হজরত শাহ মোস্তফা (র:) এর বংশধর মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লা অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি মনু নদের উত্তর তীরে কয়েকটি দোকানঘর স্থাপন করে ভোজ্যসামগ্রী ক্রয় বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেন। মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লা প্রতিষ্ঠিত এ বাজারে নৌ ও স্থলপথে প্রতিদিন লোকসমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমের মাধ্যমে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে মৌলভীবাজারের খ্যাতি।

বিজ্ঞাপন
কালের পরিক্রমায় কয়েকটি দোকানের পরিবর্তে এখন মৌলভীবাজার একটি আধুনিক ও পর্যটন খ্যাত শহর হিসেবে পরিচিত। নান্দনিক কর্মপরিকল্পনা ও ব্যাপক উন্নয়নে এক সৃজনশীল শহর মৌলভীবাজার।

বর্তমানে পৌর শহরটিতে বাহারি ফুলের রঙ ও রূপের আপন মহিমায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। সারা বছরই বিভিন্ন প্রজাতির ফুল ফুটে। বাহারি ফুলের চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্যে বিমোহিত হন প্রকৃতিপ্রেমী শহরবাসী। যে দিকে চোখ যাবে দেখা মিলবে প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।

বিজ্ঞাপন
এমনিভাবে সৌন্দর্য বর্ধক বিভিন্ন গাছ ও ফুলেল শহরে পরিনত হয়েছে মৌলদভীবাজার পৌর শহরের চারপাশ।
সবুজ ছায়ায় ঘেরা প্রকৃতিতে ক্যামেলিয়া, প্লুমেরিয়া, অশোক, জারুল, পিঙ্ক ক্যাসিয়া, গোল্ডেন শাওয়ার, গার্লিক ভাইন, ক্লক ভাইন, বকুল, রাধাচুড়া, হাস্নাহেনাসহ নানা রকমের দেশি-বিদেশি মৌসুমি স্থায়ী ও স্থানীয় বিভিন্ন জাতের ফুলের গাছ শোভা পাচ্ছে শহরময়।

সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) মৌলভীবাজার শহরের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায় লাল, নীল, হলুদ, গোলাপী, বেগুনি ও সাদাসহ নানান রঙের বাহারী ফুলের মেলায় বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে প্রাণ প্রকৃতি।

পৌরসভার পুকুর পাড়, পৌর জনমিলন কেন্দ্রের প্রবীনাঙ্গণ, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ, মহিলা কলেজ, সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ, সার্কিট হাউস, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, ঢাকা সিলেট সড়কের ডিভাইডার সহ অলিগলিতে।

প্রকৃতি প্রেমিকরা বলছেন, বাহারি ফুল শুধু সৌন্দর্য নয়, ভ্রমণ ক্লান্তিতে যোগাচ্ছে অক্সিজেন। ইট পাথরের শহরে ফুলের রংয়ের মূর্ছনায় মুগ্ধ হচ্ছেন শহরবাসী।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী সোনিয়া মান্নান বলেন, এই শহর রংবেরঙের ফুল সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে। এ যেন গুচ্ছ গুচ্ছ এক একটি বাগান। পরিবেশ প্রকৃতি অক্ষুণ্ণ রেখে এই কাজ আরও অগ্রসর হোক, এটাই দাবি থাকবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মৌলভীবাজারের সমন্বয়ক আসম সালেহ সোহেল বলেন, ফুলে ফুলে সেজে থাকা শহর অন্য রকম এক অনুভূতির সৃষ্টি করে। আমাদের পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষায়, মানুষকে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে গাছের প্রয়োজন। পাশাপাশি ফুল গাছ মানুষের মনকে প্রফুল্ল করে। এই আয়োজন পৌরসভার পক্ষ থেকে অব্যাহত রাখা উচিত।

ফুলেল শহর গড়ার মূল কারিগর প্রয়াত সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসীন আলী। তিনি প্রথম ৩০০ ফুলের চারা লাগিয়ে এর যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে পৌরসভার উদ্যোগে বৃহৎ পরিসরে এর কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলেন জানান পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান।

তিনি বলেন, পৌরশহর নান্দনিক করার আরও বহু আয়োজন চলছে। বছর দুই এর মধ্যে এ শহর উদাহরণ দেওয়ার মতো হবে।

মনু নদের তীরে গড়ে উঠা এ শহর আরও পরিবেশ প্রকৃতি দ্বারা সমৃদ্ধ করা সম্ভব। এ নান্দনিক উদ্যোগকে আরো পরিকল্পিতভাবে প্রসারিত করার দাবী প্রকৃতিপ্রেমীদের।
এজে

