শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৫ আগস্ট ২০২২, ০৯:৪৬ পিএম

শেয়ার করুন:

ক্যাম্পের ভেতরে-বাইরে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে রোহিঙ্গারা
ফাইল ছবি

প্রায় প্রতিনিয়তই নানা কারণে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয় রোহিঙ্গারা। মাদক পাচার ছাড়াও নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কথা উঠে আসে সেসব খবরে। বেরিয়ে আসে নানা সিন্ডিকেটের কথা। তবে সম্প্রতি এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নাম এসেছে রোহিঙ্গা কামাল হোসেনের (৪০)।

অভিযোগ রয়েছে- কামাল রোহিঙ্গা হিসেবে রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে বসবাস করলেও একই সময়ে বাংলাদেশি এনআইডি কার্ড বানিয়ে দেশীয় নাগরিকের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। সেই সঙ্গে তিনি মানবপাচার ছাড়াও হুন্ডি ব্যবসা ও ইয়াবা পাচারের সঙ্গেও জড়িত।


বিজ্ঞাপন


এসব অভিযোগে গত ৪ এপ্রিল কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে হুন্ডি ব্যবসার সাড়ে ১১ লাখ টাকাসহ কামালকে আটকও করেছিল ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। তবে একমাস জেল খেটে জামিনে বের হয়েছেন তিনি। এরপরও থেমে নেই তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কামাল কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের এ ব্লক/শেড-৪৩ এর মৃত আবুল কাশেম ও আয়েশা খাতুনের ছেলে। ২০০৩ সালে মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রামে এসে একটি প্রতিষ্ঠানে দুই বছর পড়াশোনা করে হাফেজ ছালাহুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে জমিয়াতুল আহলিস সুন্নাহ নামে একটি সংস্থায় চাকরি শুরু করেন তিনি। সেখানে কিছুদিন কাজ করার পর প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হন। এরপর কামাল যোগ দেন জঙ্গি নেতা রোহিঙ্গা ছালামতুল্লার সঙ্গে। পরে তার অধীনে কুতুপালং কচুবনিয়ার একটি মসজিদে ইমামতিও করেন কিছুদিন।

Rohingya

সে সময় ইমামতির সুবাদে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক নারীকে বিয়েও করেন কামাল। এরপর সেখান থেকে চলে যান কক্সবাজারের লিংকরোডের দক্ষিণ মহুরিপাড়া আদর্শ শিক্ষা নিকেতনে। সেখানে কিছুদিন নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। তবে সেখানেও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে ওই প্রতিষ্ঠানও ছাড়তে হয় কামলকে।


বিজ্ঞাপন


অভিযোগ রয়েছে- নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে চাকরিচ্যুত হয়ে কামাল জড়িয়ে পড়েন হুন্ডি, মানবপাচার ও ইয়াবা কারবারে। এছাড়াও রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন আরসার সঙ্গেও রয়েছে নিয়মিত যোগাযোগ। সেই সঙ্গে অসৎ উপায়ে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের কচুবুনিয়া এলাকা থেকে ২০০৮ সালে বাংলাদেশি ভোটার তালিকায় নাম লেখান। যার এনআইডি নম্বর- ০৩১৭৩৫৭৩৪৭২৩৯। পাশাপাশি তার মাধ্যমে আরও অনেক রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। এমনকি কেউ কেউ সেসব বাংলাদেশি এনআইডি নিয়ে বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অকপটে বিষয়টি স্বীকার করেন তিনি। এ সময় ‘আমার মতো আরও অনেকে রয়েছে, যারা দ্বৈত নাগরিক সুবিধা ভোগ করছে’ বলেই কল কেটে দেন তিনি। পরে একাধিকবার ফোন দিলেও আর কল রিসিভ করেনি।

Rohingya

এ ব্যাপারে ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক ঢাকা মেইলকে জানান, গত ৪ এপ্রিল দুপুরে কুতুপালং ক্যাম্পে ব্লক রেইড করে রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারী ও অর্থ পাচারকারী কামাল হোসেনকে আটক করা হয়। ওই সময় তল্লাশিতে তার কাছ থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। তবে জব্দকৃত টাকার উৎস সম্পর্কে সে কিছুই জানাতে পারেনি।

এসপি নাইমুল আরও জানান, কামালের অর্থপাচার, হুন্ডি, চোরাচালানসহ জঙ্গি সংগঠনে জড়িত থাকার তথ্য আমাদের কাছে আছে। জব্দকৃত টাকাগুলো সে মূলত হুন্ডি ও জঙ্গি সংগঠনে ব্যবহার করার জন্য পাচার করছিল। তবে ঘটনার দিন পাচারের আগেই এপিবিএনের হাতে আটক হয়েছিল।

সার্বিক বিষয়ে অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ সামছুদ্দৌজা ঢাকা মেইলকে জানান, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত নই। রোহিঙ্গা কামাল যদি অবৈধভাবে বাংলাদেশি এনআইডি কার্ড বানিয়ে এর অপব্যবহার করে থাকে, সেটিও যেমন অপরাধ, আবার রোহিঙ্গা শরনার্থী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে থাকলে তা-ও অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। বিষয়টিতে প্রমাণ সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

/আইএইচ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর