শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

চুয়াডাঙ্গায় শীতে ডায়রিয়ার দাপট, ১৭ দিনে হাসপাতালে ভর্তি দেড় হাজার

জেলা প্রতিনিধি, চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশিত: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৯ পিএম

শেয়ার করুন:

চুয়াডাঙ্গায় শীতে ডায়রিয়ার দাপট, ১৭ দিনে হাসপাতালে ভর্তি দেড় হাজার

চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডায়রিয়া পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। গত ১৭ দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশুসহ দেড় হাজারের বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন। পাশাপাশি প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে আরও ৩০০ থেকে ৪০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন।

চিকিৎসকদের মতে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু না থাকলেও অভিভাবকদের সচেতন হওয়াই সবচেয়ে জরুরি। শীতের শুরুতে আবহাওয়া পরিবর্তন ও স্বাস্থ্যবিধি অবহেলাকেই রোগ বিস্তারের অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।


বিজ্ঞাপন


এদিকে রোগীর চাপ এতটাই বেড়েছে যে সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডগুলোর ধারণক্ষমতার তুলনায় কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় অনেক শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক রোগীকে ঠান্ডা মেঝেতেই শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ১ ডিসেম্বর ৬২ জন, ২ ডিসেম্বর ৭৫ জন, ৩ ডিসেম্বর ৭৯ জন, ৪ ডিসেম্বর ৭৯ জন, ৫ ডিসেম্বর ৮৮ জন, ৬ ডিসেম্বর ৯১ জন, ৭ ডিসেম্বর ৮৯ জন, ৮ ডিসেম্বর ৯৭ জন, ৯ ডিসেম্বর ৭১ জন, ১০ ডিসেম্বর ৬৮ জন, ১১ ডিসেম্বর ৭৪ জন, ১২ ডিসেম্বর ৮৮ জন, ১৩ ডিসেম্বর ১০৯ জন, ১৪ ডিসেম্বর ১০৯ জন, ১৫ ডিসেম্বর ৯০ জন, ১৬ ডিসেম্বর ৯৭ জন, ১৭ ডিসেম্বর ৯১ জন এবং ১৮ ডিসেম্বর দুপুর পর্যন্ত ৪৬ জন রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

সবমিলিয়ে গত ১৭ দিনে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দেড় হাজারের বেশি ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, কোথাও জায়গা ফাঁকা নেই। বেড তো দূরের কথা, মেঝেতেও চলছে রোগীদের চিকিৎসা। বিপুল রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। সীমিত জনবল নিয়ে একসঙ্গে এত রোগী সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।


বিজ্ঞাপন


শাহিনুর রহমান নামে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর বাবা বলেন, ‘হঠাৎ করে ছেলের পাতলা পায়খানা আর বমি শুরু হলে দ্রুত সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। ঠান্ডা মেঝেতেই বাচ্চাকে রেখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। শীতের মধ্যে ছোট বাচ্চাকে এভাবে রাখা খুব কষ্টকর।’

আরেক অভিভাবক হামজা আলী বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে সন্তানকে নিয়ে হাসপাতালে আছি। রোগীর চাপ এত বেশি যে ওয়ার্ডে দাঁড়ানোরও জায়গা নেই। মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা চলছে। কষ্ট হলেও চিকিৎসক ও নার্সরা যথাসাধ্য সেবা দিচ্ছেন।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স নাজমুন নাহার বলেন, ‘প্রতিবছর শীতের শুরুতেই ডায়রিয়া রোগীর চাপ বেড়ে যায়। নির্ধারিত শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ রোগী ভর্তি থাকছেন। জনবল সংকট থাকলেও আমরা দিনরাত অক্লান্তভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’

সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, ‘বর্তমানে রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। একই সঙ্গে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে অনেক শিশু নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে সচেতন হওয়া জরুরি। ডায়রিয়া খুব মারাত্মক না হলেও সময়মতো চিকিৎসা না হলে পানিশূন্যতা শিশুর জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে। রোটা ভাইরাসে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়। চিকিৎসার মূল ভরসা ওরাল স্যালাইন। শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করা যাবে না। ছয় মাসের বেশি বয়সি শিশুদের নরম খাবার, কাঁচকলা ভর্তা ও ডালের পানি খাওয়াতে হবে এবং প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন খাওয়ানো বাধ্যতামূলক।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘শীতের প্রভাবে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের বিস্তার ঘটছে, ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। এতে হাসপাতালে কিছুটা চাপ তৈরি হয়েছে। তবে সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও আমরা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালু রেখেছি।’

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর