সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ শামীম রেজার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

জেলা প্রতিনিধি, রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৩ পিএম

শেয়ার করুন:

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ শামীম রেজার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম

সুদানের আবেই এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ জন শান্তিরক্ষী প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনায় শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামের শামীম রেজা (২৮)।

নিহত শামীম রেজা হোগলাডাঙ্গী গ্রামের আলমগীর ফকিরের বড় ছেলে। গত ৭ নভেম্বর সুদানের আবেদনে তিনি গিয়েছিলেন।


বিজ্ঞাপন


রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে সংবাদ পেয়ে শামীম রেজার পরিবারসহ পুরো গ্রামে নেমে এসেছ শোক।

rajbari_2

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় হোগলাডাঙ্গী কামিল মাদরাসা ছাত্র ছিলেন শামীম রেজা। তিনি মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করেন। পরে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দিয়েছিলেন। সর্বশেষ তার কর্মস্থল ছিলো বগুড়া সেনানিবাসে। চার ভাই ও বোনের মধ্যে শামীম রেজা ছিলেন সবার বড়। গ্রামে তারা বাবা, মামা, স্ত্রী, ছোট ভাই ও বোন থাকেন। তার বাবা স্থানীয় একটি মসজিদের মোয়াজ্জেম। গত দেড় বছর আগে বিয়ে করেন শামীম। প্রায় ৮ বছরের ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন তিনি। শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনের স্বপ্ন নিয়ে বাবা, মা, স্ত্রী ও ছোট ভাই বোনকে রেখে গত ৭ নভেম্বর সুদানে যান তিনি।

নিহত শামীম রেজার ছোট ভাই সোহান ফকির বলেন, ভাইয়া ৮ বছর ধরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করে। গত ৭ নভেম্বর সুদানে শান্তিরক্ষা মিশনে যায় সে। গতকাল রাত ১২টার দিকে আমরা তার নিহতের খবর পাই। পরে জানতে পারি ড্রোন হামলায় সে নিহত হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আগামী পরশু দিন আমার ভাইয়ের মরদেহ দেশে আসতে পারে।


বিজ্ঞাপন


rajbari_1

নিহত শামীম রেজার বাবা আলমগীর ফকির বলেন, আমি কৃষিকাজ করে শামীমকে লেখাপড়া শিখিয়েছিলাম। ৮ বছর আগে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয় শামীম। সর্বশেষ গত শুক্রবার ছেলের সঙ্গে আমার মোবাইল ফোনে ভিডিও কলে কথা হয়। বললাম, মুনি কেমন আছো, তোমার চোখ ফুলে গেছে কেন? সে বলল, ঘুমায় ছিলাম বাবা। তখন আমার ছেলে বলল, আব্বা তুমি ভালো থাকো। আমি ডিউটিতে যাবো। ওই ছিল শেষ কথা। ডিউটিতে গিয়ে আর ফিরল না আমার ছেলেটা। শনিবার রাত ১২টার দিকে আমরা খবর পাই আমার ছেলে আর নেই।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে শামীম দেড় বছর আগে কুষ্টিয়ার খোকসায় বিয়ে করে। শামীমের স্বপ্ন ছিল ছোট ভাই-বোনদের ভবিষ্যৎ গড়ে দেবে। সে আমার মেঝ ছেলেকে সৌদি আরব পাঠিয়েছে। ছোট ছেলেকে সিঙ্গাপুর পাঠানোর জন্য পাসপোর্ট করেছে। মিশন থেকে ফেরার সময় একমাত্র বোনের জন্য সোনার গহনা নিয়ে আসতে চেয়েছিল। সব স্বপ্নই এক নিমিষে শেষ হয়ে গেল।

মৃগী ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, শামীম রেজা ভালো ছেলে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল রাতে সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। আমরা চাই দ্রুত তার মরদেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

এদিকে বিকেল ৪টার দিকে রাজবাড়ী সদর সেনা ক্যাম্পের একটি দল শামীম রেজার গ্রামের বাড়িতে তার পরিবারের খোঁজখবর নিতে আসে। এসময় তারা শোকসন্তপ্ত শামীমের পরিবারকে সান্ত্বনা ও সমবেদনা জানান।

উল্লেখ্য, আফ্রিকার দেশ সুদানের আবেই এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬ জন শান্তিরক্ষী নিহত এবং আরও আটজন আহত হয়েছেন বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং সেখানে যুদ্ধ চলমান রয়েছে বলেও আইএসপিআর শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে এক বার্তায় জানায়। আহত শান্তিরক্ষীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও উদ্ধার কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

প্রতিনিধি/ এজে

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর