বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

খলিফাদের নামে ওসমান হাদির ৩ ভাইয়ের নাম রাখেন পরিবার

জেলা প্রতিনিধি, ঝালকাঠি
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

খলিফাদের নামে ওসমান হাদির ৩ ভাইয়ের নাম রাখেন পরিবার

ওসমান, ওমর এবং আবু বক্কর (রা.) ছিলেন ইসলামের চার খলিফার মধ্যে প্রথম তিনজন- আবু বক্কর (প্রথম খলিফা), ওমর (দ্বিতীয় খলিফা) এবং ওসমান (তৃতীয় খলিফা); এরা সবাই ছিলেন রাসুল (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবি, তার শ্বশুর এবং ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, যারা রাসুল (সা.) এর ইন্তেকালের পর মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দিয়েছেন।

আর এই তিনজন খলিফার নামে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ শরিফ ওসমান হাদির তিন ভাইয়ের নাম রাখা রেখেছেন তার পরিবার। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শহিদ শরিফ ওসমান হাদি ছিলেন সবার ছোট।


বিজ্ঞাপন



ওসমান হাদির বড় ভাই মাওলানা আবু বক্কর ছিদ্দিক বরিশাল গুঠিয়ার ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব।

তার মেঝো ভাই ওমর ফারুক ঢাকায় ব্যবসা করেন।

তার বড় বোনের নাম মাহবুবা বেগম। মেঝো বোনের নাম মারুফা ইসলাম এবং ছোট বোনের নাম মাসুমা আক্তার।

তার বাবা প্রয়াত মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা আব্দুল হাদি। 


বিজ্ঞাপন


তিনি ছিলেন একজন আদর্শ আলেম দীর্ঘদিন ধরে তিনি দ্বিনি শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কুরআন–হাদিসের গভীর জ্ঞান, সহজ-সরল জীবনযাপন এবং নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলাই ছিল তার জীবনের মূল লক্ষ্য। তার পরিবারের ছয় সন্তানকেও তিনি সেভাবেই তৈরি করেছেন।

ওসমান হাদির জন্মস্থান ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা খাসমহল এলাকায়। হাদির বাড়ির সামনে দাঁড়ালে চোখে পড়ে এক নিঃশব্দ সরু পথের পাশে একটি ছোট টিনের ঘর। যেখানে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন শরিফ ওসমান বিন হাদি। কোনো অট্টালিকা নয়, কোনো বিলাসিতা নয়। এই সাধারণ টিনের ঘর থেকেই উঠে এসেছিল এমন একজন মানুষ, যিনি রাজধানী ঢাকার রাজপথের শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলেন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনীতি এবং নতুন রাষ্ট্রচিন্তার পক্ষে। বাড়িতে আবেগ জড়িত কণ্ঠে এলাকাবাসীর বক্তব্য, বিপ্লবী বড় অট্টালিকা থেকে আসে না, ওসমান হাদি উঠে এসেছিল এই টিনের ঘর থেকেই।

ঝালকাঠির এন এস কামিল কামিল মাদরাসায় হাদির শিক্ষাজীবনের শুরু। পরে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২৪ সালে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি অনেকের কাছে বিশেষ পরিচিতি পান। এরপর টকশো ছাড়াও ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দেওয়া ঝাঁজালো বক্তব্যে তিনি অনেকের কাছে হয়ে ওঠেন অনন্য এক সাহসী মুখের প্রতিচ্ছবি। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার লড়াইয়ে তিনি এক সময় প্রাইভেট পড়িয়েছেন। পরে কোচিং সেন্টার সাইফুরসসহ বিভিন্ন কোচিংয়ে শিক্ষকতাও করেন। সবশেষ ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওসমান হাদি শিক্ষকতা করছিলেন। তিনি বরিশালের রহমতপুরে বিয়ে করেন। তার এক বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।

নলছিটি হাইস্কুল রোড জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হানযালা নোমানী বলেন, ওসমান হাদির পরিবার কোরআন-হাদিসের শিক্ষা, নৈতিকতা ও দ্বিনি আদর্শে গড়ে ওঠা একটি পরিবার। তার বাবা একজন নামকরা আলেম ছিলেন। তিনি সব সময় ন্যায়ের কথা বলেছেন।

ওসমান হাদির ছোট বোন জামাই আমির হোসেন হাওলাদার বলেন, সারাদেশের মানুষ ওরে যেভাবে ভালোবাসত সেই ভালোবাসা এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। সেটা তার অর্জন ছিল। পরিবারের সবার কাছে ওসমান ছিল অত্যন্ত স্নেহের ও আদরের। এলাকাবাসীর কাছেও প্রিয় ছিল।

তিনি বলেন, ওসমান হাদির হত্যাকারীকে আইনের আওতায় এনে দ্রু বিচারের দাবি জানাই।

গত ১২ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে হত্যার উদ্দেশে তাকে গুলি করা হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওসমানকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১৫ ডিসেম্বর তাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর ওসমান হাদির মৃত্যু হয়। পরে তাকে দেশে এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে (জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে) দাফন করা হয়।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর