শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

‘১৫ আগস্ট এলেই বুকটা ফেটে যায়’

মো. রুবেল হোসেন
প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২২, ০৩:১৬ পিএম

শেয়ার করুন:

‘১৫ আগস্ট এলেই বুকটা ফেটে যায়’
ছবি: ঢাকা মেইল

‘যখন শুনলাম বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের খুনিরা নির্মমভাবে হত্যা করছে, তখন আমাদের হৃদয় কেঁপে ওঠে। সেদিন আমাদের গুচ্ছগ্রামে কান্নার রোল পড়ে। আমরা কেউ সেদিন কাজকর্মে যায়নি। যতবার ১৫ আগস্ট আসে ততবারই আমাদের বুকটা ফেটে যায়। বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে বেঁচে আছে। আমৃত্যু পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি এই গুচ্ছগ্রামে স্মৃতিবিজড়িত হয়ে থাকবে।’

ঢাকা মেইলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর হক। এ সময় সেখানে থাকা শাহজাহান, আনিসুল হক ও আনসারুল্লাহও ১৫ আগস্টের কথা স্মরণ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
laxmipur specialসুবিধাভোগীরা ঢাকা মেইলকে বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের বসবাস ও চাষাবাদ করার জন্য জমি দিয়েছেন। আমরা সেই জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ ও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করিয়েছি। বঙ্গবন্ধু আমাদের জমি দিয়েছেন। তাঁর মেয়ে (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা ঘর করে দিয়েছেন। খুনিরা চেয়েছেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে একটি স্বাধীন দেশের চেতনাকে নস্যাৎ করার, কিন্তু পারেনি। আজ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা একটি স্বাধীন দেশকে উন্নয়নের দিকে নিচ্ছেন।


বিজ্ঞাপন


স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রামগতি চর পোড়াগাছায় আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওইদিন নিজে মাটি ভরাটে অংশ নিয়ে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। সেখানে 'সর্বপ্রথম স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে দেশ গড়ার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। সেই থেকে গুচ্ছগ্রামটি 'শেখের কিল্লা' নামে সুপরিচিত।

ওই সময় ২১০ ভূমিহীন পরিবারের প্রত্যেককে দুই একর ২০ শতক করে (জমি) চাষাবাদের জন্য আর বসবাসের জন্য ৩০ শতাংশ জমি দেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তী ১৯৭২-৭৪ সালে বরাদ্দ পাওয়া জমিতে ধীরে-ধীরে বসতি গড়ে উঠে। বর্তমানে এ গুচ্ছগ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দারা স্বাবলম্বী। ৭২ থেকে ২০২২ পর্যন্ত পোড়াগাছা গুচ্ছগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
laxmipur specialবঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আশরাফ উদ্দিন নামে সেখানকার এক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি সবকিছুই মেঘনার ভাঙনে হারিয়ে যায়। তখন আমার বয়স ১৪-১৫ হবে। বাবা-মা আমাদের নিয়ে খুব দুঃখকষ্টে এখানে-সেখানে থাকতেন। হঠাৎ একদিন বঙ্গবন্ধু আমাদের চর পোড়াগাছায় আসেন। সব চর ছিল। কয়েক মাইল দূর থেকে মানুষ বঙ্গবন্ধুকে একজন দেখতে আসেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সবার চেয়ে উঁচু (লম্বা)। তিনি নিজ হাতে মাটি কেটে (স্থানীয়) আজাদ নেতার মাথায় তুলেন। আমাদের ভূমিহীনদের জমি দিয়েছেন। বর্তমানে আমি তার দেওয়া জমিতে স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে বসবাস করি। যারা বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে, তারা মানুষ নয়। আল্লাহ তাদের সবার যেন উপযুক্ত বিচার করেন।

আনসারুল্লাহ নামে একজন বলেন, বঙ্গবন্ধুর পাশে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন আমার বয়স ১৮ বছর হবে। আমার স্পষ্ট সবকিছু মনে আছে। বঙ্গবন্ধু একটি কালো হেলিকপ্টারে করে আসেন। প্রথমে আমরা সবাই ভয় পেয়ে দূরে সরে গেলাম। বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টার থেকে নেমে দুই হাত দিয়ে চারপাশের মানুষগুলোকে তার দিকে ডাকেন। তখন থেকে বঙ্গবন্ধুকে একজন ভালো মানুষ ও নেতা মনে করি। অল্প দেখাতেই বুঝেছি তার মাঝে বিন্দুমাত্র অহংকার ছিলো না। এমন নেতাকে যারা হত্যা করেছে তারা ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার দিনের কথা মনে হলেও এখনো কেঁদে উঠি।
laxmipur specialফছিউল আলম নামে একজন জানান, ছোটবেলায় বাবা ও ভাইদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মাটি কাটার কাজে অংশ নেই। কিন্তু মানুষের ভিড়ে বঙ্গবন্ধুকে দেখার সুযোগ হয়নি। তখন আমার বয়স ১০ থেকে ১১ হবে। বঙ্গবন্ধু ভালো মানুষ ছিলেন। কারণ তিনি অসহায় মানুষের দুঃখের কথা শুনে পাকিস্তানি কারাগার থেকে ঢাকার বাইরে প্রথম সফর হিসেবে পোড়াগাছায় আসেন। এমন মানবদরদী মানুষকে যারা হত্যা করেছে তাদের ঘৃনা করি। ফছিউল আরও বলেন, প্রতিবছর ১৫ আগস্ট এলে আমরা পোড়াগাছায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচিহ্ন খুঁজতে থাকি। আমাদের কাছে মনে হয় বঙ্গবন্ধু এখনো আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ ঢাকা মেইলকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন সেটার গোড়াপত্তন কিন্তু জাতির পিতার হাত ধরেই এসেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময় ১৯৭২ সালে ২০ ফেব্রুয়ারি চর পোড়াগাছা গুচ্ছগ্রামে দুঃস্থ অসহায় মানুষের পুনর্বাসন করার জন্য ২১০ পরিবারটিকে ৫৯০ হেক্টর জমি দিয়ে পুনর্বাসন করেন। বর্তমানে ওই স্থানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সাড়ে ৮ কোটি টাকার কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিস্তম্ভ, মডেল গুচ্ছগ্রামে কিছু ঘর তৈরি করা হচ্ছে। একটি ছোট শিশু পার্ক করা হচ্ছে। একটি মডেল মার্কেট করা হচ্ছে। একটি পুকুর করা হচ্ছে।


বিজ্ঞাপন


প্রতিনিধি/এইচই/এমআর

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর