রোববার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

তীব্র শীতে বিপাকে মুন্সিগঞ্জের ৯২টি ভাসমান বেদে পরিবার

শুভ ঘোষ, মুন্সিগঞ্জ
প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৪:২৪ পিএম

শেয়ার করুন:

তীব্র শীতে বিপাকে মুন্সিগঞ্জের ৯২টি ভাসমান বেদে পরিবার
তীব্র শীতে জুবুথুবু মুন্সিগঞ্জের ভাসমান বেদেপল্লী; রোববার সকালে মিরকাদিম থেকে তোলা ছবি—ঢাকা মেইল।

‘আল্লাহ ছাড়া আমাদের আর কেউ নেইরে বাপু, দু-পয়সা দিয়ে কেউ সাহায্য করে না। তীব্র শীতে ছোট একটা ডিঙ্গি নৌকায় দুই সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে আমাদের সংসার। কেউ একটু গরম কাপড় নিয়ে আসবে, এই আশায় সারাদিন তীর্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকি!’ 

দু’চোখ ভরা আক্ষেপ আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন মুন্সিগঞ্জের মিরকাদিমের ভাসমান বেদেপল্লীর বাসিন্দা লাইজু বেগম। তার এই আর্তনাদ কেবল একজন নারীর নয়, বরং ধলেশ্বরীর কোল ঘেঁষে বসবাস করা ৯২টি ভাসমান পরিবারের কয়েকশ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিচ্ছবি।


বিজ্ঞাপন


পৌষের হাড়কাঁপানো শীতে যখন সাধারণ মানুষ লেপ-কম্বলের উষ্ণতায় আশ্রয় খোঁজে, তখন মিরকাদিমের বেদেপল্লীতে চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। 

এখানে নদীই জীবন, আর সাত ফুটের একফালি ডিঙ্গি নৌকাই একমাত্র ঠিকানা। এই ছোট্ট পরিসরেই গাদাগাদি করে রাত কাটে পরিবারের চার-পাঁচজন সদস্যের। 

সরজমিনে দেখা যায়, কাকডাকা ভোরে কুয়াশার চাদরে ঢাকা নদীপাড়ে জবুথুবু হয়ে বসে আছেন নারীরা। শিশুদের চোখেমুখে ঠান্ডার তীব্রতায় মলিন ছাপ। কনকনে শীত আর হিমেল বাতাসে থরথর করে কাঁপছে অনেকে, কিন্তু গায়ে দেওয়ার মতো নেই সামান্য একটি সোয়েটার বা চাদর।

আরও পড়ুন—


বিজ্ঞাপন


monshi

শীত কেবল তাদের শরীরে কাঁপন ধরায়নি, আঘাত হেনেছে পেটেও। ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে মাছ ধরা বা জীবিকার সন্ধানে বাইরে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে পল্লীর অনেক ঘরে এখন উনুন জ্বলছে না ঠিকমতো। অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে শিশুদের। পল্লীর বাসিন্দা বিউটি বেগম ক্ষোভের সুরে বলেন, ‘আমরা তো এদেশেরই নাগরিক, ভোটারও হয়েছি। অথচ বিপদের সময় আমাদের খবর নেওয়ার কেউ নেই। অভাবের কারণে ঠান্ডায় সর্দি-কাশিতে ভুগছি আমরা, অথচ ওষুধ কেনার পয়সাটাও হাতে নেই।’

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, জেলায় তাপমাত্রা ১২ থেকে ২৩ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলেও বাতাসের উচ্চ আর্দ্রতার কারণে শীতের কামড় অনেক বেশি। বিশেষ করে নদী অববাহিকায় বসবাসরত এই মানুষেরা প্রকৃতির এই রুদ্ররূপের সবচেয়ে বড় শিকার। শাকিল ও রফিকের মতো কর্মজীবী পুরুষরা জানান, ঋণের কিস্তি আর পরিবারের ক্ষুধার জ্বালায় এই শীতেও কাজে নামতে হয় তাদের। কিন্তু পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে শরীরে সর্দি-জ্বর নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন—

dhaka-mail

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, গত শনিবার গভীর রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। তবে নারী ও শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের ঘাটতি এখনো রয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এখন কেবল দেখার বিষয়, তীব্র শীতের এই মরণকামড় থেকে বাঁচতে লাইজু বেগমদের অপেক্ষার অবসান কবে ঘটে।

প্রতিনিধি/একেবি

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর