শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ঢাকা

আশুগঞ্জ মোকামে কমছে ধান-চালের দাম, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা

আশিকুর রহমান মিঠু
প্রকাশিত: ০৩ আগস্ট ২০২২, ০৯:৩১ এএম

শেয়ার করুন:

আশুগঞ্জ মোকামে কমছে ধান-চালের দাম, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা

ভারত থেকে চাল আমদানির খবরে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ ধান-চালের মোকাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ধান ও চালের দাম কমতে শুরু করেছে।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ধান মণ প্রতি ৪০-৫০ টাকা ও চালে বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা কমেছে। বাজারে চালের দাম কমায় সরকারি গুদামে চাল সংগ্রহে সুবাতাস বইছে।


বিজ্ঞাপন


সরকারি মূল্যের তুলনায় বাজার মূল্য কিছুটা বেশি থাকায় এতদিন সরকারি গুদামে চাল দিতে মিলারদের ধীরগতি লক্ষ্য করা গেছে। দাম কমায় তারা এখন সরকারি গুদামে চাল সরবরাহের দিকে ঝুঁকছেন। এতে করে গত দুই বছর সংগ্রহ অভিযান লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হলেও মিলারদের এমন আগ্রহ বৃদ্ধিতে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের আশা করছে খাদ্য বিভাগ। খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহে মিলারদের আগ্রহ ও চালের গুণগত মান সন্তোষজনক হওয়ায় আরও ৪ হাজার টন চাল সংগ্রহের অনুমতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে চাল আমদানির খবরে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বৃহৎ চাল উৎপাদনকারী এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চালের দামে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালে কেজি প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এদিকে, গত ৩ বছর ধরে চালের বাজার মূল্য সরকারি সংগ্রহ মূল্যের চেয়ে বেশি থাকায় লোকসানের কথা বলে সরকারি গুদামে চাল দিতে আগ্রহী ছিলেন না মিলাররা। ফলে গত ৩ বছর বিভিন্ন মৌসুমে সরকারি সংগ্রহ অভিযান শতভাগ সফল হয়নি।

খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সনের আমন মৌসুমে ১১,১৬৮ টনের বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছিল মাত্র ৪৪৮ টন, বোরো মৌসুমে ২৮,৩৩১ টনের বিপরীতে ২৭,০৩১ টন, ২০২১ সনে বোরো মৌসুমে ৩৫,৫১৮ টনের বিপরীতে ৩২,২৩৮ টন। চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৩১ হাজার মেটিন চাল সংগ্রহে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খাদ্য বিভাগ ১৮৫ মিল মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে। গত ১৬ মে তারিখে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করে। মৌসুমের শুরুতে মিলারগণ চাল দিতে খুব একটা আগ্রহী ছিলেন না। এরপরেও গত আড়াই মাসে প্রায় ২০,১৪৯ টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। চলতি বছরও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সন্দিহান ছিল। তবে বাজারে চালের দাম কমায় মিলারগণ সরকারি খাদ্য গুদামে চাল দিতে আগ্রহী হয়েছেন। এমন কি তারা আরও বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবিও জানিয়েছেন। সরকারি বিভিন্ন গুদামে পাঠানো চালের গুণগতমান সন্তোষজনক হওয়ায় খাদ্য বিভাগ আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের বিপরীতে অতিরিক্ত আরও ৪ হাজার টন চাল সরবরাহের জন্য অনুমতি দিয়েছে।

b.bariya


বিজ্ঞাপন


ধান চাল ব্যবসায়ী হাসান ইমরান জানান, সরকার যখন ভারত থেকে চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে, তখন থেকেই বাজারে ধান চালের দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাজারে চালের বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) ১০০ টাকা কমেছে। এতে করে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহে মিল মালিকরা আগ্রহী হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে সরকার প্রতি কেজি চাল ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। অথচ প্রতি কেজি চালের বাজার মূল্য প্রায় ৪৩/৪৪ টাকা। তারপরও লোকসান দিয়ে মিল মালিকরা আশুগঞ্জের চালের গুণতমান অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে গুদামে চাল সরবরাহ করে আসছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা চাতালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. উবায়দুল্লাহ জানান, আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের ধারণ ক্ষমতা ২৫শ’ টন। কিন্তু গত আড়াই মাসে ২০,১৪৯ টন চাল সংগ্রহের নিমিত্তে চট্টগ্রাম বিভাগের হালিশহর ও দেওয়ান খাট সিএসডিসহ অন্যান্য বিভিন্ন খাদ্য গুদামে ১৭৪০০ টন চাল পাঠানো হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে খাদ্য গুদামগুলো পরিদর্শনকালে আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের পাঠানো চাল দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

জেলা অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. মনিরুল ইসলাম ভূইয়া জানান, ভারতীয় চাল আমদানির খবরে আশুগঞ্জ মোকামে চালের দাম প্রতি কেজিতে ২/৩ টাকা কমে যাওয়ায় মিল মালিকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। দাম কমায় মিল মালিকরা এখন সরকারি সংগ্রহের দিকে ঝুঁকছে। চালের গুণগত মান সন্তোষজনক হওয়ায় সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আরো ৪ হাজার টন বাড়িয়ে দিয়েছে খাদ্য বিভাগ।

জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. জাকারিয়া মোস্তফা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রতিটি গুদামে সরকারি বিধি মোতাবেক চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশুগঞ্জ খাদ্য গুদামের অনুকূলে চাল সরবরাহ আরও ৪ হাজার টন বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গুদামে চাল সরবরাহে মিলারদের আগ্রহ বেড়েছে এবং সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানোর দাবি করা হয়েছে। তাদের দাবিগুলো প্রস্তাব আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। তিনি এ বছর ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন শতভাগ সফল হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

টিবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর