রোববার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫, ঢাকা

১৪ ডিসেম্বরে হানাদার মুক্ত হয় জয়পুরহাট

জেলা প্রতিনিধি, জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫৮ এএম

শেয়ার করুন:

১৪ ডিসেম্বরে হানাদার মুক্ত হয় জয়পুরহাট
১৪ ডিসেম্বরে হানাদার মুক্ত হয় জয়পুরহাট

আজ ১৪ ডিসেম্বর, জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে প্রচণ্ড সংগ্রাম করে মুক্তিসেনারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে জয়পুরহাটকে মুক্ত করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের খবর পেয়ে জয়পুরহাট শহর ছেড়ে বগুড়ার পথে পালিয়ে যায় পাক সেনারা। ওই দিন থেকেই স্বাধীন হয় জয়পুরহাট।  

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জয়পুরহাট জেলা ইউনিট কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল আলম রুকু বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের ৮৫ ডিপ ব্যাচের মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব ছিল রেললাইনগুলোর সংযোগ এবং প্রধান সড়কগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা। যার প্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বর মাসে ভারত সীমান্ত ঘেঁষা পাঁচবিবি থানার বাগজানা ইউনিয়নের ভুঁইডোবা, কয়া ও রামভদ্রপুর এলাকা আমরা মুক্ত করার চেষ্টা করি। কয়ার বিওপি ক্যাম্পে শেল্টার নেয় পাকসেনারা। একটি ডেমোনেষ্ট্রেশন করে আমরা কয়া ক্যাম্পকে উড়িয়ে দেই। আমাদের ওই সফল অপারেশনে অনেক পাক সেনা মারা যায়। আবার অনেকে পালিয়ে যায়। তখন বৃষ্টি ছিল। ওই অপারেশনের পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেই পাঁচবিবির ওই এলাকা আসে আমাদের দখলে। ১৩ ডিসেম্বর আমাদের ৮৫ ডিপ ব্যাচের কমান্ডার প্রদীপ কুমার করের নেতৃত্বে একটি দল এবং কমান্ডার মোতালেব হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল পাঁচবিবি শহরে মার্চ করে। তারা পাঁচবিবি থানায় স্বাধীন পতাকা উড়িয়ে মুক্ত ঘোষণা করে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খন্দকার আছাদুজ্জামান বাবলু ও খন্দকার ওলিউজ্জামান আলমের নেতৃত্বে অন্য একটি দল ভারত থেকে ভুঁইডোবা সীমান্ত হয়ে সরাসরি জয়পুরহাটে মার্চ করে। ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় শহরের ডাকবাংলোতে তারা স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়ে জয়পুরহাটকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করে। এ সময় তাদের কভারিং ও সাপোর্টিং দেয় কমান্ডার প্রদীপ কুমার কর ও কমান্ডার মোতালেব হোসেনের দল। 


বিজ্ঞাপন


স্বাধীনতার দীর্ঘ ৯ মাস সংগ্রাম চলাকালে পাক হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসররা জয়পুরহাটের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। জয়পুরহাট সদরের কড়ই-কাদিপুরে একদিনেই তারা সনাতন ধর্মের ৩৭১ জন স্বর্ণশিল্পী ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে। পাগলা দেওয়ানে হত্যার পর গণকবর দেওয়া হয় কয়েক হাজার মুক্তিকামী মানুষদের। একইভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় জেলার অন্য অঞ্চলেও। তাদের স্মরণে পরবর্তীতে শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দানে নির্মাণ করা হয় একাত্তর ফুট উচ্চতার ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ’ এবং জেলা প্রশাসন চত্বরে স্থাপন করা হয় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভ। এছাড়া জয়পুরহাটের পাগলা দেওয়ান, কড়ই-কাদিপুর, পাঁচবিবির বকুল তলা এবং আক্কেলপুরে নির্মাণ করা হয় বধ্যভূমি। দিবসটি উপলক্ষ্যে জয়পুরহাট সদরের পাগলা দেওয়ান ও কড়ই-কাদিপুরসহ অন্যান্য বধ্যভূমিগুলোতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আলাদা কর্মসূচি পালন করছে প্রশাসন।  

জেলা কমান্ডার জহুরুল আলম রুকু বলেন,‘৭১-কে উপেক্ষা করার চক্রান্ত চলছে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ চক্রান্ত রুখতে হবে। এজন্য ভেদাভেদ ভুলে প্রগতিশীল মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে’। 

প্রতিনিধি/ এমইউ

ঢাকা মেইলের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ
জনপ্রিয়

সব খবর