মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

কলেজ শিক্ষকদের এমপিও পেতে এমপির পিএসের চাপ!

জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২২, ০৯:০০ পিএম

শেয়ার করুন:

কলেজ শিক্ষকদের এমপিও পেতে এমপির পিএসের চাপ!
ছবি: ঢাকা মেইল

পছন্দের কলেজ শিক্ষকদের এমপিও পেতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা কর্মকর্তাদের চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুনসুর রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) শফিকুল ইসলাম তরফদারের বিরুদ্ধে। 

বুধবার (২০ জুলাই) বিকেলের দিকে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালকের কার্যালয়ে যান শফিকুল ইসলাম তরফদার। 


বিজ্ঞাপন


ওই সময় নিজ দফতরে এমপির নথিপত্র যাচাই-বাছাই করছিলেন পরিচালক ড. কামাল হোসেন। সেখানে সহকারী পরিচালক ড. আবু রেজা আজাদ এবং প্রোগ্রামার ডলি রানী পালও উপস্থিত ছিলেন। বাইরে এমপিও প্রত্যাশী কলেজ শিক্ষকরা অপেক্ষা করছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শফিকুল ইসলাম তরফদার দলবল নিয়ে ঢোকার পর দরজা আটকে দেন। দীর্ঘক্ষণ তিনি ভেতরে কাটান। একপর্যায়ে ভেতর থেকে হট্টগোলের আওয়াজ বাইরে আসে। 

ওইসময় সেখানে অবস্থানকারী একজন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ভেতরে ঢুকে তাদের ছবি তোলেন। এনিয়ে তার ওপর চড়াও হন শফিকুল ইসলাম তরফদার ও রকি কুমার ঘোষ। 

পরিচালকের হস্তক্ষেপে রক্ষা পান গোয়েন্দা সংস্থার ওই সদস্য। এরপর দ্রুত তিনি শিক্ষা দফতর ছেড়ে যান। দেন-দরবার শেষে সন্ধ্যার পর আঞ্চলিক শিক্ষা দফতর ছেড়ে বেরিয়ে যান শফিকুল ইসলাম তরফদার। 


বিজ্ঞাপন


সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজশাহীর পুঠিয়া ইসলামিয়া মহিলা কলেজ শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির আবদার নিয়ে গিয়েছিলেন শফিকুল ইসলাম তরফদার। নথিপত্রে গরমিল থাকায় তাদের এমপিও আবেদন বাতিল হয়ে যায়। 

অভিযোগ রয়েছে, পুঠিয়া-দুর্গাপুর এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা কমিটিতে পছন্দের লোকজনদের বসিয়েছেন সংসদ সদস্য ডা. মুনসুর রহমান। এই দুই উপজেলায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। নিয়োগ নিয়েছেন এমপির কাছের লোকজন এমনকি কর্মচারীরা। নানান কায়দায় এসব নিয়োগের এমপিও বাগাচ্ছেন এমপির পিএস শফিকুল ইসলাম। 

এমপিও সংক্রান্ত তদবির নিয়ে যাওয়ার কথা ঢাকা মেইলের কাছে স্বীকার করেছেন পিএস শফিকুল ইসলাম তরফদার। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের পুঠিয়ার একটা কলেজের এমপিওর ডকুমেন্টস জমা দিয়েছে সেটার একটু হালকা তদবির করতে গিয়েছিলাম। ওরা অনলাইনে আবেদন করেছে আমরা একটু ইয়্যা করলাম তারা পাইছে কি না এটুকুই। এখন তো সবই অনলাইনে হয়। কিন্তু ইনফরমেশনটা পড়ছে কি না এটা জানার জন্য।’ 

পরিচালককে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে শফিকুল ইসলাম তরফদার বলেন, ‘চাপের কিছু নেই। আমি রাজশাহী কলেজের ইতিহাস বিভাগ থেকে পাস করেছি। ড. কামাল হোসেন সরাসরি আমার শিক্ষক। তাকে চাপ দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে আমার? আমি কি কিল-ঘুষি মেরে বলবো, এটা করতে হবে আপনার?’ 

‘আমি বিএনপি-জামায়াতের লোক নাকি যে ভয় করবো? আমি সরকারি দলের লোক, সরকারি এমপির ব্যক্তিগত সহকারী। আমি একটা জায়গায় যেতেই পারি কাজে কর্মে। এখানে তো চাপের কিছু নেই- দাবি তার।

নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রকিও নিজের একটা কাজে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে আমার ওখানেই দেখা। তিনি রাজনীতি করেন, একটা কর্মকর্তার কাছে তো যেতেই পারেন।’ 

তবে রকি কুমার ঘোষ স্বীকার করেন, শফিকুল ইসলাম তাকে ডেকে নিয়ে গেছেন। রকি বলেন, কলেজের কোনো শিক্ষকের কি আবেদনের লাস্ট ডেট ছিল না কি তাই শফিক ভাই ফোন দিয়ে বললো রকি চলো যাই তাই যাওয়া। আর কোনো কারণ না। 

গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। গোয়েন্দা সংস্থার কে গিয়েছিল আমার জানা নেই।’ 

এ বিষয়ে আঞ্চলিক পরিচালক ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রিন্সিপাল অসুস্থ থাকায় তাদের পুরো প্রতিষ্ঠানটাই এমপিও নিতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ঢাকা থেকে বলেছে এরকম কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে এখনও দিলে নেবে। তাই বাদ পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে নতুন করে চাওয়ার কারণে তিনি এসেছিলেন। কোনো যাচাই ছাড়াই টেলিফোন অর্ডারের কারণে নেওয়া হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আটজন শিক্ষকের মধ্যে ছয়জনের যদি সমস্যা থাকে তবে বাদ যাবে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটাই কেন বাদ যাবে? সে কারণে মাউশির সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া হয়েছে। তারপরও মাউশি যাচাই করবে।’ 

নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতির আসা প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, ‘রকি কুমার রাজশাহী-৫ আসনের এমপির পিএসের সঙ্গেই এসেছিল। সেও রাজনীতি করে সেই সুবাদে এক সঙ্গেই এসেছিল।’ 

এমপিও তদবিরে আঞ্চলিক পরিচালকের দফরে পিএসকে পাঠানোর কথা অস্বীকার করেন রাজশাহী-৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মুনসুর রহমান। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, ‘যেহেতু কামাল সাহেব শফিকুলের কলেজের শিক্ষক, তাই এমপিওর কাগজটা জমা দেওয়ার জন্য তাকে পাঠিয়েছিলাম। আর কিছু না।‘ 

এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ ও এমপিও বাণিজ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব ভুয়া ও ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে কেউ এখনও অভিযোগের আঙ্গুল তুলতে পারেনি। যদি প্রমাণ থাকে তো বলেন কোথায় কোনটা আছে দেখতেছি। কোথাও কোনো প্রমাণ নেই। আমি কামাই করি অন্য জায়গা থেকে। আমার পারিবারিক অবস্থা বিরাট।’ 

এইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর