বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার: কিডনি ফুসফুসে জমাট রক্ত

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২২, ০১:০৯ পিএম

শেয়ার করুন:

গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতির মরদেহ উদ্ধার: কিডনি ফুসফুসে জমাট রক্ত

গাজীপুরের বড়বাড়ি বগারটেক এলাকায়  নিজস্ব প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া শিক্ষক দম্পতির মরদেহের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। এটি বিষক্রিয়া বা অভ্যন্তরে আঘাতের কারণে হতে পারে বলে জানিয়েছেন ফরেনসিক চিকিৎসক। তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে সংগৃহীত নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। নামাজে জানাযা শেষে শিক্ষক দম্পতিকে তাদের গ্রামের বাড়ি দাফন করা হয়েছে। 

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শাফি মোহাইমেন জানান, বৃস্পতিবার বিকেলে শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রীর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এসময় দুইজনের ফুসফুস ও কিডনিতে প্রায় একই রকম লক্ষণ পাওয়া গেছে। তাদের প্রত্যেকের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া। এটা সাধারণত খাবারে বিষক্রিয়া কিংবা অন্যকোনো কারণেও হতে পারে। এছাড়া শরীরের অভ্যন্তরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে এ চিহ্ন নতুন না পুরাতন তা পরীক্ষা নীরিক্ষার পর জানা যাবে। তাই তাদের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকায় সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।


বিজ্ঞাপন


এদিকে, নিহত ওই দম্পতির মৃত্যুর ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নন্দলাল চৌধুরী। গেল রাতে নামাজে জানাযা শেষে তাদের মরদেহ ময়মনসিংহের ত্রিশালে দাফন করা হয়েছে। 

এর আগে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জলির লাশ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছার দক্ষিণ খাইলকুরের বগারটেক এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা তাদের প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ভোররাতে উদ্ধার করা হয়।

নিহত একেএম জিয়াউর রহমানের ভগ্নিপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ বলেন, গাজীপুরের কালীগঞ্জের পুনসই হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন জিয়াউর রহমান। সেখান থেকে ২০২০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার স্ত্রী মোসাম্মৎ মাহমুদা আক্তার জলি টঙ্গী বাজার এলাকার আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারা সপরিবারে গাছা থানার কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়িতে থাকতেন।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তারা দুজনেই স্কুলে যাওয়া আসা করতেন। বুধবার স্কুল শেষে সহকর্মী ও সম্পর্কে মামাত ভাই গণিত শিক্ষক মো. কামরুজ্জামানকে গাড়িতে তুলে নিয়ে জিয়াউর যান স্ত্রী জলির স্কুলে। সেখান থেকে স্ত্রী জলিকে গাড়িতে তুলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন এ দম্পতি। পথে কামরুজ্জামানকে নামিয়ে দেন জিয়াউর। এসময় জিয়ার ছেলে মিরাজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাবার মোবাইলে ফোন দেন। কিন্তু বাবার ফোন রিসিভ না হওয়ায় তার মায়ের ফোনে কল করেন। পরে মা ফোন ধরে বাসায় আসছেন বলে জানান। কিন্তু মা কথা বলার সময় ক্লান্তির স্বর ভেসে আসছিল। এরপর থেকে ফোনে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে তারা গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করেন। রাতভর তারা বিভিন্ন জায়গায় তাদের খোঁজ করেন।


বিজ্ঞাপন


নিহত শিক্ষক দম্পত্তির একমাত্র ছেলে একেএম তৌসিফুর রহমান মিরাজ বলেন, সর্বশেষ বুধবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বাবার মোবাইলে ফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। তারপর কোনো যোগাযোগ করতে না পেরে রাতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। ভোররাতের দিকে গাছা থানার দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক নামক জায়গায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের উপর প্রাইভেটকারটি দেখতে পেয়ে কাছে যাই। এসময় চালকের আসনে বাবা ও পাশেই মাকে নিস্তেজ অবস্থায় পেয়ে তাদের প্রথমে তায়রন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার অপর একটি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এসময় ঘটনাটি গাছা থানা পুলিশকেও জানানো হয়। পরে পুলিশ দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের লাশ গাছা থানায় নিয়ে যায়।

প্রতিনিধি/এএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর