ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরা উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁ। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ বিহার ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অর্ধশতাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা। আর এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শিশু-কিশোরদের ঢল নেমেছে। নওগাঁর বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ও দর্শনীয় স্থানে ঈদের দিন থেকে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে শিশু-কিশোর ও নারী-পুরুষদের উপস্থিতি বেড়েছে ব্যাপক হারে।
বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বদলগাছীর ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, হলুদ বিহার, ধামইরহাটের জাতীয় উদ্যান আলতাদিঘী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত আত্রাইয়ে কাছারি বাড়ি, মান্দার ঐতিহাসিক কুশুম্বা মসজিদ, পত্নীতলায় দিবর দিঘী।
বিজ্ঞাপন
এছাড়া নওগাঁ শহরে অবস্থিত জেলা পরিষদ পার্ক, আব্দুল জলিল শিশু পার্ক, হাঁসাইগাড়ি বিল, ডানা পার্ক, বলিহার রাজবাড়ী উল্লেখযোগ্য। শিশু-কিশোর মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন মিলে ঘুরে ঘুরে ঈদ আনন্দ উপভোগ করেছে। এসব দর্শনীয় স্থানে পার্শবর্তী জেলা জয়পুরহাট ও বগুড়া থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণ-পিপাসুরা।
ঈদের দিন বিকেল থেকে নওগাঁ শহরের বাইপাস সড়ক সংলগ্ন আব্দুল জলিল শিশু পার্কে শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদের আনন্দকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিনোদনপ্রেমীরা ছুটে যান শহরের প্রাণকেন্দ্র মুক্তির মোড় সংলগ্ন জেলা পরিষদ পার্কে।
জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান মান্দার ঐতিহাসিক কুশুম্বা মসজিদে বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড় দেখা গেছে। নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের উপস্থিতি ছিল অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। ভ্রমণ-পিপাসুরা পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রাচীন এই মসজিদটি ঘুরে দেখেন।
দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে আগামীর প্রজন্মের কাছে পরিচিত করে তুলতে ও নির্মল আনন্দ উপভোগ করতে অনেকেই বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে ছুটে আসেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে। ঈদের দিন থেকে বিভিন্ন নানান বয়সী মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। সাধারণত বছরের অন্যান্য সময় এখানে যত পর্যটক আসেন, ঈদের ছুটিতে কয়েকগুন বেশি সমাগম ঘটে। তাই ঈদের আনন্দ উপভোগের জন্য পাহাড়পুরসহ সকল দর্শনীয় স্থানগুলো দেখতে দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।
নওগাঁ শহরের আব্দুল জলিল শিশু পার্কে বেড়াতে এসেছেন সৌরভ। তিনি বলেন, ইদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে পরিবারের সবাইকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে এসেছি। এখানে এসে ভালোই লাগছে। অন্য দিনগুলোতে সময় পাওয়া যায় না ঈদের সময় ছুটি থাকে এজন্য এ সময়টাকেও কাজে লাগানো যায়। এছাড়াও বাচ্চারা খুব ঘুরতে পছন্দ করে।
বিজ্ঞাপন
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারে ঘুরতে নাহিদ বলেন, ঈদে শহরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে ঘুরতে বের হয়েছি বন্ধুরা মিলে। বেশ ভালোই লাগছে।
বগুড়া থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার দেখতে এসেছিলেন ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম এখানে বেড়াতে আসব। কিন্তু এত দিন সময়-সুযোগের অভাবে আসতে পারিনি। এবার ঈদের ছুটিতে দুই বন্ধু মিলে দিনাজপুর থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে পাহাড়পুর এসেছি।
জয়পুরহাট থেকে ঘুরতে আসা মাহমুদা আক্তার বলেন, দুই বছর পরে ঘুরতে এসেছি পরিবারের সঙ্গে। এখানকার বিভিন্ন স্থাপনা দেখে ভালো লেগেছে।
রাণীনগর থেকে হলুদ বিহার ঘুরতে এসেছেন সোহেল রানা। বলেন, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পরিবারসহ ঘুরতে এসেছি। হলুদ বিহার এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক দর্শনিয় স্থান। লোকসমাগম দেখে ভালোই লাগছে। হলুদ বিহার খুব সুন্দর একটি জায়গা। দেখলে মন ভরে যায়। সময় পাইলে আবার এখানে আসবো।
মান্দার ঐতিহাসিক কুশুম্বা মসজিদ দেখতে রাজশাহীর বাঘা থেকে স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের নিয়ে এসেছেন আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, আমি এর আগে বেশ কয়েকবার এখানে এসেছি। তবে পরিবারের অন্য সদস্যরা কেউ দেখেনি। এতদিন আমার মেয়েরা ইন্টারনেট এবং বইয়ে প্রাচীন স্থাপনা কুশুম্বা মসজিদ সম্পর্কে পড়েছে। এখানে এসে তারা এই স্থাপনাটির নির্মাণশৈলী ও বিভিন্ন কারুকাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছে।
পার্শ্ববর্তী জয়পুরহাট জেলা শহর থেকে আলতাদিঘীতে পরিবার নিয়ে এসেছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা মিলন হোসেন। তিনি বলেন, এর আগে কখনো আলতাদিঘী উদ্যানে আসা হয়নি। আমার স্ত্রীর অনুরোধে এখানে ঘুরতে এসেছি। বিশাল দিঘী ও শালবন দেখে সত্যিই অনেক মুগ্ধ হয়েছি। কি চমৎকার পরিবেশ। সবমিলে খুবই ভালো লাগছে।
পাহারপুর বৌদ্ধ বিহার ও যাদুঘরের কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম বলেন, প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একানে অনেক দর্শনার্থীরা আসে ঘুরতে। তবে ঈদের কারনে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে। দর্শনার্থীরা নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারছেন। কোনো ধরনের সমস্যা এখনও হয়নি।
প্রতিনিধি/এএ

