প্রতিদিন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লা থেকে চুরি হচ্ছে পানির মিটার। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না এই চুরি। অভিযোগ করেও মিলছে না সমাধান। গত দুই মাসে পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লা থেকে চুরি হয়েছে প্রায় চার’শ মিটার। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন, চুরি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু চুরি রোধে প্রশাসন থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তা বন্ধ করা যাচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পৌরসভায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ সালে পাঁচবিবি পৌরসভার ছোট যমুনা নদীর তীরে ৬ লাখ লিটার ধারণ ক্ষমতার পানির ট্যাংক নির্মাণ করেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। পরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পৌরসভার বিভিন্ন মহল্লার বাসা-বাড়ি ও দোকানে বিশুদ্ধ এবং নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহ শুরু করে পৌর কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পে পানির মিটারের দাম সাড়ে ছয় হাজারের বেশি হলেও রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে গ্রাহকদের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা দাম নিয়ে বাড়ি বাড়ি মিটার স্থাপন করে পৌর কর্তৃপক্ষ। রিডিং নেওয়ার সুবিধার্থে মিটারগুলি গ্রাহকদের বাড়ির বাহিরে স্থাপন করে পানির সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে মিটার চুরি শুরু হয়। যা বর্তমানে ব্যাপকহারে বেড়ে যায়। বিশেষ করে গত অক্টোবর মাস থেকে ব্যাপকতা বেড়ে এ পর্যন্ত প্রায় চারশ’র অধিক মিটার চুরি হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
![]()
এখনও প্রতি রাতেই মিটার চুরির ঘটনা ঘটছে। তবে চুরি যাওয়ার পর পৌরসভা থেকে সেইসব বাড়ির পানির লাইন সরাসরি সংযোগ দিয়ে পানি সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। মিটার না থাকায় যাদের কাছ থেকে পানির মিনিমাম বিল ১০০ টাকা নেওয়া হলেও রাজস্ব হারাচ্ছে পৌরসভা। কারণ মিটার থাকলে পানির বিল অনেক বেশি হতো। কিন্তু চুরির ফলে লোকসান মেনে পানি সরবরাহ করতে বাধ্য হচ্ছে পৌর কর্তৃপক্ষ। উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতে নিরাপদ পানি সরবরাহে পাঁচবিবি পৌরসভার বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও দোকানে স্থাপন করা হয় ২ হাজার ৬১৫টি পানির মিটার।
![]()
পৌরসভার দমদমা মহল্লার গ্রাহক বলেন, মিটারের রিডিং সহজে নেওয়ার জন্য পৌরসভার লোকজন বাড়ির বাহিরে মিটার স্থাপন করেন। কিন্তু কিছুদিন পরই তা চুরি হয়ে যায়। পৌরসভায় অভিযোগ দিলে তারা থানায় জিডি করতে বলেন। সেই মোতাবেক জিডিও করেছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি।
বিজ্ঞাপন
পৌরসভার মালঞ্চা মহল্লার গ্রাহক আব্দুল হান্নান বলেন, বলেন, মিটারে কোনো বৈদ্যুতিক লাইন না থাকায় খুব সহজেই চোরেরা একের পর এক মিটার চুরি করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অভিযোগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না।
পৌরসভার নারায়ণপাড়া মহল্লার গ্রাহক এনামুল হক বলেন, মিটার চুরি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের টনক নড়ছে না। মিটার চুরির ঘটনায় আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। বাড়ির গরু ছাগল ও সহায় সম্বল রক্ষায় রাতে নিজেরা ঘুমোতে পারছি না।
![]()
পাঁচবিবি পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও পানি তত্ত্বাবধায়ক কর্মকর্তা মারুফ আহসান বলেন,‘গত ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাপকহারে পানির মিটার চুরি শুরু হয়েছে পাঁচবিবিতে। বিগত তিন মাসেই প্রায় চার’শর ও অধিক মিটার চুরি হয়েছে। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা হয়েছে। এলাকার চিহ্নিত একাধিক চোরের নাম উল্লেখ করে থানায় অভিযোগও করা হয়েছে। কিন্তু চুরি বন্ধ হচ্ছে না। বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি এই মিটারগুলো চোরেরা এক দেড়শ টাকায় বিক্রি করছে। বিভিন্ন ভাঙারির দোকান ও চিহ্নিত চোরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই হয়ত চুরি রোধ করা সম্ভব। সেটাতো আমরা করতে পারছি না। চোরদের দৌরাত্ম্যে আমরাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। প্রতিমাসে আমরা পানি সরবরাহ করেও চোরদের কারণে হাজার হাজার টাকার রাজস্ব হারাচ্ছি।
পাঁচবিবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাফিজ মো. রায়হান বলেন, সবেমাত্র এ থানায় যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তবে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিনিধি/এসএস

