শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ঢাকা

কিডনি আমি দেব, আমার সন্তানকে বাঁচাতে আপনারা শুধু খরচটা দেন

মো. জাহিদ হাসান মিলু
প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২, ০৬:১১ পিএম

শেয়ার করুন:

কিডনি আমি দেব, আমার সন্তানকে বাঁচাতে আপনারা শুধু খরচটা দেন

মেধাবী ছাত্র হিসেবে রিফাত হাসান রিপনের (২২) এলাকাজুড়ে বেশ সুনাম রয়েছে। সকল পরীক্ষায় রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। বাবা মায়ের ইচ্ছে ছিল একমাত্র ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। কিন্তু সে আশা পূরণ হওয়ার আগেই জীবনে নেমে আসে কালো এক অধ্যায়।

রিপন কৈশোরে বাবাকে হারিয়েছেন। এরপর অভাবের পরিবারে মা সংসারের হাল ধরেন। উচ্চশিক্ষা অর্জন করে দারিদ্রতাকে পরাজিত করার স্বপ্ন নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সহপাঠীরা যখন ক্লাসে ব্যস্ত, তখন দুটি কিডনির সমস্যায় রিপন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন হাসপাতালের বেডে। তার দুটি কিডনিই নষ্ট।


বিজ্ঞাপন


ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের পকম্বা গ্রামে রিপনের বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। সেই আগ্রহ থেকেই উচ্চমাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগে। রিপন এখন সেই কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

আত্মীয়স্বজন, রিফাতের বন্ধুবান্ধব কলেজের সহপাঠী ও প্রতিবেশীরা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই টাকা তার চিকিৎসার জন্য খুবই নগণ্য।

জানা যায়, রিপনসহ তার পরিবারের সদস্য ৪ জন। মা বাবা ছোটবোনকে নিয়ে বেশ সুখেই কাটছিল তাদের জীবন। তবে সেই সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। মাধ্যমিক পাস করতেই বাবা ছেড়ে পরপারে চলে যান। এরপরে পরিবারে নেমে আসে দুর্দিন। ভিটেমাটি ছাড়া অল্প একটু আবাদি জমির আয়ে কোনোমতে চলে তাদের সংসার।

পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০২০ সালের মার্চের দিকে জ্বর, বমি আর মাথাব্যথা দেখা দেয় রিপনের। পরীক্ষা করে জানা যায়, তার দুটি কিডনির কোনোটিই আর কাজ করছে না। এ অবস্থায় দিশাহারা রিপনের মা সহায়-সম্বল বিক্রি করে চিকিৎসা করাতে শুরু করেন। দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহীতে চিকিৎসা শেষে ঢাকা সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ভর্তি করান রিপনকে। সেখানের চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম রিপনকে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। এখন তাকে সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করাতে হয়। ডায়ালাইসিস না করালে শুরু হয় তার শ্বাসকষ্ট।


বিজ্ঞাপন


রিফাতের মা রিতা বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার আট বছর হলো। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাতে হয়। আমাদের যা ছিল, সবকিছু দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। চিকিৎসক যত দ্রুত সম্ভব ভারতে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে বলেছেন। কিন্তু ভারতে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে ২৮ থেকে ৩০ লাখ টাকা খরচ হবে। ২৮-৩০ লাখ টাকা তার একার পক্ষে ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। আত্মীয় স্বজন, রিফাতের বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা তার পাশে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু এই টাকা তার চিকিৎসার জন্য খুবই নগণ্য। 

এ পরিস্থিতিতে ছেলেকে বাঁচাতে সবার কাছ থেকে সহযোগিতা চান তিনি।

রিতা বেগম আরও বলেন, ‘সমাজের বিত্তবানরা পাশে দাঁড়ালে, ছেলেকে আমি আমার কিডনি দেব। আমার সন্তানকে বাঁচাতে আপনারা শুধু চিকিৎসার খরচটা দেন।’

লেহেম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, পকম্বা গ্রামের রিপনের কিডনির সমস্যার বিষয়টি শুনেছি। কিডনি প্রতিস্থাপন চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। ওই পরিবারের পক্ষে এই ব্যয়বহুল খরচ বহন করা সম্ভব হবে না। যদি সকলে এগিয়ে আসে তবেই হয়তো তাকে বাঁচানো যাবে।
 
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসক বরাবর চিকিৎসার কাগজপত্রসহ আবেদন করলে সরকারিভাবে তাকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।’
 
উল্লেখ্য, রিফাত হাসান রিপন বর্তমানে ঢাকা সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা করতে চাইলে মা রিতা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। 

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর