বিশ্ব যখন আধুনিক হচ্ছে, তখন বিভাগীয় শহর রাজশাহী যেন চলছে উল্টোপথে। রাজশাহী নগরীর সড়কে প্রায় তিনদশক আগে চালু হওয়া সিগন্যাল বাতি নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কাজ না করায় কোটি টাকার এই ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি ‘শো-পিস’ এর মতো পড়ে আছে। এতে ট্রাফিক পুলিশকে ঝুঁকি নিয়েই সড়কের মাঝখানে দাাঁড়িয়ে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে সড়কে প্রায়ই ঘটছে ছোটবড় নানা দুর্ঘটনা। তবু এ ব্যাপারে ভ্রুক্ষেপ নেই সংশ্লিষ্টদের।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এর তথ্যমতে, ১৯১৮ সালে লাল, হলুদ ও সবুজ- এ তিন রঙের ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিশ্বে প্রথম চালু হয়েছিল। অবশ্য আরেক গণমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ-এর রিপোর্টে বলা করা হয়, ১৯২০ সালে মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরে প্রথম তিন রঙের ট্রাফিক বাতি চালু হয়। তবে রাজশাহী নগরীতে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়েছিল ১৯৯৪ সালে। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অন্যতম উপদেষ্টা, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এবং সদর আসনের সংসদ সদস্য বিএনপি নেতা প্রয়াত অ্যাডভোকেট কবির হোসেনের উদ্যোগে এসব ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হয়।
বিজ্ঞাপন
![]()
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট, সোনাদিঘির মোড়, রেলগেট, রেলস্টেশন, লক্ষিপুর মোড়, ঘোষপাড়া মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি রয়েছে। তবে কোনোটা ভাঙা, কোনো বাঁকা হয়ে ঝুলছে। অনেক বাতির ওপরে ঝুলা-ময়লার স্তূপ জমে গেছে। রেলস্টেশন এলাকায় সড়কের একাধিক জায়গায় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো রয়েছে। সেখানেই পুরাতন বাস টার্মিনাল।
সরেজমিনে সেখানে দাঁড়াতেই এক চা বিক্রেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, ১০-১২ বছর থেকে বাতি বন্ধ দেখছি। এখানে সারাদেশের বাস আসে, ঢাকার গাড়ি আসে। সব কাউন্টার এখানে। কিন্তু বাতি জ্বলে না। ট্রেন আসে এখানে এতবড় স্টেশন। হাজার হাজার রিকশা অটোরিকশা চলে। কিন্তু বাতি বন্ধ। সেজন্য মাঝেমধ্যে অ্যাক্সিডেন্ট দেখি। এরা ওকে গালাগালি করে, ক্যাচাল লাগে। বাতিগুলা চালু করা দরকার।
মনির হোসেন নামে এক রিকশাচালক বলেন, এগুলা বাতি ম্যালা আগে জ্বলতো, এখুন জ্বলে না। এখন কোনো আইন চাইন কেউ মানে না। অ্যাক্সিডেন্ট হয়, আমারে রিকশা চালাইতে সমিস্যা হয়।
বিজ্ঞাপন
৬০ বছর বয়সী আরেক রিকশা চালক বলেন, সিগন্যাল বাতি বন্ধ হয়্যা আছে। চালু করা দরকার। নাই তাই রিকশা চালাইতে সমস্যা হইছে।
রবিউল নামে এক গাড়িচালক বলেন, আগে সিগন্যাল দূর থেকে দ্যাখা যাইতো। এখন জ্বলে না। আমাদের চলাচলে সমস্যা হয়।
![]()
হাসান নামে আরেক গাড়িচালক বলেন, সিগন্যাল বাতি চালু হওয়া দরকার। কেউ আমরা নিয়ম মানি না। কেউ কেউ উলট পালট করে গাড়ি নিয়ে চলে যায়। সেজন্য অ্যাক্সিডেন্ট হয়। সিগন্যাল বাতি চালু হলে ও নিয়ম মানলে এগুলা অ্যাক্সিডেন্ট কম হবে।
রেড ক্রিসেন্টের এক সদস্য বলেন, এগুলো চালু করা দরকার। আমাদের রাস্তা পারাপারে সমস্যা হয়। বিশেষভাবে রাতে অনেক অসুবিধা হয়। গাড়িঘোড়ার ভোগান্তি হয়। সেজন্য বাতিগুলো যেন খুব তাড়াতাড়ি রিপেয়ারের ব্যবস্থা করে। নগরীর বাসিন্দারা দাবি জানিয়ে বলেন, এ লাইটগুলো জরুরিভাবে মেরামত ও সংস্কার করা দরকার।
রাজশাহী মেট্রোপলিন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. নূর আলম সিদ্দিকী ঢাকা মেইলকে বলেন, সড়ক বা সিগন্যাল বাতির সিস্টেমগুলো শুধু একমাত্র পুলিশই যে ভূমিকা রাখতে পারে, তা নয়। এর সঙ্গে আরও অন্যান্য স্টেকহোল্ডার আছে। যেমন সিটি করপোরেশন আছে, আরডিএ আছে বিআরটিএ আছে। আমিও শুনেছি, এখানে সিগন্যাল বাতি ছিল, এখন রাজশাহীতে এটা নেই। বাট এটা ইনস্টল করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যারা আছে, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, চিঠি দিয়েছি। আশা করি, এটা একসময় এটা আলোর মুখ দেখবে। সিগন্যাল বাতি যদি হয়, সেটা অবশ্যই ট্রাফিক সিস্টেম মেইনটেন্স করার জন্য খুবই ভাল এবং নগরবাসীর জন্য ভাল হবে বলে মনে করি।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক পার্কন চৌধুরির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে একাধিকবার অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। আর অন্য কর্মকর্তারাও এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।
এছাড়া এ ব্যাপারে রাজশাহী সিটি করপোরেশেনে (রাসিক) উন্নয়ন শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, এটা আমার শাখার নয়, এটা বিদ্যুৎ শাখা দেখে।
এরপর বিদ্যুৎ শাখায় যোগাযোগ করা হয়। রাসিকের বিদ্যুৎ শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী এবিএম আসাদুজ্জামান সুইট ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি ২০২২ সালে এ দায়িত্বে এসেছি। এরপর থেকে বন্ধই দেখছি সব সিগন্যাল বাতি। ওগুলো ১৯৯৪ সালে চালু হয়েছি। এটার বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ভাল বলতে পারবেন।
পরে রাসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আহমদ আল মঈনের শাখায় গিয়ে তাকে দফতরে পাওয়া যায়নি। ওই শাখার এক কর্মচারি বলেন, স্যার সম্ভবত ঢাকা গেছেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। ওই দফতরের এক কর্মচারি বলেন, স্যার মিডিয়ায় কথা বলেন না। আপনি অন্য শাখায় যোগাযোগ করতে পারেন।
প্রতিনিধি/টিবি

