রোববার, ৫ মে, ২০২৪, ঢাকা

চুইঝাল উদ্যোক্তা মামুনের মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকা

মো. শহিদুল ইসলাম
প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২২, ০৫:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

চুইঝাল উদ্যোক্তা মামুনের মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকা
ছবি: ঢাকা মেইল

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বিখ্যাত ও জনপ্রিয় মসলার নাম চুইঝাল। অনলাইনে এই চুইঝাল বিক্রি করে সফল হয়েছেন বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কাঠালতলা গ্রামের উদ্যোক্তা মোঃ মামুন। করোনাকালে কাজ হারিয়ে হতাশ না হয়ে ৯০০ টাকা পুঁজিতে ব্যাবসা শুরু করেন মামুন। স্থানীয় বাজার থেকে চুইঝাল কিনে অনলাইনে বিক্রয় করে প্রথম থেকেই ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলেন তিনি। 

চাহিদার কথা মাথায় রেখে পরবর্তীতে বাড়ির আঙিনায় নিজেই চারা উৎপাদন শুরু করেন মামুন। বর্তমানে অনলাইনে চুইঝালের তৈরি আচার, চুইঝালের গুড়া মসলা ও চারা বিক্রি করে মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করছেন তিনি। সঠিক দিক নির্দেশনা ও সরকারি সহায়তা পেলে চুইঝাল চাষের মাধ্যমে জেলায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করেন এ উদ্যোক্তা।


বিজ্ঞাপন


chui-jhal
কেটে রাখা বিভিন্ন আকারের চুইঝাল

নিজের সফলতার কথা বলতে গিয়ে উদ্যোক্তা মামুন বলেন, ২০২০ সালে মহামারি করোনা ভাইরাসের সময় কাজ হারিয়ে আতঙ্কে হতাশায় বাড়িতে কর্মহীন সময় কাটছিল। এসময় স্থানীয় বাজার থেকে অল্প কিছু চুইঝাল কিনে এনে অনলাইনে পরীক্ষামূলক বিজ্ঞাপন দিই। প্রথম থেকেই ব্যাপক সাড়া পেতে থাকি। অল্প সময়ের ভিতরে ডেলিভারি দিতে পারায় ক্রেতারা আমার প্রতি আস্থা অর্জন করেছে। 

ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, প্রথম দিকে শুধু কাচা মসলা হিসেবে চুইয়ের ডাল, শিকড় ও কাণ্ড বিক্রি শুরু করেছিলাম। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তৈরি চুইঝালের আচার, শুকনা ও গুড়া চুইও বিক্রি করছি। 

“অনলাইনে কাচা চুই ঝালের পাশাপাশি আচার এবং গুড়া মসলারও বেশ চাহিদা রয়েছে। প্রথমে মাত্র ৯০০ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু করা এ ব্যাবসা থেকে বর্তমানে আমি প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করছি।”


বিজ্ঞাপন


chui-achar
চুইঝালের আচার

মামুন আরও বলেন, প্রথম দিকে চুইঝাল বাজার থেকে কিনে এনে বিক্রি করতাম। পরবর্তীতে নিজেই বাড়ির আঙিনায় দেশি পদ্ধতিতে চাষ শুরু করি। বাড়ির ভেতরে অল্প জায়গাতে ১০ থেকে ১৫টি পলিব্যাগে চুইঝালের চারা লাগিয়ে লাভবান হই। 

“এখন আমার কাছ থেকে অনেকেই চুই ঝালের চারা সংগ্রহ করছে। বিভিন্ন গাছে লতা জাতীয় যে চুইঝালের চাষ করা হয় সেগুলোর চাহিদা অনেক বেশী। ব্যাপক পরিসরে চুইঝালের বানিজ্যিক চাষের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সরকারী বা স্থানীয়ভাবে সহযোগীতা পেলে আরও বড় পরিসরে চাষ করে বাগেরহাটের চুইঝাল বিদেশেও বানিজ্যিক রপ্তানি করা সম্ভব।”

স্থানীয় বাসিন্দা জোবায়ের ফরাজি বলেন, অনলাইনে মামুনের চুইঝাল ব্যাবসায় সফলতা আমাদের এলাকার অন্য যুবকদের অনুপ্রাণিত করছে। মাত্র দুই বছরে মামুনের সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই চুইঝালের চারা সংগ্রহ করছে। অনলাইনের পশাপাশি সরাসরিও অনেকে মামুনের কাছ থেকে চুইঝালের আচার, গুড়া মসলা এবং চুইয়ের কাঁচা ডাল সংগ্রহ করছে। 

chuijahal
চুইঝাল

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বাগেরহাটের উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, বাগেরহাট জেলায় চুইঝালের বেশ চাহিদা রয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকাতে লতা জতীয় চুইঝাল চাষ হয়ে থাকে। মসলা হিসেবে স্বাস্থ্যের জন্যও এটা উপকারী। যদি কোনো  চাষি চুইঝাল চাষ করতে আমাদের সহযোগীতা চায় তাহলে এ বিষয়ে তাদের সকল ধরনের পরামর্শ এবং চারা প্রদান করা হবে।

উল্লেখ্য, চুইঝালের কাণ্ড, শিকড় ও শাখা-প্রশাখা প্রায় সবই মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বড় মাছ বা যে কোনো মাংস রান্নায় চুইঝাল ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। রান্নায় এর ঝাঁঝালো স্বাদ এবং ঘ্রাণ খাবারে বাড়ায় আলাদা আকর্ষণ। 

বিভিন্ন সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানসহ ঈদ পার্বনে চুই ঝালের কদর অনেকগুণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জেলা খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল এবং যশোর এলাকায় চুইঝাল মসলা হিসেবে খুব জনপ্রিয়। এটি মূলত দক্ষিণবঙ্গ ছাড়া দেশের অন্যান্য এলাকার মানুষের কাছে আগে বেশি পরিচিত ছিল না। তবে অনলাইনে সহজলভ্য হওয়ায় ইদানীং এর খ্যাতি বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। 

এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর