গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার যেসব জমি একসময় অনাবাদি ছিল কিংবা যেখানে খুব সামান্য ফসল হতো, সেসব জমিতে এখন প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি আলু উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে মাঠের পর মাঠ দিগন্তজোড়া সবুজের সমাহারে ছেয়ে গেছে।
সম্প্রতি উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কচুয়া ও রামনগর মৌজা ঘুরে মিষ্টি আলু চাষের এই চোখজুড়ানো দৃশ্য দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগেও এই এলাকায় মিষ্টি আলুর চাষ ছিল অত্যন্ত সীমিত। তখন কৃষকরা মূলত ধান চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু জমির প্রকৃতি ধান চাষের উপযোগী না হওয়ায় ফলন খুব কম হতো। ফলে অনেক জমি পরিত্যক্ত পড়ে থাকত। উৎপাদন খরচের তুলনায় লাভ না হওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তবে মিষ্টি আলু চাষের বিস্তারে এই পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে পশ্চিম কচুয়া ও রামনগর মৌজায় প্রায় ২১৬ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের হাইব্রিড মিষ্টি আলুর চাষ হচ্ছে।
কৃষকদের ভাষ্যমতে, প্রতি শতকে গড়ে আড়াই থেকে তিন মণ মিষ্টি আলু উৎপাদিত হচ্ছে। বাজারে প্রতি মণ আলু ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়ায় লাভের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। ফলে মিষ্টি আলু এখন কৃষকদের আস্থার জায়গা দখল করে নিয়েছে। এই চাষের বড় সুবিধা হলো এর স্বল্পমেয়াদি প্রকৃতি; মাত্র ৯০ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা যায়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় অল্প পুঁজিতেই বেশি লাভ করা সম্ভব। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, জমি থেকেই আলু বিক্রি করা যায়। পাইকাররা সরাসরি খেত থেকে আলু সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন।
আলু চাষি ছালজার রহমান বলেন, ‘আগে ধান চাষ করতাম, কিন্তু ফলন হতো না বললেই চলে। অনেক জমি ফাঁকা পড়ে থাকত। এখন সব জমিতে মিষ্টি আলুর আবাদ করেছি। এতে খরচ কম, কিন্তু লাভ বেশি। এবার ৮ বিঘা জমি থেকে অনেক ভালো মুনাফা পাব বলে আশা করছি।’
শফিকুল ইসলাম নামের আরেক কৃষক জানান, মিষ্টি আলু চাষ করে এখন তার সংসারের অভাব দূর হয়েছে। আগে যে জমি পরিত্যক্ত ছিল, এখন সেখান থেকেই নিয়মিত আয় হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
উপজেলার উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘মিষ্টি আলু একটি কন্দাল ফসল। বৈরী আবহাওয়াও এই খেতের তেমন ক্ষতি করতে পারে না। তা ছাড়া অল্প সময়ের ফসল হওয়ায় উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি। এ কারণেই কৃষকরা মিষ্টি আলু চাষে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।’

এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, কচুয়া ইউনিয়নের মাটি ও আবহাওয়া মিষ্টি আলু চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ, সঠিক সার ব্যবস্থাপনা ও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মিষ্টি আলু চাষ এ অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করছে।
প্রতিনিধি/একেবি

