শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চট্টগ্রামে লুটের অস্ত্রে বাড়ছে টার্গেট কিলিংয়ের শঙ্কা

ইব্রাহিম খলিল
প্রকাশিত: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০২ পিএম

শেয়ার করুন:

চট্টগ্রামে লুটের অস্ত্রে বাড়ছে টার্গেট কিলিংয়ের শঙ্কা

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রে টার্গেট কিলিংয়ের শঙ্কা বাড়ছে। এ নিয়ে জনমনে বাড়ছে উদ্বেগও। বিশেষ করে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে টার্গেট কিলিংয়ে এসব অস্ত্রের ব্যবহার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন প্রার্থী ও রাজনীতিকসহ সাধারণ নাগরিকরা।

এই আশঙ্কা থেকে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‌‘সব প্রার্থীর সঙ্গে গানম্যান চাই’ শিরোনামে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি শাহেদ আকবর। তার দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্ট্যাটাসের নিচে অসংখ্য কমেন্টও দিয়েছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা।


বিজ্ঞাপন


শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে জানতে চাইলে শাহেদ আকবর বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা আমাদের ভাবাচ্ছে এবং উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তাই আমি প্রার্থীদের জন্য গানম্যান দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। তবে শুধু প্রার্থীর নিরাপত্তা দিলে হবে না। যৌথ অভিযানের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে থেকেই সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র ছিল। কিন্তু চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা থেকে যেসব অস্ত্র লুট হয়েছে তা পেয়ে তাদের দাপট আরও বেড়ে গেছে। তার অধিকাংশই এখনও উদ্ধার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার যে কারও জন্যই হুমকি।’

শাহেদ আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহকে টার্গেট করে গুলি করা হয়েছে। ওই ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। এরশাদ উল্লাহকে আল্লাহ বাঁচিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দলের প্রার্থীসহ নেতা-কর্মীদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুন্ড) আসনে বিএনপির প্রার্থী কাজী সালাউদ্দিন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘যারা নির্বাচন চায় না তারা টার্গেট কিলিংয়ের মতো জঘন্য কাজ করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত অবিলম্বে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা।’


বিজ্ঞাপন


তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রগুলো এখন সন্ত্রাসীদের হাতে। এসব অস্ত্র যতক্ষণ তাদের হাতে থাকবে, ততক্ষণ সাধারণ মানুষ নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। প্রার্থীদের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান জরুরি হয়ে পড়েছে।’

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এম এ হাশেম রাজু বলেন, ‘চট্টগ্রামে একাধিক টার্গেট কিলিং হয়েছে। যার বেশিরভাগ রাজনীতিকরা। তাদের নিরাপত্তার জন্য গানম্যান দেওয়া উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র অনেক আগেই উদ্ধার করা উচিত ছিল। তবে সময় শেষ হয়ে যায়নি। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। টার্গেট কিলিং বন্ধ করার জন্য তিনি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার প্রতি জোর দাবি জানাই।’

এনসিপি চট্টগ্রাম উত্তর জেলার যুগ্ম সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী মুহাম্মদ একরামুল হক বলেন, ‘আত্মীয়স্বজন, কর্মী-সমর্থক এবং শুভাকাঙ্ক্ষিরা আমাকে বারবার ফোন করে খোঁজখবর নিয়ে সতর্কভাবে চলাফেরা করার পরামর্শ দিচ্ছেন। টার্গেট কিলিং অবশ্যই আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। কিন্তু এতে আমরা ভীত নই। অন্তর্বর্তী সরকারের বড় ব্যর্থতা হলো অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘একে তো সন্ত্রাসীদের হাতে আগে থেকে অস্ত্র ছিল, থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র তাদের শক্তি বাড়িয়েছে। সরকার চাইলে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা কোনো বিষয় নয়। কিন্তু কী কারণে তারা এই জায়গায় ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের প্রার্থী প্রকৌশলী মোহাম্মদ লোকমান বলেন, ‘টার্গেট কিলিং পুরো দেশবাসীর জন্য উদ্বেগের বিষয়। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমরা ভীত নই। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে আহ্বান জানাচ্ছি প্রার্থীসহ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।’

৫ আগস্ট-পরবর্তী থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রগুলো অতিসত্বর উদ্ধারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অস্ত্রগুলো উদ্ধার করতে না পারার কারণে আমরা আরও বেশি উদ্বিগ্ন। সীমান্তে আরও কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। নতুবা এ ধরনের টার্গেট কিলিংসহ বিশৃঙ্খলা বাড়বে। হাদির ওপর হামলা দেশবাসীকে সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে আবারও ঐক্যবদ্ধ করেছে।’

সিএমপির তথ্যমতে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি এখনও উদ্ধার হয়নি। এসব অস্ত্র-গুলি ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। লুট হওয়া অস্ত্র কেনাবেচায় পুলিশেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন, অর্থাৎ ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। সেই সময় ৮১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৪ হাজার ৩২৪টি গুলি লুট হয়। বেশির ভাগ অস্ত্র-গুলি এখনও উদ্ধার হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার ও মুখপাত্র আমিনুর রশিদ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। থানা থেকে লুট হওয়া ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২৭৫ গুলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। আরও বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধে আমরা জিরো টলারেন্সে আছি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন। ঢাকার ঘটনায় ইতোমধ্যে একজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রামেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল করতে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি।’

প্রতিনিধি/এফএ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর