রোববার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

আটক যুবলীগ নেতাকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও বিএনপি নেতা

জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:৪২ পিএম

শেয়ার করুন:

আটক যুবলীগ নেতা ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও বিএনপি নেতা
সখিপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মাজহারুল ইসলাম সরদার।

আইনের আশ্রয়স্থল থানার ভেতরেই অনিরাপদ হয়ে উঠেছে সাংবাদিকতা— এমনই এক উদ্‌বেগজনক ঘটনার সাক্ষী হলো শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানা। আটক এক যুবলীগ নেতাকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে ক্ষুব্ধ এক বিএনপি নেতা ও তার সহযোগীরা পেশাগত দায়িত্ব পালনরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাতের এই ঘটনায় আহত হয়েছেন দৈনিক নয়া দিগন্তের মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার রাসেল শিকদার এবং এশিয়ান টেলিভিশনের স্থানীয় প্রতিনিধি রুহুল আমিন জুয়েল। হামলার পর দুজনকেই উদ্ধার করে ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।


বিজ্ঞাপন


ভুক্তভোগী সাংবাদিক ও পুলিশ সূত্র জানায়, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর অংশ হিসেবে শনিবার সন্ধ্যায় ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আক্তার হোসেনকে আটক করে পুলিশ। তাকে থানা হেফাজতে রাখার খবর পেয়ে সখিপুর থানা বিএনপির সদস্য সচিব মাজহারুল ইসলাম সরদার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে থানায় হাজির হন এবং আটক যুবলীগ নেতাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।

আরও পড়ুন

শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ গ্রেফতার ২

থানার ভেতরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে ঘটনার ছবি ও তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম সরদার ও তার সহযোগীরা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন বলে অভিযোগ। এসময় তাদের মারধর করা হয় এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা করা হয়। পরে পুলিশ সদস্যরা হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

আহত সাংবাদিক রাসেল শিকদার বলেন, আমরা খবর পেয়ে থানায় যাই এবং ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করি। থানার ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেই হঠাৎ করে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। থানার মতো একটি জায়গায় সাংবাদিকদের ওপর এমন আচরণ লজ্জাজনক ও ভয়ংকর। ঘটনার পর থেকে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।


বিজ্ঞাপন


অপর আহত সাংবাদিক রুহুল আমিন জুয়েল বলেন, আমি দায়িত্ব পালন করছিলাম। কোনো উসকানি ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা করা হয়। থানার ভেতর যদি সাংবাদিক নিরাপদ না থাকেন, তাহলে আমরা কোথায় যাব?

shariatpur-2404160642

ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জেলার সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা। শরীয়তপুর ইলেকট্রনিক জার্নালিস্ট মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব নুরুল আমিন রবিন বলেন, এ ধরনের হামলা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের রাজনৈতিক হামলার শিকার হতে হবে— এটা মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম সরদারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে একাধিক বার ফোন করলেও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুর রহমান কিরণ বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। আওয়ামী লীগের দোসরদের পক্ষে বিএনপির কেউ থানায় গিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় আমি নিন্দা জানাই এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সখিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দীন বলেন, অপারেশন ডেভিল হান্টে এক যুবলীগ নেতাকে আটক করা হয়েছে। তাকে ছাড়াতে বিএনপি নেতা চাপ সৃষ্টি করেন। যাচাই-বাছাই ছাড়া তাকে ছাড়তে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিকরা লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

থানার ভেতরে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে— আইনের ছায়ায় থেকেও কি নিরাপদ নয় সাংবাদিকতার পেশাগত দায়িত্ব?

প্রতিনিধি/এসএস

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর