রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

নিষিদ্ধ ‘চায়না দুয়ারি’ জালে হুম‌কি‌তে দেশীয় মাছ

আহমাদ সোহান সিরাজী
প্রকাশিত: ০৭ আগস্ট ২০২২, ১২:৪৫ পিএম

শেয়ার করুন:

নিষিদ্ধ ‘চায়না দুয়ারি’ জালে হুম‌কি‌তে দেশীয় মাছ

সাভার ও ধামরাই উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে চলা বংশী নদীতে নি‌ষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও চায়না জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে জেলেরা। এর ফলে চরম হুমকিতে রয়েছে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও মা‌ছের রেণু পোনাসহ বি‌ভিন্ন প্রকার জলজ প্রাণী।

নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের পর এবার শুরু হয়েছে কারেন্ট জালের চেয়েও সূক্ষ্ম চায়না জালের ব্যবহার। এ জালের নাম ‘চায়না দুয়ারি’ হলেও এলাকায় অনেকে ম্যাজিক জাল হিসেবেই চেনেন। চায়না দুয়ারি জাল ও কা‌রেন্ট জা‌ল এলাকার নদ-নদী, খাল-বিল জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে প্রাকৃতিক সবধরনের দেশীয় মাছ ধরা পড়ছে চায়না জালে। এতে করে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে এই এলাকার নদ-নদী, খাল-বিল ও ছোট নদীগুলো।


বিজ্ঞাপন


শনিবার (৬ আগস্ট) সাভার ও ধামরাই উপজেলা সংলগ্ন বংশী ও ধলেশ্বরী নদীর বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা যায়, এসব জালে শুধু মাছই নয়, নদীতে থাকা কোনো জলজ প্রাণীও রক্ষা পাচ্ছে না। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে চিংড়ি, পুঁটি, রুই-কাতলা, টেংরা, কই, শিং, মাগুর, তেলাপিয়া, বেলে, বোয়াল, শোল, টাকি থেকে শুরু করে ছোট বড় কোনো মাছই রেহাই পাচ্ছে না এই নিষিদ্ধ জাল থেকে। মা‌ছের সঙ্গে বি‌ভিন্ন ধর‌নের কাঁকড়া, কু‌চিয়া, বি‌ভিন্ন প্রজা‌তির সাপ ছাড়াও পা‌নি‌তে বাস করা বি‌ভিন্ন প্রজা‌তির উপকা‌রি পোকামাকড়ও জা‌লে আট‌কা পড়ছে। এরপর ডাঙ্গায় তু‌লে এসব প্রাণী ও পোকা মাকড় মে‌রে ফে‌লছে জেলেরা।

ধামরাইয়ের ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া এলাকার বংশী নদীর পাড়ে জেলে সায়েম ফকির তার স্ত্রীকে নিয়ে চায়না দুয়ারি জাল মেরামত করছিলেন। এসময় তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘৪ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে জালটা কিনেছি। প্রশাসন জানলে জাল নিয়া যাবে। নদীতে আগের মতো মাছ নেই। তবে চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে টুকটাক মাছ পাওয়া যায়। তাই এই জালই মাছ ধরার ভরসা।’

savar

স্থানীয় বাসিন্দা হাসান চৌধুরী জানান, অত্যন্ত সূক্ষ ও বিশেষভাবে তৈরি এ জালে সব ধরনের মাছ আটকা পরে। মাছের পোনাগুলো আটকা পরে মারা যায়। এ জাল ব্যবহার বন্ধ করা না হলে একসময় নদী মাছ শূন্য হয়ে যাবে।


বিজ্ঞাপন


সালাম মুন্সি নামে আরেক বয়োজ্যেষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দা আক্ষেপের সঙ্গে বলেন,   ‘আগে নদীতে কত রকমের মাছ পাওয়া যাইতো। বর্ষা নামনে তিনবেলা এই নদীর মাছ দিয়াই ভাত খাইতাম আমরা। আর এখন কি নিত্য নতুন জাল আবিষ্কার হয়। এমনিতেই নদী মইরা গেছে তার ওপরে এইসব জালের কারণে মাছের বংশ একেবারে নির্বংশ হয়ে যাচ্ছে।’

ধামরাইয়ের সিনিয়র উপজেলা মৎস কর্মকর্তা নাজনীন নাহার ঢাকা মেইলকে জানান, মৎস আইনে এ জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ। এ জাল ব্যবহার বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। এই সপ্তাহে পুনরায় অভিযান চালানো হবে।

ধামরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকি ঢাকা মেইলকে বলেন,  এ জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ। নদীতে এ জাল পাতা হলে মাছের পাশাপাশি মাছের পোনা, এমনকি মাছের ডিমও জালে আটকা পরে। বাজারে বিক্রি হবে না এমন মাছও ধরা পরে। সেগুলো ফেলে দেওয়া হয় এবং অধিকাংশই মারা যায়। এরমধ্যে অনেক বিপন্ন প্রজাতির মাছও থাকে অনেক সময় উপজেলা মৎস কর্মকর্তাকে বিষয়টিকে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হবে। 

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর