরু করেন প্রতিমা বানানোর কাজ। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে ৬০ বছর। শেরপুর সদরের বয়ড়া পরাণপুর পালপাড়ার মন্টুচন্দ্র পালের বয়স এখন ৮০।

বংশপরম্পরায় কৈশোরে যে কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, বয়োবৃদ্ধ হয়েও সে কাজ ছেড়ে দেননি। অভিজ্ঞ আঙুলের কারুকাজে এখনও দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা বানিয়ে চলেছেন তিনি। তার হাতে বানানো দেবী দুর্গাসহ লক্ষ্মী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশের প্রতিমা ভক্তদের কাছে খুবই পছন্দের।


বিজ্ঞাপন


শারদীয় দুর্গোৎসব সামনে রেখে এবারও ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন মন্টু চন্দ্র পাল।

sherpur puja

শেরপুর শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে বয়ড়া পরাণপুর পালপাড়ার তার বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, কাদামাটি দিয়ে একটু একটু করে নিপুণ হাতে গড়ে তুলছেন প্রতিমা। সেই কাজ করতে গিয়ে শরীরে ক্লান্তি এলেও মনের আনন্দ তাকে ভুলিয়ে দেয় সেই ক্লান্তি।

মন্টুচন্দ্র পাল ঢাকা মেইলকে জানান, বাপ-দাদারা সবাই প্রতিমা বানাতেন। তাদের কাছ থেকেই প্রতিমা বানানো শুরু। বয়সের ভারে কাজ করতে কষ্ট হলেও প্রশান্তি পান মনে। 


বিজ্ঞাপন


তবে মন্টু পালের অভিযোগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বাড়লেও দাম বাড়েনি কারিগরদের। শখ থেকেই বাপ দাদার এ পেশা ধরে রেখেছেন তিনি।

মন্টুচন্দ্রের মতো তার ছেলেরাও বেছে নিয়েছেন প্রতিমা তৈরির কাজ। একই কাজে সহায়তা করে থাকেন পুত্রবধূরাও। কিন্তু বর্তমান সময়ে খরচের সঙ্গে কুলিয়ে এই পেশা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।

sherpur puja

প্রতিমা তৈরিতে শ্বশুরকে সহযোগিতা করছিলেন রেখা রানী পাল। তিনি বলেন, আমার শ্বশুর ৬০ বছর ধরে এই কাজ করছেন। শ্বশুরের মতো আমরাও সবাই এ কাজ করছি। সব জিনিসের দাম বেশি। তাই এখন পোষায় না। সরকার আমাদের কিছু সাহায্য করলে খুব ভালো হয়।

কদিন পরই শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবীদুর্গার আগমন ঘিরে তাই মন্টুচন্দ্র এবং তার ছেলে ও পুত্রবধূদের কাটছে ব্যস্ত সময়। একই চিত্র শেরপুরের অন্যান্য কারিগরদেরও।

প্রতিমা কারিগর শুভ কুমার পাল বলেন, আমরা অনেক দিন ধরে এ কাজ করছি। সব জিনিসেরর দাম বেশি। যে মজুরি পাই, এ টাকা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। এর আগে যে দামে প্রতিমা তৈরি করতাম, এখনও একই দামে করতে হচ্ছে। কিন্তু সব জিনিসের দাম তো বেড়ে গেছে। সেটা কেউ বোঝেন না।

প্রতিমা কারিগরদের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, কাদামাটি দিয়ে দুর্গাসহ কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতীর অবয়ব অনেকটাই তৈরি এখন। এখন শুরু হবে রঙের আঁচড় দেওয়ার কাজ। তারপর অলংকরণের মাধ্যমে মণ্ডপে যাওয়ার প্রস্তুত হবে প্রতিমাগুলো।

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরে মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা।

দুর্গাপূজার দিন গণনা, মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়। এই শারদীয় দুর্গা উৎসব শুরু হবে আগামী ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য থেকে জানা যায়, এ বছর শেরপুর জেলায় ১৬৩টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়েছে। এর মধ্যে শেরপুর সদরে ৭৭টি, নালিতাবাড়ীতে ৩৬টি, নকলায় ২১টি, ঝিনাইগাতীতে ১৯টি ও শ্রীবরদী উপজেলায় ১০টি মণ্ডপ রয়েছে। ১ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গোৎসব।

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত কুমার দে ভানু ঢাকা মেইলকে বলেন, মহামারী করোনার কারণে গত দুই বছর দুর্গাপূজার আনন্দ অনেকটা ম্লান ছিলো। এবার জাঁকঝমকভাবে হবে। এ বছর জেলায় ১৬৩টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। সবাইকে জানাই শারদীয় দুর্গাপূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা।

প্রতিনিধি/এইচই

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর