খুলনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস-২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। সকালে খুলনার বয়রাস্থ মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্লামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
দিবসটি উপলক্ষে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন এবং প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
গল্লামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ও মহানগর ইউনিট, বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ, কেসিসি প্রশাসক, রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক, পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান এবং জেলা প্রশাসক আ. স. ম. জামশেদ খোন্দকার। এ সময় সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সকাল সাড়ে আটটায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজাউল হক, পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান, পুলিশ সুপার মো. মাহবুব রহমান ও জেলা প্রশাসক আ. স. ম. জামশেদ খোন্দকারসহ বীর মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ। পতাকা উত্তোলন শেষে সেখানে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে সমাবেশ, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে প্রদর্শিত হয়। এছাড়া এদিন তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলারও উদ্বোধন করা হয়।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) উদ্যোগে নগর ভবনে শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেসিসির প্রশাসক মো. মোখতার আহমেদ।
বিজয় দিবস উপলক্ষে খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের আয়োজনে আলোচনা সভা এবং নগরীর শহিদ হাদিস পার্কে দিনব্যাপী মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার মো. মোখতার আহমেদ বলেন, “মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সূর্য সন্তান। তাদের অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।”
বিজ্ঞাপন
বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাটে নৌবাহিনীর জাহাজ জনসাধারণের দর্শনের জন্য সকাল নয়টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উন্মুক্ত রাখা হয়। জেলা ও উপজেলা সদরে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে টি-২০ ক্রিকেট, নৌকা বাইচ, ফুটবল, হাডুডু ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শহিদ হাদিস পার্ক, শিববাড়ি মোড়সহ শহরের বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।
বাদ জোহর সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়। হাসপাতাল, জেলখানা ও এতিমখানাগুলোতে উন্নতমানের খাবার (প্রীতিভোজ) পরিবেশন করা হয়। শিশুদের বিনোদনের জন্য নগরীর সকল পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো দিনভর বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হয়।
বিকেলে জেলা স্টেডিয়ামে কেসিসি বনাম জেলা প্রশাসন একাদশের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমীনের মাজার প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং স্থানীয় সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ বেতার খুলনা মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
প্রতিনিধি/একেবি

